কোন বিষয় নিয়ে পড়ব?

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০১৮, ০৮:৩০ এএম

সম্প্রতি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এখন ভাবছেন কোথায় পড়বেন? ভর্তিযুদ্ধে লড়াই করতে অনেকেই নেমে পড়েছেন। আবার অনেকেই কোন বিষয় নিয়ে পড়বেন সেই চিন্তায় আছেন। কোন বিষয় নিয়ে পড়লে ভবিষ্যৎ ভালো হবে। আমি বলি এটা ভাবা বা চিন্তার কোনো ব্যাপারই না। আমি মনে করি এটা ভাবা বোকামির কাজ।

স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে সাবজেক্ট বা বিষয় আসল কথা নয়। আমরা অনেকেই ভাবি ম্যাথ, ফিজিকস, কেমিস্ট্রি, অর্থনীতি বিষয়ে পড়া ছাড়া জীবনে ভালো কিছু করা যায় না। এটা একদমই ভুল। বর্তমান সময়ে বেশি লাগে সৃজনশীলতা এবং নেটওয়ার্কিং দক্ষতা।

এখন তাই কোন বিষয়ে আপনি পড়ছেন তার চেয়ে বেশি দরকার হচ্ছে- নিজেকে দক্ষ করতে পারছেন কি না? দক্ষতার মধ্যে প্রধান কাজগুলো হলো- সহযোগিতা ও দলীয় কাজ, কল্পনা ও সৃজনশীলতা, ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’ এবং সমস্যা সমাধানের পটুত্ব। মূলকথা হলো আপনি যেকোনো বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েও এই দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। তাহলে আপনি কোন বিষয়ে পড়বেন?

আপনার যে বিষয়টা পড়তে ভালো লাগে। যেটা আপনি সহজেই আয়ত্ত করতে পারেন। যে বিষয়টা নিয়ে আপনার মাথায় সব সময় কাজ করে সেটা যে বিষয়েই হোক আপনি সেটাকে
নিয়েই ভাবুন। এছাড়া বাড়তি কিছু ভাবার প্রশ্নই আসে না। আপনি তুলনামূলক সাহিত্য, প্রকৌশল, আইন তত্ত্বীয় বা যেকোনো বিষয়ে একেবারে গভীরে যেতে পারেন কোনো অসুবিধা নেই। এতে আপনার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে। আমাদের প্রধান সমস্যা হলো কি জানেন? আমরা যেকোনো কাজ বা যেকোনো বিষয়কে ভিন্ন চোখে বা ছোট করে দেখি। এটা আমাদের এক ধরনের মূর্খতা বা অজ্ঞতা। এ অজ্ঞতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

রসায়নের আমার এক শিক্ষক প্রায় সময় ক্লাসে বলতেন, অনার্স হচ্ছে আনারস। আনারসকে যেমন চাপলে রস বের হয় আর অনার্সের বিষয়কেও তুমি ভালোভাবে পড়লে ভালো রস অর্থাৎ জ্ঞান আহরণ করা যায়। তুমি যা পড়ছো সেটির গভীরে যাও, সেটির সর্বোচ্চ রস আস্বাদন করো। কারণ, সেটি তুমি ভালোবাসো। যেটা তুমি বেশি ভালোবাসো সেটাকে নিয়ে তুমি বেশি ভাবো বা সেটার ভিতরে প্রবেশ করো তাহলে দেখবে সেটা তোমার অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে।

এরই মধ্যে আপনি হয়তো ভাবছেন, বিশ্বে এখন তথ্যপ্রযুক্তি আর প্রোগ্রামারদের জয়জয়কার। সে ক্ষেত্রে কেমিস্ট্রি বা গণিত পড়ে কি তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবো? অবশ্যই পারবে। বাংলাদেশে এখন এমনও বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে পড়তে পড়তেই সবার চাকরি হয়ে যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সব ডিসিপ্লিন কিন্তু এখন ওপরে উঠে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে দেশে এমন লোক খুঁজছে, যারা সমস্যার সমাধানে যেমন দক্ষ তেমনি সৃজনশীলও।

আপনি হয়তো এমন কিছু পড়তে চাচ্ছেন, যেটা এ দেশে পড়ার সুযোগ নেই। আপনি আপনার পছন্দের বিষয়ের কাছাকাছি কোনো বিষয়ে ভর্তি হয়ে ইন্টারনেটেই কাঙ্ক্ষিত বিষয় জেনে নিতে পারেন এবং হাজির হতে পারেন ভাইভা বোর্ডে।

অনেকেই নিজের পছন্দের বিষয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে না। এতে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনি যে বিষয় পেয়েছেন বা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন সে বিষয় আর বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যয়ন চালিয়ে যান। মন ঘাবড়ানোর কিছু নেই। পড়াশুনা শেষে যখন আপনি চাকরির ভাইভা বোর্ডে যাবেন, তখন কেউ আপনার কাছে পঠিত বিষয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জানতে চাইবে না। তারা আপনাকেই জানতে চাইবে।

জানেন তো এ পৃথিবীতে যারা অমর হয়ে আছেন বা উচ্চ স্থানে পা রেখেছেন তারা সবাই পরিশ্রম ও দক্ষতার দ্বারাই হয়েছেন। আপনি আপনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কে স্থির করে দক্ষিত ও সৃজনশীল মনোবিকাশ বাড়ান। সততা আর সাহসিকতা নিয়ে চলুন। তাহলে আমি মনে করি আপনিও সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। আপনিও অমর হয়ে থাকবেন এই পৃথিবীতে।


লেখক: এম শরীফ আহমেদ, সমাজকর্মী, তরুণ লেখক ও সাংবাদিক

খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: