ঈদের কেনাকাটায় উপচে পড়া ভিড়

প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০১৮, ০৯:২৭ এএম

ঈদের আর মাত্র ১দিন বাকি। ও মোর রমজানেরই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ, আপনাকে আজ বিলিয়ে দে সব আসমানে থাকিস, রমজানেরই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ। এই খুশির ঈদ আর বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই জমে উঠেছে কিশোরগঞ্জের ঈদ বাজার।

কিশোরগঞ্জে বাজার ব্যবসা বানিজ্যের জন্য একটি প্রান কেন্দ্র। তাই এবার ঈদ বাজারে কিশোরগঞ্জে জমে ওঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ছোট-বড় সবধরনের মার্কেটে চলছে কেনাকাটার ধুম। ইফতারের কিছুটা সময় ব্যাতিত সকাল থেকে একটানা রাত পর্যন্ত চলছে এ কেনাকাটার কাজ।

কিশোরগঞ্জ জেলার লোকজন ছাড়াও ঈদের কেনাকাটা করতে পার্শ্ববর্তী উপজেলা করিমগঞ্জ, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, কটিয়াদি, তাড়াইল, নিকলী, বাজিতপুর, ইটনা, মিঠামইন ও কুলিয়ারচর থেকেও লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কিশোরগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন মার্কেটগুলো থেকে কেনা কাটা করতে দেখা যায়। এরই মধ্যে জেলা শহরসহ ১৩টি উপজেলা শহর ও গ্রামগঞ্জের মার্কেট, বিপনীবিতান গুলোতেও উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে।

সকাল থেকেই শহরের মার্কেট ,শপিং মল, ফ্যাশন হাউস ও বিপনী বিতানগুলো ক্রেতা সমাগমে মুখর হয়ে উঠেছে। বাহারি পোশাক আর নতুন ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা ক্রেতা আর্কষন সৃষ্টি করছে। ঈদের আগ মুহূর্তে শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে পড়েছে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বিভিন্ন মার্কেটের বিপণী বিতানগুলো।

সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে পছন্দের জিনিস কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। তবে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে। অন্য বছর যেমন রোজার শুরু থেকেই মার্কেট গুলোতে ভিড় থাকে এবার তেমনটি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে শেষের দিকে এসে মার্কেটগুলি জমজমাট। ভারতীয় বাংলা সিরিয়াল ও হিন্দি ছবির নায়ক-নায়িকাদের নামধারী হরেক রকমের পোশাক বাজার দখল করে রেখেছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, আনোয়ারা সুপার মার্কেট, মাধবি প্লাজা, নিরালা শপিং কমপ্লেক্স, আপন ক্র্যাফট, টপ টেন, থ্রীপিছ মেলা, সুদর্শন কথ হাউজ, অলকা বস্ত্রালয়, শহীদ গার্মেন্ট, রঙ শো রুম, রিচ ম্যান, পাঞ্জাবি ফ্যাশন, নিউ মা গার্মেন্ট, তেরিপট্টি মার্কেট, গৌরাঙ্গবাজার মার্কেট ও এম এম শপিং কমপ্লেক্সসহ শতাধিক ছোট বড় বিপণি বিতানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে মেয়েদের থ্রিপিস, টুপিস, টপস, লেহেংগা, কামিজ, শাড়ি, ছেলেদের শর্ট পাঞ্জাবি, লং পাঞ্জাবি, শার্ট, জুতা, ফতুয়া, জিন্সসহ শিশুদের নানা বৈচিত্রের পোশাক।

তবে দেশি পোশাকের চাইতে বিদেশি পোশাকের দিকে বেশি ঝুঁকছে ক্রেতারা। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। সন্ধ্যার পর থেকে প্রত্যেকটি মার্কেটে আলোক সজ্জায় পাল্টে যায় চিরচেনা জেলা শহরের আসল চেহারা। শাড়ির দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ঢাকাই মসলিন, চিত্রা, বুটিক, বালুচুরি, কাতান, জামদানিসহ বিভিন্ন ধরনের সিল্ক। এছাড়া, বেনারসি কিংবা জামদানি শাড়ির পাশাপাশি ক্রেতারা ঝুঁকছেন বিচিত্র নাম আর বাহারি ডিজাইনের ভারতীয় শাড়ির দিকে। পাঁচ’শ টাকা থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা দামের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বড় বড় মার্কেটের বড় দোকানগুলোতে।

শহরের টপ টেনে মার্কেট করতে আসা ফারহানা রহমান বলেন, এবার ঈদে শাড়ি কাপড় থেকে শুরু করে সব জিনিসের দাম একটু বেশি। তার পরও নিজের জন্য এবং শাশুড়ি, স্বামী, সন্তানসহ আত্মীয় স্বজনের জন্য কেনাকাটা করেছি। কলেজ শিক্ষার্থী সাঈদা সুলতানা বলেন, ঈদের জন্য একটি থ্রিপিচ কিনেছি। ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচিং করে কসমেটিকস ও জুতা কেনা হয়েছে। তবে অন্য বারের চাইতে দাম একটু বেশি।

উজ্জল সুজ থেকে জুতা কিনতে আসা তানভীর আহমেদ বলেন, আমার দুই বছরের এক মাত্র কন্যার জন্য এক হাজার টাকা দিয়ে জুতা কিনেছি। দাম একটু বেশি হলেও একমাত্র মেয়ে বলে কথা। আনোয়ারা সুপার মার্কেটের বিক্রেতা খলিলুর রহমান বলেন, শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী ছেলে-মেয়েদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি পোশাকের চাইতে বিদেশি পোশাকের দিকে বেশি ঝুঁকছে ক্রেতারা।

বিশেষ করে ভারতীয় সিরিয়াল ও ছবির নামে বিভিন্ন জামা যেমন বহ্নি, রাখি বন্ধন, বাহুবলী, মোগল-ই-আযম, র্হুরাম সুলতান এগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। শহরের নিউ মা গার্মেন্টের সত্বাধিকারী মো. রায়হান উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, অন্য বছর রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকেই মূলত ক্রেতাদের ভিড় থাকে। তবে এবার বেশি বৃষ্ঠি হওয়াতে ফসল সঠিক ভাবে ঘরে তুলতে না পাড়ায় এর অনেকটা প্রভাব পড়েছে কিশোরগঞ্জের ঈদ বাজারে। কারণ হাওরের একটা বড় অংশ জেলা শহরে বাস করে।

এছাড়া হাওর থেকে প্রচুর লোক আগেভাগেই ঈদ বাজারে আসতো। এবার তাঁদের সংখ্যা খুবই কম। সেজন্য অন্য বছরের তুলনায় এবার ব্যবসাও কম। অলকালয় বস্ত্রালয়ের মালিক বিষ্ণু সাহা জানান, ঢাকাই মসলিন, চিত্রা, বুটিক, বালুচুরি, কাতান, জামদানিসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ি তাঁর দোকানে রয়েছে। সাড়ে ৩শ’ টাকা থেকে শুরু করে ২৫-৩০ হাজার টাকা দামে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। রোজার শেষের দিকে এসে বেচা কেনা মোটামুটি ভালো।

এছাড়া, ছেলেদের জিন্স প্যান্ট, টি শার্ট, শার্ট ও লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে তাঁর দোকানে। এদিকে জেলা শহরের ঈদ বাজারে যুবক ও তরুণদের ভিড় পড়েছে পাঞ্জাবির দোকানে। হরেক রকমের হাতে কাজ করা পাঞ্জাবির কদর সব চেয়ে বেশি। সব চেয়ে বেশি পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে পাঞ্জাবি ফ্যাশন, কুমিল্লা খাদি আড়ং, আপন ক্র্যাফ্ট, টপ টেন, রঙ শো রুম ও রিচ ম্যানসহ আরো কয়েকটি দোকানে। এক রেটে বিক্রি হওয়া এসব দোকানে ৫শ’ থেকে ১০ হাজার টাকা দামে পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, নিম্ন শ্রেনিদের জন্য কিশোরগঞ্জের ফুটপাথসহ সাধারন দোকান গুলোতে থ্রী-পিচ, পাঞ্জাবি, শাড়ীসহ বিভিন্ন সামগ্রী একটু কমদামে পাওয়া গেলেও নামি-দামি মার্কেট গুলোতে আকাশ ছোঁয়া দাম। আর তাই নিম্ন-মধ্যবিত্তদের প্রথম পছন্দ হকার্স মার্কেট গুলোই। ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা গেল, ঈদ উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে আলাদা সংগ্রহ। বড়দের পোশাকে ততটা ভিন্নতা চোখে না পড়লেও বৈচিত্র্যময় নকশা আর কাটছাঁটের ভিন্নতা দেখা গেল কিশোর-কিশোরীদের পোশাকে। প্রজাপতি নকশার প্যাটার্নে তৈরি হয়েছে টিউনিক।

বিডি২৪লাইভ/এমআরএম

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: