শেষ হচ্ছে রহমত কুড়ানোর সময়

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০১৮, ০৩:২৬ পিএম

রহমতের দশক শেষ হতে আর মাত্র ১দিন বাকি। এখন নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন- আমাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কি? আমরা এখন রোজার জন্য ব্যাকুল হতে পারছি কি? আল্লাহর রহমতপ্রাপ্তির তীব্র আকাক্সক্ষায় অস্থির হয়েছি কি?

প্রতিযোগিতামূলক ইবাদত করতে পারছি কি? নিজেকে পুরোপরি আল্লাহর কাছে সঁপে দিতে পারছি কি? আল্লাহর ভালোবাসায় উজাড় করতে পারছি কি আমাদের মন ও দেহরাজ্য?

দুনিয়ার মহব্বত আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। এ মহব্বত কোনো এক দিন আমাদের কোনো কাজে আসবে না। পার্থিব মোহ মানুষকে সবরকম অপরাধের জগতে টেনে নেয়। অথচ আল্লাহর মহব্বতে পার্থিব লাভ যেমন আছে, পরকালীন লাভও আছে।

আল্লাহর ভালোবাসা মানুষকে অপরাধমুক্ত জীবনযাপনে সাহায্য করে। শান্তি ও নিরাপত্তা এনে দেয়। অভাব-অনটন দূর করে দেয়। পার্থিব সম্মান তো দেয়ই, এমনকি সপ্তম আসমান ভেদ করে আল্লাহর আরশে আজিম পর্যন্ত পৌঁছে দেয় বান্দাকে।

মহান আল্লাহ তাকে ইহ এবং পরকালীন দু’জগতেই সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করে দেন। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ধারা এর জ্বলন্ত প্রমাণ।

আল্লামা রুমি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বেশ সুন্দর বলেছেন- র্হাকে রা জামা যে এশ্কে চাক শুদ/উ-যে র্হেচও আইবে কুল্লি পাক্ শুদ। জিস্ম-খাক আয এশ্ক বর আফলাক শুদ/কু-হ দার রক্ছ আ-মদও চালাক শুদ- মহব্বত ও আল্লাহ প্রেমের প্রতিক্রিয়া যার ওপর নাজিল হবে সে লোভ, মোহ ও সব রকম অপরাধ থেকে মুক্তি পাবে। মহব্বত আর ভালোবাসার কারণেই বান্দার মাটির দেহ সপ্তম আকাশে উঠেছে এবং এ মহব্বতের কারণেই নির্জীব পাহাড়ে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়ে নেচে ওঠার মতো দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে।

আল্লাহর জন্য নবীজির মহব্বত ছিল বলেই তো তিনি দুনিয়া জয় করে মেরাজে সাত আসমান ভেদ করে আরশে আজিম পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন। হজরত মুসা আলাইহিসসালাম আল্লাহর মহব্বতে আল্লাহকে দেখতে চাইলেন। নশ্বর এ পৃথিবীতে তো আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়, প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা মুসা আলাইহিসসালামকে তুর পাহাড়ের দিকে তাকাতে বললেন। মুসা (আ.) এশ্ক আর মহব্বত নিয়ে তুর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এ সময় আল্লাহর একটি সৃষ্টি মাত্র- বিশেষ নূর ওই পাহাড়ের দিকে চমকালো। এতে তুর পাহাড় নেচে ওঠার মতো আন্দোলিত ও কম্পমান হয়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ল। আর মুসা আলাইহিসসালাম বেহুশ হয়ে সেখানেই পড়ে গেলেন।

এ জন্যই রহমতের দশকে আল্লাহকে পাওয়া আর ভালোবাসার প্রতিযোগিতা করতে হবে আমাদের। কেবল আল্লাহকে ভালোবাসা আর আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের কাছে রমজান এসেছে। এটি বরকতের মাস। আল্লাহ এ মাসে প্রচুর রহমত দান করেন। প্রচুর ক্ষমা দান করেন এবং প্রচুর দোয়া কবুল করেন। আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের নিয়ে গর্ব করতে থাকেন- তোমরা দেখ আমার বান্দারা এ মাসে কত ইবাদত করছে।

এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতিযোগিতা দেখবেন- তোমরা কত ইবাদত করতে পার। এজন্য তোমরা আল্লাহকে দেখাও কত ভালো কাজ করতে পার। এটা এত বেশি রহমতের মাস, এত রহমতের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যে আল্লাহর কাছ থেকে রহমত লাভ করতে পারল না সে আসলেই হতভাগা। [তিবরানি]

আসুন, আমরা দুনিয়ার সবকিছুকে তুচ্ছ করে আল্লাহর ইবাদতে কোমর বেঁধে নেমে যাই। রহমত লাভে ধন্য হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালাই। রাসুলের বাণী নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার প্রতিযোগিতা করি। আমরা পারব তো? অবশ্যই পারব। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

লেখক: হাফেজ মুফতি আহসান শরিফ। প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ, ঢাকা।

বিডি২৪লাইভ/এমআরএম

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: