যাদের বাবা-মা নেই, তাদের ঈদটা কিভাবে শুরু হয়?

প্রকাশিত: ২৪ মে ২০১৮, ১০:২৭ এএম

রেজওয়ান মাহমুদ: এই গল্পটা কয়েকজন তরুণের। আট-দশটা তরুণের মতোই তাদের ও পরিকল্পনা ছিল ঈদে ভালো জামা কাপড় কেনা, বন্ধুরা মিলে কোথাও ঘুরতে যাওয়া কিংবা ঈদে দামি কোন রেষ্টুরেন্টে খেয়েদেয়ে ছবি তুলে ফেসবুক ভাসিয়ে দেয়া।

সালটা ছিল ২০১৬। বন্ধুমহলের সবচেয়ে বোকা ছেলে রাকিব রমজান মাসের কোন এক তারাবির নামাজের পর আড্ডায় একটু চিন্তিত মনে বসেছিল। তারপর একটু ভেজা মলিন মন নিয়েই বলল, আচ্ছা তোরা খেয়াল করেছিস? আমরা কি সুন্দর ঈদের দিন নামাজ পড়ে বাসায় পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটাই। বাবার কেনা বাজার-সদাই আর মায়ের হাতের রান্না করা সেমাই খেয়ে সকালটা শুরু করি। যাদের বাবা-মা নেই? বিশেষ করে যারা এতিম শিশু, অর্থের অভাবে এতিমখানায়া বড় হচ্ছে, তাদের ঈদটা কিভাবে শুরু হয়? যাদের মা শুধু অর্থের অভাবে পিতৃহারা নিজের সন্তানকে দিয়ে আসে এতিমখানায়? তারা ঈদে কি করে? তারা কি অন্যান্য শিশুদের মত নতুন পোশাক পরে নামাজ পড়ে? আমাদের মতোই ঈদের দিন ভালো কিছু খেয়ে শুরু করে? যখন তারা দেখে একই পাড়ার অন্য ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে নিয়ে আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করছে, তখন তাদের কেমন লাগে? প্রশ্ন গুলো আড্ডার আমেজ পাল্টে দিল। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল সবাই।

সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করা বাবুও এই প্রশ্ন শুনে কিছু বলতে পারছিল না। শুধু বলেছিল, আমরা তাদের দুঃখ বুঝতে পারবো না। কিন্তু দুঃখ কমানোর জন্য কিছু করতেই পারি। কি করতে পারি? এই প্রশ্ন দিয়েই শুরু হল ‘সাদাকাহ’ গ্রুপের যাত্রা। অন্য সকলের সাঙ্গে পরামর্শ করে নিজেদের ঈদের খরচ যথাসাধ্য কমিয়ে এবং পরিচিত মহল থেকে বেশ কিছু অনুদান সংগ্রহ করে তারা উদ্যোগ নিল পুরোন ঢাকার কিছু এতিমখানার শিশুদের সাহায্য করার। প্রথম উদ্যোগেই তারা প্রায় ৪০ জন এতিম শিশুদের সাথে রমজান মাসের একদিন ইফতারি করল, সেই সঙ্গে এতিম ও গরিব শিশুদের মাঝে ঈদের পাঞ্জাবি ও ঈদের দিন বাসায় রান্না করার জন্য কিছু খাবার কিনে দিল। তারা যতটা না ভেবেছিল, তার চেয়েও অনেক আনন্দ পেল যখন বাচ্চারা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাঙ্গে উপহার গ্রহণ করল। এই স্বাদ তারা এর আগে কোনদিন পায়নি। এই দান করার স্বাদের নেশা পেয়ে বসলো তাদের। তারা যেন পেয়ে গেল অসাধারণ একটি মাধ্যম, লিখতে শুরু করল জীবনের মানে খুঁজে পাওয়ার গল্প।

শুরু হলো পুরোদমে মাঠে নামার। পরবর্তী বছরে তারা আরও বড় লক্ষ্য নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে এই এতিম বাচ্চাদের সাহায্যের জন্য অনুদান সংগ্রহ করতে লাগলো। এ বছর তারা কুমিল্লার একটি মাদ্রাসার কিছু এতিম বাচ্চাদের সাহায্য করলো যাদের আর্থিক অবস্থা খুবই করুন। তবে মেধাবি সেই শিশুদের তারা আশ্বস্ত করলো, যদি আল্লাহর ইচ্ছা থাকে তো একদিন তাদের এই দুরবস্থা ঘুচবেই। অন্তত ১০০ জন শিশুদের সে বছর খাবার ও ঈদের পোশাক বিতরণ করেছিল। তাদের যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ তারা নিজেরাই বহন করতো। অনুদান এর টাকা সম্পূর্ণ ব্যয় করতো এতিম শিশুদের জন্য। এ বছর তারা ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলেছে, Sadaqah – A Contribution For Yatim. এই গ্রুপে বেশ কিছু অনুদান প্রেমি মানুষ যোগদান করেছে।

এই তরুণদের ভাষ্যমতে, আমরা বেশ কিছু এতিমদের সাহায্য করতে পেরেছি। কিন্তু তাদের করুন অবস্থার সম্মুখে আমাদের সাহায্য নিছক সামান্য। আমরা ভবিষ্যতে পরিকল্পনা করেছি তাদের পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু আয়ের ব্যবস্থা করার। যেমন- তাদের সেলাই মেশিন কিনে দেয়া, হাতের কাজ শেখানো ইত্যাদি। আমরাই এসব বাজারে বিক্রির জন্য প্রচারণা চালাব। তবে এই লক্ষ্য অর্জন করতে আমাদের আরও প্রচুর অনুদান প্রয়োজন। আমরা ৭ জন বন্ধু প্রতিনিয়ত কাজ করে যাব। এবং আমাদের কর্মসূচি শুধু রমজান মাস কেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ থাকবে না। সারা বছর ব্যাপী আমরা তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য চেষ্টা করে যাব।

তাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল কেন আপনারা শুধু এতিমদেরই বেছে নিলেন? অন্যান্য গরিব শিশুও তো আছে? উত্তরে তাদের একজন বলেছিল, একজন এতিমই সবচেয়ে গরিব। আর একজন গরিব-এতিম শিশুর অগ্রাধিকার বেশিই থাকবে। তবে আমরা এতিম ছাড়াও অর্থনৈতিক দ্বৈন্যতার কারনে যারা শিক্ষা ব্যাবস্থা থেকে পিছিয়ে আছে, সেসব শিশুদের সমাজের বাইরে ছিটকে পড়ে যেতে দেখতে চাই না। কারণ যেসব শিশু সুযোগ-সুবিধা পায় না, তাদেরকেই ব্যবহার করা হয় সমাজ বিরোধি নানা অপকর্মে। ইনশাআল্লাহ, আমরা একবার যখন শুরু করেছি, আগামিতে আমরা আরও অনেক এতিম–দুস্থ শিশুদের নিয়ে কাজ করবো। আমরা অনুদান সংগ্রহের জন্য একটা ছোট অফিসও নিয়েছি।

আপনাদের সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে ছোট্ট এই গ্রুপটির হাতে আপনাদের হাত রেখে তাদের কাজকে আরেকটু শক্তিশালী করার। এই তরুণারা সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে এতিমদের জন্য আমাদের মাধ্যমে সয়াহতা চেয়ে আহ্বান জানিয়েছে। হয়তো আপনার একটি ছোট্ট অনুদান কোন এক পরিবারের ঈদের দিনের হাসির খোরাক যোগাবে। কোন এতিম শিশু যখন নতুন পাঞ্জাবি পরে নামাজ পড়তে যাবে, তার আনন্দিত মন যে আপনাকে কোন দিনও দেখেনি অনেক দূর থেকেই আপনার জন্য দোয়া করেবে।

Sadaqah – A Contribution For Yatim গ্রুপটির সাথে যোগাযোগের ঠিকানা: ১ নং নাজিমুদ্দিন রোড, দ্বিতীয় তলা। (পুরোন কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে) ঢাকা – ১১০০।


বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: