সীমিত আয়ের মানুষের ওপর আবারো খাঁড়ার ঘা!

প্রকাশিত: ২০ মে ২০১৮, ০৫:৫৪ পিএম

আগামী বাজেটে ভ্যাটের হারে পরিবর্তন আসছে। একাধিক ভ্যাট হারের পরিবর্তে দুই স্তরের ভ্যাট হার প্রবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার। ফলে খাদ্যপণ্যসহ বিপুল পরিমাণ পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ১৫ শতাংশ, ৪ শতাংশ এবং প্যাকেজ ভ্যাট পদ্ধতি এই তিন ধরনের ভ্যাটের সিলিং নির্ধারণ করা রয়েছে। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ হার পরিবর্তিত হয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ ও ১০ শতাংশ হচ্ছে। এতে ভ্যাটের হার একটিতে কমছে, আবার একটি দ্বিগুণের বেশি বাড়ছে। ভ্যাটে দ্বৈত হার হওয়ায় বাদ যাচ্ছে বহুল আলোচিত প্যাকেজ ভ্যাট পদ্ধতি। এতে খাদ্যপণ্যসহ বিপুল পরিমাণ পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আগামী ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকারের পক্ষে এ দ্বৈতস্তরের প্রস্তাব দেবেন। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে একাধিক স্তরের পরিবর্তে দ্বৈতস্তর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকার আশা করছে, বিদ্যমান তিন ধরনের ভ্যাট সিলিংয়ের পরিবর্তে দ্বিস্তর ভ্যাট হার কার্যকর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায় বাড়বে। নতুন ভ্যাট হার কার্যকর হলে এখন যে বিপুল পরিমাণ পণ্যের ওপর ৩ ও ৪ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে, তা এক লাফে বেড়ে দ্বিগুণ হচ্ছে। এটি করা হচ্ছে সাড়ে ৭ শতাংশ।

এখানে প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্যও রয়েছে। ফলে ভ্যাট হার বেড়ে যাওয়ার কারণে পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে। এতে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর আবারও খাঁড়ার ঘা পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে এ ভ্যাট হার দ্বিগুণ হওয়ায় সরকার এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে। আবার বেশ কয়েকটি খাতের ওপর যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর রয়েছে তা কমানো হচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। এ খাতের ওপর ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১ কোটি টাকার বেশি বার্ষিক টার্নওভারযুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হয় দেড় শতাংশ হারে, কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয় ৩ শতাংশ হারে। কারও কারও জন্য এ ভ্যাট ৫ শতাংশ, কারও দিতে হচ্ছে ৬ শতাংশ। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে ১০ শতাংশ হারেও ভ্যাট দিতে হচ্ছে। ২৪ ধরনের সেবায় ভ্যাট দিতে হয় ১৫ শতাংশ হারে। এগুলো পরিবর্তন করে এক হার করা হচ্ছে। অর্থাৎ সব প্রতিষ্ঠানকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর পক্ষ থেকে ১২ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৩৯তম বৈঠকে ভ্যাটের ওপর একগুচ্ছ প্রস্তাব দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইএর পক্ষ থেকে মূসকের একক হারের পরিবর্তে একাধিক হারের প্রবর্তন করলে মূসক আইন প্রতিপালন ও রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করা হয়।

এতে বলা হয়, বর্তমানে মূসক বা ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ; যা অন্যান্য দেশে প্রচলিত ভ্যাটের হারের তুলনায় অত্যধিক। এতে করে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং মূসক প্রদানে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তাই বর্তমানে মূসকের হার কমিয়ে ১০ শতাংশের নিচে নির্ধারণ করলে পরিশেষে মূসক আইন পরিপালনসহ রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। আগামী বাজেটে তাই ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নিয়ে এ হার ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্যাট হার ১০ শতাংশ বা তার কিছু কম রয়েছে। মালয়েশিয়া ও জাপানে ভ্যাটের হার ৮ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে ৭ শতাংশ। ভিয়েতনাম ও অস্ট্রেলিয়ায় ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: