অবশেষে খোঁজ পাওয়া গেল সৌদি যুবরাজের!

প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৮, ১১:৫৫ এএম

সৌদি রাজপরিবারের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান জনসমক্ষে না আসার কারণেই প্রশ্ন উঠেছে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না কেন? তাকে কি হত্যা করা হয়েছে? কোথায় আছেন রাজপরিবারের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি?

কারণ বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য আছেন যুবরাজ মুহম্মদ বিন সালমান।

শনিবার স্পুটনিক নিউজ জানায়, সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অবস্থান নিয়ে ধোয়াশা কাটছে না। বেশ কিছুদিন ধরেই প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না তাকে; আর এই সুযোগে রটছে বিভিন্ন খবর।

এর মধ্যে আরব ইন্টেলিজেন্সের বরাতে তেহরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘কাইহান’ জানিয়েছে, এপ্রিলের শেষের দিকে রাজপ্রাসাদে ভয়াবহ এক গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন বিন সালমান। গত ২১ এপ্রিল রিয়াদের সংঘর্ষের সময়ে অন্তত দুটি বুলেট তার বুকে লাগে। এতে তিনি নিহত হয়ে থাকতে পারেন বলে একটি গোপন সূত্রের ভিত্তিতে আরব ইন্টেলিজেন্স দেশটির সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।’

যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ বিষয়টিকে অস্বীকার করে বলছে, ‘সৌদি রাজপ্রাসাদের বাইরে তেমন কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। সেসময় আকাশে উড়া একটি অনিবন্ধিত খেলনা ড্রোনকে ভূপাতিত করার চেষ্টা করে নিরাপত্তারক্ষীরা।’

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে রাজপ্রাসাদের বাইরে ভয়াবহ গোলাগুলির চিত্র দেখা গেছে। এমনকি প্রাসাদের আশেপাশে ট্যাঙ্ক এবং অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের যানও দেখা যায়। এসব থেকেই অনেকের ধারণা, সেখানে হয় অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে বা ভবনের ভেতর থেকেই প্রতিশোধমূলক কোনো আচরণের চেষ্টা করা হয়েছে।

সৌদি দূতাবাসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গত ২৭ এপ্রিল তোলা একটি ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘২১ এপ্রিল যদি কোনো হামলা হয়ে থাকত, তাহলে ২৭ এপ্রিল এই অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া এটি কীভাবে সম্ভব? তাই এই মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান করলাম।’

এছাড়া আরেকটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে টুইটারে যাতে দেখা যাচ্ছে আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নায়হান, বাহরাইনের বাদশা বিন ইসা ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সাথে বিন সালমানকে। গত শুক্রবার ছবিটি পোস্ট করেছেন

&dquote;&dquote;যুবরাজের ব্যক্তিগত দপ্তরের পরিচালক বাদের আল-আসাকার লিখেছেন, কয়েক দিন আগে মিসরের প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহ আল সিসি এক বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন।

ফারস নিউজ এজেন্সি এক খবরে জানিয়েছে, ২৮ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও প্রথমবারের মতো রিয়াদ ভ্রমণের সময়ও মোহাম্মদ বিন সালমান গণমাধ্যমের সামনে আসেননি। তবে ওই সময় রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ রিয়াদে মোহাম্মদ বিন সালমান ও রেক্স টিলারসনের মিটিংয়ের একটি ছবি প্রকাশ করে। এরপর থেকেই তার বিষয়ে চারদিকে গুজব ছড়াচ্ছে। আর এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।

ইরানের প্রেস টিভি জানিয়েছে, ২১ এপ্রিল এর ঘটনার পর থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষ যুবরাজ বিন সালমানের কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করেনি। গণমাধ্যমে যুবরাজ বিন সালমানকে প্রায়ই দেখা যায়; কিন্তু রিয়াদে ওই গোলাগুলির পর মাস খানেক তাকে আর গণমাধ্যম দেখা যাচ্ছে না। ফলে দীর্ঘ সময় যুবরাজ বিন সালমানের এমন অনুপস্থিতি তার বেঁচে থাকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

গেল কয়েক দিন আগে সৌদি আরব সফর থেকে আসা পাকিস্তান উলামা পরিষদের চেয়ারম্যান তাহির মাহমুদ আশরাফি ডেইলি পাকিস্তানকে নিশ্চিত করেছেন সৌদি যুবরাজ নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।

তিনি বলেন, ২১ এপ্রিলের পরেও মোহাম্মদ বিন সালমান দুইটি কেবিনেট মিটিংয়ে যোগ দিয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। সৌদি আরব ভুয়া খবরকে গুরুত্ব দেয়নি। এ জন্য এ সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসির বিশেষ আমন্ত্রণে সৌদি যুবরাজ সপরিবারে সেখানে গিয়েছেন। তার সাথে আবুধাবি ও বাহরাইনের নেতারাও রয়েছেন। তার জনসমক্ষে না আসার সুযোগ নিয়ে ইরানি ও রুশ মিডিয়া এ মর্মে খবর ছড়িয়েছে যে, গত মাসের কথিত অভ্যুত্থান চেষ্টার সময় তিনি হয়তো মারা গেছেন।

গত বছরের জুনে নিজের চাচাতো ভাইকে যুবরাজের পদ থেকে সরিয়ে দিলে আলোচনায় আসেন ৩১ বছর বয়সী মুহাম্মদ বিন সালমান। এর পর থেকেই সৌদি আরবে নানা অর্থনৈতিক ও সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছেন যুবরাজ। একই সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়ে নানা আলোচনার জন্ম দেন তিনি।

গত নভেম্বরে সৌদি আরবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে প্রিন্স, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী এবং ধনকুবের ব্যবসায়ীরা ছিলেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। যদিও পরে ধীরে ধীরে ‘আপসরফার’ মাধ্যমে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: