মুসলিম আইনে দেনমোহর কি?

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৩:০৮ পিএম

বিবাহ একটি সামাজিক চুক্তি। এই চুক্তি সম্পাদনের অন্যতম শর্ত দেন-মোহর। এই শর্তটি পূরণ ব্যতীত কোন বিবাহ বৈধ হতে পারে না। দেনমোহরের সংজ্ঞা দিতে ডি.এফ মোল্লা বলেন, মোহর বা মোহরানা হলো কিছু টাকা বা অন্য কিছু সম্পত্তি যা বিবাহের প্রতিদান স্বরুপ স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পাবার অধিকারী।

দেনমোহর হইল কিছু টাকা অথবা অন্য কোন সম্পত্তি যাহা স্ত্রী স্বামীর নিকট হইতে বিবাহের মূল্যস্বরূপ পাইবার অধিকারী হয়, [বেইলী ৯১] এখানে মূল্য শব্দটি ঠিক চুক্তি আইনে ব্যবহৃত শব্দের অর্থে ব্যবহৃত হয় না। মুসলিম আইনে দেনমোহর স্ত্রী প্রতি সম্মান প্রদর্শন হিসাবে স্বামীর উপর আরোপিত একটি দায়িত্ব মাত্র।

দেনমোহর স্বামীর ঋণ, যা স্বামী তাঁর স্ত্রীকে পরিশোধ করতে বাধ্য। মাহমুদা খাতুন বনাম আবু সাইদ মামলায় মহামান্য বিচারপতি কর্তৃক সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, ‘সহবাসের আগে এবং পরে স্ত্রী স্বামীর কাছে তলবী মোহরানার দাবি করতে পারে এবং স্বামী তলবী দেনমোহর পরিশোধ না করলে স্ত্রী তার স্বামীর অধিকারে অর্থাৎ সহবাসে যেতে স্ত্রী অস্বীকার করতে পারেন।’ এ অজুহাতে স্বামী স্ত্রী থেকে দূরে অবস্থান করলে তা পরিশোধে বাধ্য।

স্বামী এহেন মোহরানা পরিশোধ ব্যতীত দাম্পত্য অধিকারের ডিগ্রি পেতে পারে না। যে কোন বিষয় সম্পত্তি মোহরানার জন্য ধার্য করা যায় না। ইহা হতে পারে নগদ অর্থ, কোন বীমা পলিসি বা অন্য কোন দ্রব্য সামগ্রী। তবে কোন হারাম বস্তু হতে পারবে না। স্বামীর দখলে নেই এমন কোন সম্পত্তি পারে না। ভবিষ্যত কোন বিষয়ও এর অন্তর্ভূক্ত হতে পারবে না।

দেনমোহর নির্ধারণ পদ্ধতি: মোহরানার পরিমান সুনির্দিষ্টভাবে বেঁধে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ বর ও কণের উভয়ের দিক বিবেচনান্তে তা নির্ধারিত হয়। দেনমোহর কত হবে তা নির্ণয়কালে স্ত্রীর পিতার পরিবারের অন্যান্য মহিলা সদস্যদের ক্ষেত্রে যেমন- স্ত্রীর বোন, খালা, ফুফুদের ক্ষেত্রে দেনমোহরের পরিমাণ কত ছিল তা বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া স্ত্রীর পিতার আর্থ-সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। অপর দিকে বরের আর্থিক ক্ষমতার দিকটাও বিবেচনায় রাখা হয়। এসব দিক বিচার বিবেচনা করেই মূলতঃ দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়।

১৯৬১ সালের পারিবারিক আইনের ১০ ধারা মোতাবেক, দেনমোহর পদ্ধতি সম্পর্কে কাবিনে বিস্তারিত উল্লেখ না থাকিলে স্ত্রীর তলব মাত্র সম্পর্ণ টাকা পরিশোধ করিতে হইবে। স্ত্রীকে তালাক দিবার ব্যাপারে স্বামীকে প্রতিশ্র“ত যাবতীয় অর্থ প্রদান করিতে হইবে এবং প্রতিশ্র“ত অর্থের পরিমাণ অনেক বেশী কিংবা স্বামীর পরিশোধ ক্ষমতার বাহিরে, এই যুক্তিই স্ত্রী দাবীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব নহে। কিন্তু [বেইলী-২য়, ৬৭) অনুযায়ী শিয়া আইনে দেনমোহরের সর্বনিম্ন কোন অর্থ নির্দিষ্ট নাই।

দেনমোহরের পরিমাণ যদি নির্দিষ্ট করা না হইয়া থাকে, স্ত্রী দেনমোহর নির্ণয় কালে স্ত্রীর পিতার পরিবারের অন্যান্য মহিলা। সদস্যর ক্ষেত্রে যেমন, তাহার পিতার ভগ্নিনীর ক্ষেত্রে, দেনমোহরের পরিমান কত ছিল তাহা বিবেচনা করিতে হইবে। [হেদায়া,৪৫; বেঈলী-৯২]

দেনমোহরের বাবদ দেয় অর্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। “তাৎক্ষনিক” যাহা চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য এবং অপরটি “বিলম্বিত” দেনমোহর-যাহা মৃত্য অথবা তালাকের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ পরিশোধযোগ্য।

দেনমোহরের মামলা ও তামাদী আইনঃ স্ত্রী, তাহার, দেনমোহরের টাকা না পাইলে, সে এবং তাহার মৃত্যর পর তাহার উত্তরাধিকারীগণ, উহার জন্য মামলা দায়ের করিতে পারে তাৎক্ষনিক দেনমোহর আদায়ের মামলা দায়ের করিবার সময় সীমা হইল দেনমোহরটি দাবী ও উহা প্রদানে অস্বীকৃতির তারিখ হইতে তিন বছর, অথবা যেখানে বিবাহ থাকাকালীন এই জাতীর কোন দাবীই উস্থাপিত হয় নাই, সেখানে মৃত্য কিংবা তালাকের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিলে, তখন পর্যন্ত ১৯০৮ সালের তামাদী আইন, তফসীল-১, অনুচ্ছেদ-১০৩ “বিলম্বিত” দেন মোহরটি আদায়ের সময় সীমা হইল মৃত্য অথবা তালাকের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিলে ঐ তারিখ হইতে তিন বৎসর [তফসীল-১, অনুচ্ছেদ-১০৪] “বিলম্বিত” দেনমোহরের দাবীতে স্বামীর সম্পত্তি বিধবার বৈধ দখলে থাকাকালীন তামাদীর মেয়াদ বিধবার বিপক্ষে যাইতে না, স্ত্রী লিখিতভাবে তালাক প্রাপত হইলে, তামাদী আইনের ১০৩ ও ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্ত্রীকে উক্ত লিখিত তালাক দানের তথ্য বা সংবাদটি অবগত করিবার তারিখ হইতেই তামাদীর সময় শুরু হইবে আদায়ের দাবীতে মামলা দায়ের করিবার অধিকার স্ত্রী রহিয়াছে।

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: