‘মোবাইল হাতে নিয়ে হুবহু তামিল ছবি তৈরির চেষ্টা চলছে’

প্রকাশিত: ২২ জুন ২০১৮, ১২:৫১ পিএম

ঈদের ছুটি শেষে ফের কর্মব্যস্ত হতে শুরু করেছে সিনেমা পাড়া। শুটিং হাউজ গুলোতে শুরু হচ্ছে নতুন ছবি, নাটকের কাজ। আর তাই তো ঈদের আমেজ কাটতে না কাটতেই নতুন ছবির শুটিং শুরু হয়েছে রাজধানীর প্রিয়াংকা শুটিং হাউজে।

মোহাম্মদ আসলাম পরিচালিত ‘প্রতিশোধের আগুন’ ছবির শুটিং চলছে হাউজটিতে। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। শুটিং এর ফাঁকে বিডি২৪লাইভের প্রতিনিধি আসিফ আলমের সঙ্গে কথা হয় জনপ্রিয় এই খল অভিনেতার। জানালেন চলচ্চিত্রে তার আসা, বর্তমান চলচ্চিত্রের দুরবস্থা ও উত্তরণের নানা দিক সম্পর্কে।

ডাক বিভাগে সরকারি চাকরি দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন এই অভিনেতা। পাশাপাশি মঞ্চ নাটক, রেডিওতেও কাজ করতেন। ১৯৮৫ সালে শহীদুল আমিন পরিচালিত ‘রামের সুমতি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তার। সিনেমাটিতে নার্গিসের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। পরবর্তীতে ‘চাঁদনী’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে পান দর্শক জনপ্রিয়তা।

‘চাঁদনী’ ছবিটির কথা মনে করে সাদেক বাচ্চু বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করতাম তাই শুটিং এর সময় ছুটি নিয়ে ঝামেলা হতো। আর এসব নিয়ে আমার অনেক সহকর্মীরা আমাকে তিরস্কার, ঠাট্টা করতো কিন্তু চাঁদনী ছবিটি মুক্তির পর তারাই আমাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে ছবি তুলতো।’

‘বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা নিয়ে বেশ কষ্ট ও ক্ষোভ উগড়ে দেন এই গুনী নির্মাতা’ বলেন, ‘আগে একটি ছবি মুক্তি পেলে ছয় মাসের আগে হল থেকে নামতো না। কিন্তু এখন আজ মুক্তি পেলে কালই নেমে যায়। এখনকার ছবির গল্প নেই বলেই চলে। নায়ক মারছে, ভিলেন দূরে উড়ে গিয়ে পড়ছে কিন্তু কি কারনে পরছে তা বোঝা যায় না। আরে ভাই ছোটবেলায় বুড়ি দাদির গল্প শুনতাম। দাদির মুখ থেকে থুথু এসে মুখে লাগত অথবা মুখের গন্ধ আসতো। তারপরও দাদির গল্প শোনার জন্য আকুলতা ছিল। এটা সবার জীবনেই ঘটেছে। গন্ধ, থুথু খেয়েও কেন এত আকুলতা? কারণ দাদির গল্প এবং গল্প বলার ধরণটা ছিল ভালো লাগার মতো। সিনেমার গল্প ও গল্প বলার ধরণ ভালো থাকলে হলের দুর্গন্ধ, নোংড়া পরিবেশেও সিনেমা দেখতে মানুষ প্রেক্ষাগৃহে যাবে। মৌলিক গল্প দরকার। কারণ ছাড়া সিনেমায় মারামারি কেউ দেখতে চায় না। কারণ ছাড়া অস্ট্রেলিয়াতে শুটিং করলেও কেউ পছন্দ করে না।’

‘মোবাইল হাতে নিয়ে হুবুহু তামিল ছবি তৈরি করা হচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক সময় দেখি হাতে মোবাইল নিয়ে তামিল ছবি দেখে বলা হচ্ছে এই পাশে এইভাবে দাঁড়ান। সেটা আমাদের শিল্পীদের মানাক আর নাই মানাক, ঠিকই তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের তো তাদের মতো ফিগার কিংবা কালচার নয়। যার ফলে ছবির মান নষ্ট হচ্ছে।’

‘শিল্পী সংকটের’ কথা উল্লেখ করে বাচ্চু বলেন, ‘আগে আমাদের শিল্পীর অভাব ছিলো না। আর এখন ভালো একজন অভিনেতার কাউন্টার ডায়লগ দেয়ার মতো শিল্পী নেই বললেই চলে।’

দেশের পরিচালকদের সম্পর্কে সাদেক বাচ্চু বলেন, ‘পরিচালক হলো ক্যাপ্টেন অফ শিপ। আগে পরিচালক আসলে আমরা ভয় থাকতাম আর এখন কার পরিচালকদের দেখলে আমার মায়া হয়। এখন মেকআপ রুমে ঢুকেই দেখবেন হিরো হিরোইনরা পা তুলে চেয়ারে বসে আছেন। পরিচালক এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এখন শট আছে’। উত্তরে শিল্পী বলেন, ‘যান যান আসতেছি।’ যে ঘরের ছেলের ধমকে বাবা মাথা নত করে সেই সংসার কি সুখের হতে পারে?’

‘মৌলিক ছবির বিকল্প নেই’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন অনেক ট্যালেন্ট তরুণ নির্মাতারা আসছে। তাদেরকে দিয়ে মৌলিক ছবি নির্মাণ করাতে হবে। তাহলেই হলে দর্শক ফিরবে।’

প্রসঙ্গত, এই ঈদে সাদেক বাচ্চু অভিনীত ‘সুপার হিরো’, ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’ নামের সিনেমা দুটি মুক্তি পেয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/এএ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: