বসানো হল জাবির অমর একুশ ভাস্কর্যের মূল নকশা

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০১৮, ০৫:৪১ পিএম

ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্বরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত অমর একুশ ভাস্কর্যের সংস্কার শেষে পুনরায় উদ্বোধন করা হয়েছে। রবিবার (১৫ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন। এতে করে দীর্ঘ ২৭ বছর পর অমর একুশে ভাস্কর্যটি পেল মূল নকশা।

সংস্কারের ফলে ভাস্কর্যটি পেয়েছে নতুন রুপ। অবশেষে বহল প্রতীক্ষা আর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অযন্ত-অবহেলা থেকে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই ভাষ্কর্যটি। ভাস্কর্যটি দেখতে ঠিক ২৭ বছর পূর্বে নির্মিত ভাস্কর্যের মতো মনে হচ্ছে। এর গায়ের আস্তরণ আগের মতো করেই লাগানো হয়েছে। মূল নকশাও আগের মতো লাগানো হয়েছে। ভাস্কর্যটি সংস্কারের ফলে ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুক্ত হয়েছে নতুনত্ব বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০ টায় ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ভাষা শহীদের স্বরণে নির্মিত ভাস্কর্যটির সংস্কার কাজ শেষ হওয়য়ায় আজ খুব আনন্দ লাগছে। অমর একুশে ভাস্কর্যটি আমাদের আবেগ, অনুভূতির জায়গা। জাবি পরিবার ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে গর্বিত। নিমার্তা জাহানারা পারভীনের সাথে আলোচনা করে অমর একুশে ভাস্কর্যটির সংস্কার কাজ শুরু করি। এটির সংস্কারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করতে পেরে ধন্য মনে করছে।

&dquote;&dquote;

১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে মহান ভাষা শহীদদের স্বরণে শিল্পী জাহানারা পারভীনের নকশার ভিত্তিতে ‘অমর একুশ’ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকে সংস্কার না করা ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভাস্কর্যটি দূরাবস্থার দিকে যাচ্ছিল। প্রশাসনকে বারবার অবহিত করার পর এ বিষয়ে এই প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

&dquote;&dquote;

একুশে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষার্থে বাংলাদেশে যেসব ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো জাহাঙ্গীরনগরের অমর একুশে ভাস্কর্যটি। মাতৃভাষা বাংলার জন্য যেসব দামাল ছেলে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রাজপথে অকাতরে রক্ত ঢেলে দিয়েছে তাদের স্মৃতিকে ধারণ করে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ধারণকারী ভাস্কর্যটি মেরামতের অভাবে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে উঠেছিল। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী আসে এই ক্যাম্পাসে। দর্শনার্থীদের অন্যতম প্রধান আগ্রহ এই ভাস্কর্যটি। কিন্তু সংস্কারের অভাবে ভেঙ্গে পড়ছিল ভাষা আন্দোলনের স্মারক ভাস্কর্যটি। প্রায়ই খসে, খসে পড়তে দেখা গেছে এর আস্তরণ। সাধারণ শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিকবার দাবি জানানোর ফলে অবশেষে ভাস্কর্যটির মেরামত কাজ শুরু হলো।

ভাস্কর্যটি সংস্কারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী আবুল হাসনাত বলেন,‘আমরা গর্বিত যে আমাদের ক্যাম্পাসে ভাষা আন্দোলনের একটি স্মারক ভাস্কর্য রয়েছে। ভাস্কর্যটির সংস্কার করা হয়েছে শুনে আমি আবেগাপ্লাতু হয়ে গিয়েছি।

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রভাষক মো. ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের গর্ব যে ক্যাম্পাসে ভাষা আন্দোলনের একটি স্মারক ভাস্কর্য রয়েছে। এটি সংস্কার করা হয়েছে। আমরা আবার সেই গর্ব করার মত জায়গায় ফিরে যেতে পেরেছি।’

বাংলা বিভাগের বিভাগের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সংস্কারের অভাবে এতোদিন ভাস্কর্যটি দেখলে মনে হতো এর কোন অবিভাবক নেই। প্রশাসনের এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগে আমি খুশি’।

&dquote;&dquote;

সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে ভাস্কর্যটির নির্মাতা শিল্পী জাহানারা পারভীন বলেন, অমর একুশ ভাস্কর্যটি জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সম্পত্তি। অনেক আগে এটি সংস্কার করার কথা ছিল। কিন্তুু কিছু সংকট ও সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে অনেক চেষ্টা এবং প্রশাসনের সহযোগীতায় এর সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। এখন খুব আনন্দ লাগছে। আশাকরি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা নতুন রুপে ভাস্কর্যটি দেখে দেশের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।

ভাস্কর্যের উদ্বোধনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মঞ্জুরুল হক, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ, প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সামসুন্নাহার খানম, জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি জনাব উজ্জ্বল কুমার মন্ডলসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: