বন্যা নিয়ে পৃথিবীর দশটি চমকপ্রদ গল্প (ছবি সহ)

প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০১৮, ০১:০৬ পিএম

১) ডিউক্যালিয়নের কিংবদন্তী : প্রাচীন গ্রীসে ডিউক্যালিয়ন ছিলেন দেবতা প্রমিথিউসের সন্তান। যখন জিউস লোভ ও অবাধ্যতার কারনে মানবতাকে ধ্বংস করতে চাইলেন, তখন ডিউক্যালিয়ন তাদের স্বপক্ষে দাঁড়ালেন দয়ার আর্তি নিয়ে। এদিকে জিউসঅবিচল থাকলেন তাঁর সিদ্ধান্তে। অগত্যা ডিউক্যালিয়ন তাঁর পিতা প্রমিথিউসের উপদেশ গ্রহন করলেন। জিউসের ক্ষোভেরবন্যা থেকে বাঁচতে নির্মাণ করলেন একটি জাহাজ। উিউক্যালিয়ন, তাঁর স্ত্রী ও পাহাড়ে যারা জাহাজ তৈরী করেছিল তারা ব্যতিত মানুষের পুরো একটি প্রজন্ম নিহত হয় জিউসের সেই বন্যায়।

&dquote;&dquote;

২) ভাইনামইনেন এর রক্তের বন্যা : ফিনিশ পুরাণ অনুসারে, মহাকাব্যিক নায়ক ভাইনামইনেন পর্বতের উপরে একটি নৌকা নির্মাণ করেছিলেন; কিন্তু শয়তান তার শরীরে কুড়াল দিয়ে আঘাত করলে পৃথিবী ভেসে যায় সেই রক্তে। এরপর ভারনামইনেন তার নৌকা নিয়ে উত্তর দিকে চলে যান এবং সেখানে নতুন করে শুরু করেন তার তৎপরতা।

&dquote;&dquote;৩) মায়া সভ্যতার বন্যা : মায়াসভ্যতার বন্যা বিষয়ক কিংবদন্তী অনুসারে, মানুষের উপর রুষ্ট হয়ে বাতাস ও ঝড়ের দেবতা ‘হিউরাকেন’ এক বিশাল বন্যা সৃষ্টি করেন। বন্যার পর, বেঁচে থাকা তিনজন পুরুষ ও চারজন নারীর কল্যাণে পৃথিবী আবারও জনবহুল হতে থাকে।

&dquote;&dquote;৪) ক্যামেরুনের বন্যার গল্প : ক্যামেরুনের প্রচলিত গল্প অনুসারে, এক মেয়ে একবার ময়দা মাখার কাজ করছিল। এসময় একটি ছাগল তাতে মুখ দেয়ার চেষ্টা করছিল। বিরক্ত হয়ে, প্রথমে মেয়েটি ছাগলকে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ছাগল ফিরে এসে আবারও একই চেষ্টা করতে থাকে। অগত্যা, মেয়েটি এবার তাকে ইচ্ছেমত ময়দাখাওয়ার অনুমতি দেয়। এতে খুশী হয়ে ছাগলটি মেয়েটিকে আসন্ন বন্যার বিষয়ে অবহিত করে। খবর শুনে, মেয়েটি ও তার ভাই নিজেদের সহায়-সম্পদ সাথে করে গ্রাম থেকে দৌড়াতে থাকে। পেছনে গ্রামটি তখন ভেসে যাচ্ছিল বন্যার তোড়ে। ছাগলের ভবিষ্যৎ বাণীর জোরে রক্ষা পায় মেয়েটির প্রাণ।

&dquote;&dquote;৫) তিমুয়ানের বন্যা : তিমুয়ানদের মাঝে একটি উপাখ্যান প্রচলিত আছে যে, তাদের পূর্বপুরুষদের অনেকেরই মৃত্যু হয়েছিল দেবতাদের রুষ্ট করার কারনে। দেবতারা ভয়াবহ এক বন্যা সৃষ্টি করেন, যাতে মাত্র দুইজন ছাড়া আর সব তিমুয়ানরা নিহত হয়। তাদের নাম ছিল—মামাক ও ইনাকবংসুক। তারা বাঁচার জন্য ঈগলউড নামক গাছে উঠেছিল।

&dquote;&dquote;৬) সুমেরীয় সভ্যতার বন্যা : প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতায়, বন্যা নিয়ে বেশ কয়েকটি গল্প প্রচলিত রয়েছে। ‘জিউসুদ্রা’ (সুমেরীয় সভ্যতার বিখ্যাত রাজা) ও সুমেরীয় বন্যার গল্পগুলি ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন উপাখ্যানগুলির অন্যতম; যেগুলোর জন্ম খ্রিস্টপূর্ব দুইহাজার অব্দের দিকে। এই গল্প অনুসারে, দেবতারা মানুষের তৈরী বিভিন্ন শব্দে ভীষণ বিরক্তবোধ করতেন; কারন এর জন্য তারা ঘুমাতে পারতেননা। মানবতাকে ধ্বংসের জন্য তাই তারা বন্যা সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিলেন। দেবতা ‘এনকি’ এসময় রাজা জিউসুদ্রাকে সাবধান করলেন আসন্ন বন্যার বিষয়ে। নিরাপত্তার জন্য তখন রাজা তৈরী করলেন একটি সুরক্ষিত জাহাজ।

&dquote;&dquote;৭) গিলগামেশের মহাকাব্যে বন্যা : প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার আরেকটি বন্যার গল্প পাওয়া যায় বিখ্যাত গিলগামেশের মহাকাব্যে। গিলগামেশ অমরত্বের অনুসন্ধান করছিলেন এবং একসময় তিনি ‘উটনাপিস্টিম’এর দেখা পান। ‘উটনাপিস্টিম’ সেই ব্যক্তি যিনি আগেই অমরত্ব অর্জন করেছিলেন। তিনি গিলগামেশকে বিশাল এক বন্যার কাহিনী শোনান। কিভাবে তিনি দেবতার কাছ থেকে সতর্কবার্তা পেয়ে জাহাজ তৈরী করেছিলেন তা শোনান। অবশেষে যখন বন্যা আরম্ভ হয়, তখন উটনাপিস্টিম তার জাহাজ ভেড়ান নিশিরপর্বতে। এরপর, দেবতা‘এনিল’আশীর্বাদ স্বরূপ উটনাপিস্টিমকে অমরত্বের বর দান করেন।

&dquote;&dquote;৮) নূহের বন্যা : সমস্ত বন্যার গল্পের মাঝে বাইবেলের জেনেসিসে বর্ণিত নূহের বন্যাই সবচেয়ে বিখ্যাত। এই উপাখ্যান শুরু হয়, এক মহান ধার্মিক নূহ ও তাঁর সময়কার অন্যসব মানুষ যারা পাপাচাওে লিপ্ত ছিল তাদের কেন্দ্র করে। পৃথিবী সেসময় এতোটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, ঈশ^র বিপথগামীদের সবাইকে ডুবিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ঈশ^রের আদেশ অনুসারে, নূহ একটি জাহাজ তৈরী করলেন; আর তাতে জায়গা দিলেন তার পরিবার ও স্থলচর প্রাণীদের। বন্যা শেষ হলে, নূহের সাথে নতুন অঙ্গীকারের প্রতীক হিসেবে ঈশ^ও একটি রংধনুর উদয় ঘটান।

&dquote;&dquote;৯) বার্গেলমির : প্রাচীন নর্স উপাখ্যান অনুযায়ী, ‘বর’ (বর দেবতা থরের দাদা) এর ছেলেরা মিলে ইমিরকে (ইমির নর্স পৌরাণিকচরিত্র যে, দেবতা ও বামুনদের পূর্বপুরুষ) হত্যা করে। এতে এতো বেশী রক্ত উৎপন্ন হয় যে, পৃথিবী প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি সমস্ত বরফ দৈত্যরা মারা পড়ে। শুধু বার্গেলমির ও তার বাড়ি একটি নৌকার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে। বার্গেলমির ছিল ইমির এর নাতি ও বিখ্যাত বরফ দৈত্য। সে বরফ দৈত্যদের পরবর্তী প্রজন্ম গড়ে তোলে।

&dquote;&dquote;১০) মনু ও মৎস্য : মনু ‘মৎস্য’ নামের একটি ছোট মাছ ধরেন। মাছটি তাকে আরেকটি বড় মাছের হাত থেকে রক্ষার আবেদন জানায়। এর পরিবর্তে মৎস্য মনুকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করবে বলে জানায়। মনু মৎস্যকে সমুদ্রে আনেন, যেখানে সে বড় ও শক্তিশালী হতে পারবে। এরপর যখন বন্যা শুরু হল, তখন মৎস্য মনুকে একটি বড় নৌকা নির্মাণের কথা বলে। মনু সেই কথা অনুযায়ী নৌকা তৈরী করেন। এরপর বন্যার তোড়ে,পানির উচ্চতা বাড়লে মৎস্য নিরাপত্তারজন্য মনুর নৌকাকে টেনে উত্তরদিকের পর্বতে নিয়ে যায়।

&dquote;&dquote;

বিডি২৪লাইভ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: