যেভাবে আ’লীগের নেতা হলেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০১৮, ০৭:৩৮ পিএম

দিনটি ছিল ১৭ মে, ১৯৮১ সাল। মাতৃভূমি বাংলাদেশে পিতা-মাতাসহ পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য নিহত হওয়ার ছয় বছর পর প্রবাস থেকে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালে যখন শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা। পরবর্তীতে তিনি আশ্রয় পান ভারতে।

তারও আগে, ১৯৮১ সালেই শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শেখ হাসিনা কীভাবে আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে উঠলেন সে প্রসঙ্গ উঠে আসে তার প্রয়াত স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার রচিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ বইতে।

সেই সময়কার কিছু ঘটনার কথা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

দিল্লিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা

শেখ হাসিনা এবং ওয়াজেদ মিয়া যখন ভারতে অবস্থান করছিলেন, তখন ১৯৭৯ ও ১৯৮০ এই দু’বছরে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিভিন্ন সময় দিল্লি যান তাদের খোঁজ-খবর নিতে। এম এ ওয়াজেদ মিয়া তার বইতে লিখেছেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক কাবুল যাওয়ার সময় এবং সেখান থেকে ফেরার সময় তাদের সঙ্গে দেখা করেন।

আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, তৎকালীন যুবলীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তৎকালীন আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দিল্লিতে যান। তাদের সে সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রাজি করানো।

এ প্রসঙ্গে ওয়াজেদ মিয়া তার বইতে লিখেছেন, আওয়ামী লীগের এসব নেতাদের দিল্লীতে আমাদের কাছে আসার কারণ ছিল ঢাকায় ১৯৮১ সালের ১৩- ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের ব্যাপারে হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় করা।

এদের সবাই এবং শেখ হাসিনার চাচী (বেগম নাসের), ফুফু আম্মারা এবং ফুফাতো ভাইয়েরা চাচ্ছিলেন যেন হাসিনা আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়। তবে আমি এ প্রস্তাবে কখনোই সম্মত ছিলাম না।

তিনি আরও লিখেছেন, আমি তাদের সকলকে বলেছিলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অকল্পনীয় মর্মান্তিক ঘটনার পর বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়-স্বজনদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা উচিত হবে না। অন্তত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত। তবে দলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতেই ঘোষণা করা হয়।

বইতে ওই বিবরণ আসে এভাবে: ১৬ ফেব্রুয়ারি (১৯৮১) তারিখের সকালে লন্ডন থেকে ফোনে সংবাদ পাওয়া যায় যে, আওয়ামী লীগ ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে হাসিনাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর শেখ সেলিমও হাসিনাকে ফোনে একই সংবাদ দেন। এরপর ঢাকা ও লন্ডন থেকে আরও অনেকে টেলিফোনে হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।

তিনি আরও লিখেন, পরের দিন দিল্লির অনেক সাংবাদিক শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন বিষয়ে তার মন্তব্য ও মতামত প্রকাশ করেন। এর এক সপ্তাহ পরে আওয়ামী লীগের ওই সময়কার শীর্ষ নেতারা দিল্লিতে যান।

ঘটনাবলীর বর্ণনা দিয়ে লেখা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি (১৯৮১) ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আব্দুস সামাদ, এম কোরবান আলী, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, স্বামী গোলাম আকবার চৌধুরীসহ বেগম সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, বেগম আইভি রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ দিল্লী পৌঁছান। তারা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি বৈঠকে মিলিত হন বলেও বইতে জানান ওয়াজেদ মিয়া।

ওয়াজেদ মিয়া আরও লিখেছেন, ড. কামাল হোসেন এবং বেগম সাজেদা চৌধুরীর ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল আমাদের পারিবারিক ও অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করে হাসিনার ঢাকা ফেরার তারিখ চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করার জন্যে। তবে শেখ হাসিনার ঢাকা ফেরার বিষয়ে তারা মার্চের দুটো সম্ভাব্য তারিখ প্রস্তাব করলেও ওই তারিখের ব্যাপারে ওয়াজেদ মিয়ার আপত্তি ছিল।

ওয়াজেদ মিয়ার বর্ণনায়, এরপর মে মাসের ১৭ তারিখ ফেরার দিন চূড়ান্ত হয়। ১৬ তারিখে আওয়ামী লীগের আব্দুস সামাদ আজাদ, এম কোরবান আলী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে পুতুলকে নিয়ে দিল্লী থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কোলকাতা পৌঁছান। এরপর ১৭ মে সন্ধ্যায় তারা কোলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছান।

শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী করার প্রস্তাব

শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী করার বিষয়টি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন দলের অন্যতম সিনিয়র নেতা আব্দুর রাজ্জাক এমনটাই বলছিলেন সেই সময়কার আওয়ামী লীগ নেতা ও শেখ মুজিব সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, মূল নেতা যাদের মনে করা হতো তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। দলও কিছুদিনের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। দলকে পুনর্জ্জীবিত করার জন্য যখন চেষ্টা হচ্ছিল তখন বেগম তাজউদ্দিন ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিলেন। অবশ্য এখন আর কেউ তার কথা বলে না।

ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, বেগম তাজউদ্দিন থানায় থানায় ঘুরে দলকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। আমি তখন লন্ডন থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম। তিনি বলতেন এখন আসা ঠিক হবে না। যখন আসলে ভূমিকা রাখতে পারবেন, দলের অবস্থা তেমন হলে জানাবো। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি বললেন, এখন ফিরতে পারেন।

এরপর দলের মধ্যে যে কয়েকজন নেতা রয়েছেন তাদের মধ্যে একক কাউকে টানা-হেঁচড়া না করে সাত জনের যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মতৈক্য হয়, জানান ড. কামাল হোসেন। ১৯৮০ সালে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা হয়। এরপর দলের প্রেসিডেন্ট করা হয় জোহরা তাজউদ্দীনকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন আব্দুর রাজ্জাক। রাত দু’টোর সময় এই সিদ্ধান্ত হয়, আর ঠিক হয় পরদিন এ ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হবে। কিন্তু পরদিন সকালে ঘটলো ভিন্ন এক ঘটনা, যা মোড় পাল্টে দিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের।

ড. কামাল হোসেন বলেন, সকাল সকাল আমার কাছে আসেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর স্বামী - এখন মারা গেছেন নাম বলতে পারি। তিনি এসে বললেন, খুব ভালো কাজ হয়েছে কাল রাতে, পার্টি বাঁচিয়ে দিয়েছেন। দেখুন আর একটা কাজ করা যায় কিনা - আপনি তো বলেছিলেন শেখ হাসিনাকে সসম্মানে আনবেন। ওকে তো নিয়ে আসার একটা সুযোগ হয়েছে। ওকে চেয়ারম্যান করে দিন না! ওর তো ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর ঐক্যের প্রতীক হিসেবে, ওকে যদি চেয়ারম্যান করে এটা বলা যাবে।

&dquote;&dquote;এর পরের ঘটনা সম্পর্কে কামাল হোসেন বলেন, আমি বেগম তাজউদ্দীনকে বললাম, তার যে উদারতা ... বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বললেন ‘অবশ্যই অবশ্যই ...আমি (বেগম তাজউদ্দীন) প্রস্তাব দেব ওকে চেয়ারম্যান করার জন্য’। আমি (কামাল হোসেন) তখন বললাম ‘আপনি বললে আমি সমর্থন দেব’। এবং এটাই হল... বেগম তাজউদ্দীন বললেন, আমি সমর্থন করলাম... ওকে নিয়ে আসো। কেননা হাসিনা কোনদিন এটা দাবি করবে অথবা চিন্তাও করবে, সেটা চিন্তার বাইরে ছিল।

এটা করলো কিন্তু রাজ্জাক (আব্দুর রাজ্জাক), সে পাঠিয়েছিল চৌধুরী সাহেবকে (সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী)।

ড. কামাল হোসেন বলেন, তারা শেখ হাসিনাকে আনতে চেয়েছিলেন শেখ মুজিবের প্রতি আস্থা ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা তো ঐক্যের প্রতীক! বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের আস্থা ও শ্রদ্ধা তখনও ছিল, এখনও আছে।

সে সময় দলের মধ্যে বিভক্তির কথা উঠে আসে ড. কামাল হোসেনের কথায়ও। তিনি বলেন, দলের মধ্যে গ্রুপিং ছিল, সেটা জেনেই আমরা দেখলাম যেন সব গ্রুপের লোক ওখানে মনোনীত হয়। বিভিন্ন গ্রুপ মিলে কমিটিও গঠন করা হয়। বিভিন্ন জনের পরামর্শ নেয়া হল। ... এ যে আওয়ামী লীগকে ধরে রাখা, কেননা জিয়াউর রহমান তো ম্যাক্সিমাম চেষ্টা করেছে এটা ধ্বংস করতে।

ডা. কামাল বলেন, বেগম তাজউদ্দীন সে সময় যে ভূমিকা রেখেছেন, তিনি যদি ওইভাবে সংগঠনকে পুনর্জ্জীবিত না করতেন তাহলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্বই থাকতো না। ...তারপর কাউন্সিল করে, সবাইকে এক জায়গায় এনে উনাকে (শেখ হাসিনাকে) নিয়ে আসা হল একদম স্বেচ্ছায়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে এই ঐক্যটা রক্ষা করবে সে এবং আমরা তাকে শ্রদ্ধা-সমর্থন সব-ই করবো।

শেখ হাসিনা যেদিন ফিরে এলেন

ছয় বছর প্রবাসে কাটানোর পর শেখ হাসিনা যেদিন ফিরে এলেন, সেদিন ছিল রবিবার। ১৭ মে ১৯৮১ সাল। এম এ ওয়াজেদ মিয়া তার গ্রন্থে লিখেছেন, ওইদিন বিকালে ঢাকায় একটু একটু ঝড়বৃষ্টি হয়। ঢাকায় পৌঁছেই রাত এগারোটার দিকে হাসিনা আমাকে টেলিফোনে জানায় যে, সেদিন সভাস্থল মানিক মিয়া এভিনিউ হতে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য।

তিনি আরও লিখেছেন, সেদিন তাকে সম্বর্ধনা জানানোর জন্য ১০-১২ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সূত্রে বলা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মতে, ওই দিন ঢাকায় ১৫ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিল।

স্বামী ওয়াজেদ মিয়া শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে। তার বর্ণনায়, আমি তখন হাসিনাকে বললাম, ১০-১৫ লাখ লোকের সমাগম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন থেকে তোমাকে মাথা ঠাণ্ডা রেখে দলীয় কাজকর্ম চালাতে হবে। অন্যের তোষামোদীতে তোমার মাথা যেন মোটা না হয়ে যায়, তার জন্য তোমাকে এখন থেকে সতর্ক থাকতে হবে নিরন্তর।

বইতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ ও ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছাত্রদের জন্য একটি পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনার কাজে তিনি ব্যস্ত ছিলেন এবং শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পরেও ভারত সরকার তাকে ভারতে অবস্থানের অনুমতি দিয়েছিল।

আমি নেতা নই, সাধারণ মেয়ে

শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসার সংবাদ পরদিন (১৮ মে, ১৯৮১) ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে গুরুত্ব-সহকারে প্রকাশিত হয়। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের লেখা ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার পথচলা’ শীর্ষক গ্রন্থে বিভিন্ন পত্রিকার খবরের বরাত দিয়ে উঠে এসেছে সেই দিনটির বর্ণনা।

‘শেখ হাসিনার দেশে ফেরা’ শিরোনামের চ্যাপ্টারে তিনি তুলে ধরেন ১৮ মে ১৯৮১ সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার প্রথম পাতার রিপোর্টের কিছু অংশ। ওয়াজেদ মিয়ার বর্ণনায়, পুলিশের বেষ্টনী অতিক্রম করে বহু মানুষ বিমানবন্দরের টারমাকে প্রবেশ করে ... এরপর আসে কাঙ্ক্ষিত সে বিমানটি। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং। ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ও শেখ হাসিনাকে ‘শুভেচ্ছা স্বাগতম’ জানানো গগনবিদারী শ্লোগানে প্রকম্পিত গোটা বিমানবন্দর।’

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে লেখা হয়, শেখ হাসিনাকে লইয়া মিছিল শুরু হওয়ার পরপরই চারদিক অন্ধকার করিয়া ঝড় ও মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। ...বাসের ছাদে ও খোলা ট্রাকের লোকজন প্রায় দুই ঘণ্টা-কাল ধরিয়া বৃষ্টিতে ভিজিয়া দীর্ঘপথ অতিক্রম করে।’

অধ্যাপক হোসেন তার বইতে পত্রিকার রিপোর্ট থেকে আরও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা জনতাকে উদ্দেশ্য করে কি বলেছিলেন: আমি নেতা নই, সাধারণ মেয়ে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী, আপনাদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য আপনাদের নিয়ে নিরলস সংগ্রাম করে যাবো।

ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ মোটামুটি ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল। দলের মধ্যে ছন্দটা হারিয়ে গিয়েছিল। মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আলাদা আওয়ামী লীগ- এমন পরিস্থিতিতে দল আবার ভাঙার অবস্থা হয়েছিল। তিনি বলেন, দলকে এক রাখার জন্যেই দলের কয়েকজন নেতা দিল্লিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনার সাথে পরামর্শ করতে এবং তারা তাকে রাজি করান সভাপতির পদ নিতে।

তার ফিরে আসা আওয়ামী লীগের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল এমন প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দলের মধ্যে নেতাকর্মীরা উৎসাহ পেয়েছিলেন। তৃণমূলের কর্মীরা অনেকটাই নেতৃত্বহীন ছিলেন, কারণ এই ধরনের মধ্যবিত্তের দলে একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা না থাকলে দল খুব একটা এগোতে পারে না।

তিনি বলেন, বিশেষ করে বড় দলগুলোর জন্য এটা একটা বড় সমস্যা। আদর্শভিত্তিক দলগুলোর জন্য এটা খুব একটা সমস্যা হয়না, কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের- বঙ্গবন্ধুর মত একজন মহীরুহ ছিলেন যে দলের নেতা, তার অবর্তমানে তাজউদ্দীন নেই, সৈয়দ নজরুল ইসলাম নেই, অন্যান্য নেতা নেই। ফলে দলটি অগোছালো হয়ে পড়েছিল।

দলের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা

মহিউদ্দিন আহমেদ আরও যোগ করেন, আওয়ামী লীগের মধ্যেই হার্ডলাইনাররা ছিলেন। মহিউদ্দন আহমদ এবং আব্দুর রাজাকের নেতৃত্বে একটি অংশ বেরিয়ে ‘বাকশাল’ নামে দল গঠন করেন, ফলে আওয়ামী লীগ একটু দুর্বল হয়ে যায়। মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ব যতই সংহত হতে থাকুক না কেন, তরুণদের মধ্যে- বিশেষ করে ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে- আব্দুর রাজ্জাকের অনুগতদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

তার কথায়, আন্দোলনের মধ্য দিয়েই কিন্তু শেখ হাসিনা দলের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। ফলে দলের মধ্যেও তার অনেকটাই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় আশির দশকে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: