১৩ তম তারাবিতে আজ যা পড়া হবে 

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০১৮, ১০:৫৮ এএম

রমজান মাসের আজ মঙ্গলবার (২৯ মে) ১৩ তম তারাবিতে সূরা কাহফ (৭৫-১১০) এবং সূরা মরিয়ম ও ত্বহা পড়া হবে। আজ ১৬ তম পারা পড়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডটকম-এর পাঠকদের জন্য আজকের তারাবিতে পঠিতব্য অংশের আলোচ্য বিষয় তুলে ধরা হলো (সূরা কাহফ: ৭৫-১১০)- পারার সূচনা আয়াতগুলোয় মুসা ও খিজির (আ.) এর ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।

জ্ঞান অর্জনের জন্য মুসা (আ.) খিজিরের সঙ্গে দীর্ঘ সফর করেছিলেন। পথে খিজির আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ওই কাহিনিতে আমাদের জন্য এ শিক্ষা রয়েছে, আমাদের সামনে নিত্য যেসব ঘটনা ঘটে চলে, সেসবের আড়ালে আশ্চর্যজনক রহস্য ও হেকমত লুকিয়ে থাকে। যাদের ধারণা, চোখে যা দেখি তা-ই সব; তাদের জন্য মুসা-খিজিরের ঘটনায় শিক্ষার অনেক উপাদান রয়েছে। 

এরপর বাদশা জুলকারনাইনের ঘটনা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা জুলকারনাইনকে বহু ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তার বিজিত অঞ্চলের সীমানা ছিল অনেক বিস্তৃত। তিনি এমন এক সম্প্রদায়ের দেখা পেয়েছিলেন, যারা সর্বদা ইয়াজুজ-মাজুজ নামক একটি বর্বর গোষ্ঠীর হামলার শিকার হতো। এই নিপীড়িত সম্প্রদায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জুলকারনাইন মজবুত একটি দেয়াল নির্মাণ করে দেন, ফলে তারা নিরাপত্তা লাভ করে। এই দেয়াল কেয়ামতের আগে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এবং ইয়াজুজ-মাজুজ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে। (৮৩-১০১)।

সূরা কাহফের শেষে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে ‘যে আশা রাখে, তার রবের সাক্ষাৎ লাভের, সে যেন নেক আমল করে এবং আপন প্রতিপালকের বন্দেগির ক্ষেত্রে যেন কাউকে শরিক না করে।’ (১১০)।

সূরা মরিয়মে (সূরা মরিয়ম, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৯৮, রুকু ৬) আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব, একত্ববাদ এবং পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। সূরায় কয়েকজন নবীর ঘটনা আলোচিত হয়েছে।

জাকারিয়া (আ.)। বুড়ো বয়সে আল্লাহর কাছে সন্তান প্রার্থনা করেন। সন্তান হওয়ার বাহ্যিক কোনো সম্ভাবনাই যখন ছিল না, এমন সময় আল্লাহ তায়ালা তাকে ইয়াহইয়া নামের এক পুত্র সন্তান দান করেন। (২-১৫)।

আল্লাহর আদেশে বাবা ছাড়া কুমারী মরিয়মের ঘরে ঈসার (আ.) জন্মসংক্রান্ত ঘটনা উল্লেখের পর বলা হয়েছে, সন্তান নিয়ে মরিয়ম নিজ সম্প্রদায়ের কাছে এলে ইহুদিরা সমালোচনা শুরু করে। মরিয়ম মুখে জবাব না দিয়ে শিশু ঈসার দিকে ইশারা করা মাত্র নবজাতক বলে ওঠেন, ‘আমি আল্লাহর বান্দা’। কোলের শিশু মায়ের চারিত্রিক পবিত্রতার ঘোষণা দেয়। (১৬-৩৪)। আসলে আল্লাহর কুদরতের কাছে অসম্ভব বলতে কিছু নেই। (৩৫-৩৬)।

বাবাকে মূর্তিপূজায় লিপ্ত দেখে সন্তান ইবরাহিম তাকে একত্ববাদের দাওয়াত দেন। কিন্তু বাবা কথা শোনেনি। ঈমান রক্ষার জন্য ইবরাহিম (আ.) দেশ-জাতি সব ছেড়ে চলে যান। পরবর্তী সময় তার বংশেই সব নবীর আবির্ভাব ঘটে। (৪১-৫০)।

এরপর সূরা মরিয়মে মুসা, হারুন, ইসমাইল ও ইদরিস (আ.) এর আলোচনা রয়েছে, এরা আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দা ছিলেন। কিন্তু তাদের স্থলবর্তী হয়েছে এমন লোক, যারা নামাজ নষ্ট করেছে, প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। (৫১-৫৯)।

মোশরেকরা পুনরুত্থান ও প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করে, তাদের অবশ্যই জাহান্নামে একত্র করা হবে। (৮৬-৯৫)।

এ প্রসঙ্গের আলোচনার পর সূরার শেষে বলা হয়েছে, মোমিনদের আল্লাহ বিশেষ মহব্বত দান করবেন এবং বর্তমান কাফেরদেরও পূর্ববর্তী কাফেরদের মতো ধ্বংস করবেন। (৯৬-৯৮)। (সূরা ত্বহা, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৩, রুকু ৮) প্রায় পুরো সূরাতেই রয়েছে মুসা (আ.) এর কাহিনীর বর্ণনা। কোরআনের বাণী প্রচার-প্রসারের জন্য নবীজি (সা.) অনেক মেহনত ও কষ্ট করতেন। সূরার প্রথম দিকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় নবীকে সান্তনা দিয়েছেন। মূলত সূরায় মুসার ঘটনা আলোচনার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, নবীজি এবং তার উম্মতকে এ বার্তা দেওয়া যে, সবসময় আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের হেফাজতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।

সূরা ত্বহার ৯-৯৮ নম্বর আয়াত পর্যন্ত একাধারে মুসা (আ.) এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এখানে তার জীবনের প্রায় সব ঘটনা চলে এসেছে। ঘটনার আনুষঙ্গিক বিষয়ের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে বান্দা যেন ঘটনার শিক্ষণীয় বিষগুলোর প্রতি মনোযোগী হয় এজন্য কোরআনে সাধারণত ঘটনার ধারাবাহিক ক্রম রক্ষা করা হয় না।

আলোচ্য সূরায় মুসা (আ.) এর যে ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলো হলো শিশু মুসাকে আল্লাহর আদেশে দরিয়ায় নিক্ষেপ, শত্রুর ঘরে মায়ের কোলে লালন-পালন, নবুয়ত লাভ, আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে এবং তার ভাই হারুন (আ.) কে ফেরাউনের কাছে যাওয়ার নির্দেশ, ফেরাউনের সঙ্গে উত্তম বাচনভঙ্গিতে কথোপকথন, মুসার বিরোধিতার জন্য ফেরাউন কর্তৃক জাদুকরদের একত্রীকরণ, মুসা (আ.) এর বিজয়, জাদুকরদের ঈমান, নবীর নেতৃত্বে বনি ইসরাইলের মিশর ত্যাগ, ফেরাউনের সৈন্যসামন্ত নিয়ে ধাওয়া করা, পরিশেষে সমুদ্রে ফেরাউন বাহিনীর বিনাশ সাধন। মহাদয়ালু রবের নেয়ামতের বিপরীতে বনি ইসরাইলের অকৃতজ্ঞতা, সামিরি কর্তৃক গো-বাছুর বানানো এবং বনি ইসরাইলের পথভ্রষ্টতা, তাওরাত নিয়ে মুসা (আ.) এর তুর পর্বত থেকে প্রত্যাবর্তন এবং নিজের ভাইয়ের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ।

কেয়ামতের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরার পর পরকালে আল্লাহ বিমুখ বান্দাদের শাস্তির বিবরণ দেওয়া হয়েছে। (১০২-১১২, ১২৪-১২৮)। মাঝে আদম (আ.) কে ইবলিসের সিজদা না করার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। (১১৬-১২৩)। মোশরেকদের কথায় কান না দিয়ে দাওয়াতের কাজে অবিচলতার নির্দেশনার মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে। (১২৯-১৩৫)।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: