চামড়া খসে পড়ছে জাহাঙ্গীরের, ছেড়ে গেছেন স্ত্রী-সন্তান
আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই দিন কাটছিলো জাহাঙ্গীরের। কিন্তু হঠাৎই কোনো এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে ভেঙ্গে গেছে জাহাঙ্গীরের সাজানো-গোছানো সংসার। জাহাঙ্গীরের এক ছেলে ছিলো। ভালোবেসে নাম রেখেছিলেন ‘পরশ’। কিন্তু তার এ রোগের কারণে তার স্ত্রী-সন্তান কেউই আর থাকে না তার সাথে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কন্ঠে জাহাঙ্গীর বিডি২৪লাইভকে বলেন, আমি বাঁচতে চাই! আমি বিরল কোনো এক রোগে আক্রান্ত। যা প্রতি মুহূর্তে আমাকে ভোগাচ্ছে। এ রোগ আমার সব শেষ করে দিয়েছে। আমার বউ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার প্রিয় সন্তানকে আমি দেখতে পারি না। আমি কোনো কাজ করতে পারি না। আমি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।
তিনি বলেন, চিকিৎসক শহিদুর রহমান জানিয়েছেন আমার রোগের চিকিৎসা যশোরে হবে না। ঢাকার উন্নত চিকিৎসা করালে হয়তো আমি সুস্থ হতে পারি। ডাক্তার জানিয়েছেন, সেই চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
জাহাঙ্গীর জানান, প্রায় ১২ বছর আগে বাম হাতে একটি কালো দাগ দেখেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে সেটি বড় হয়ে শক্ত হয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে এই অবস্থা হাতে ও পিঠে থাকলেও গত ৩/৪ বছর হলো তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এখন সারা শরীরের চামড়া ও মাংস শক্ত হয়ে পচন ধরেছে। গোটা শরীরেই তার দগদগে ঘা। এই অবস্থায় গত এক বছর ধরে ওই ছোট্ট ঘরই তার দুনিয়া। কষ্ট ও যন্ত্রণা নিয়ে ওই ঘরেই জীবন কাটে তার।
জাহাঙ্গীর আরো জানান, যশোর-বেনাপোল রুটের বাস চালিয়ে তাদের জীবন ও সংসার ভালোই কেটে যেতো তার। এরই মধ্যে ৮ বছর আগে একই এলাকার শিউলি খাতুনকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর তাদের ছেলেও হয়। তার নাম রাখেন পরশ। কিন্তু এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরের দেহে বিরল এই রোগ আরও বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। রোগের কারণে বছর চারেক আগে স্ত্রী শিউলিও তাকে ত্যাগ করে ছেলে নিয়ে চলে গেছে। নতুন করে সে (স্ত্রী) বিয়েও করেছে। এখন মা জয়গুন নেছাই তার শেষ আশ্রয়।
জাহাঙ্গীরের মা জয়গুন নেছা (৬০) জানান, সারা গায়ে এই রোগের কারণে জাহাঙ্গীর নড়াচড়াও করতে পারে না। সারাদিন এভাবেই বসে থাকে। খাটের উপরেই তার বাথরুম করতে হয়। মাঝে মাঝে তার ছোট ভাই (খালাত) হুমায়ন তাকে সাহায্য করে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আগে ছেলের আয়ে সংসার চলতো। এখন সে বিছানায়। আরেক মেয়ে বাসা-বাড়িতে কাজ করে যে আয় করে তার সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাদের কোনো মতে দিন চলে। তাই চিকিৎসা আর করা হয়ে ওঠে না জাহাঙ্গীরের।
ওই এলাকার সমাজকর্মী তোফাজ্জেল হোসেন মানিক জানান, ডা. সৈয়দ আল-আমিন, ডা. লতিফ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ’র কাছে জাহাঙ্গীরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা বলেছেন, এই রোগের চিকিৎসা যশোরে হবে না। তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। সেটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এরপর আর অর্থাভাবে চিকিৎসা হয়নি তার।
কারো কাছ থেকে কোনো সাহায্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর জানান, আমি এখোনো কোনো সহোযোগিতা পাইনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাহাঙ্গীর বলেন, ভালো মানুষগুলো যদি সাহায্য সহযোগিতা করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো তাহলে হয়তো আমাকে এভাবে যন্ত্রণায় দিন কাটাতে হতো না। এজন্য জাহাঙ্গীর সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।
বিডি২৪লাইভ/এইচকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: