শিক্ষকের বেতের আঘাতে চোখ হারাতে বসেছে এসএসসি পরীক্ষার্থী
দিনাজপুরের নবাগঞ্জে শিক্ষকের বেতের আঘাতে চোখ হারাতে বসেছে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। এই ঘটনায় শনিবার (২১ জুলাই) রাতে নবাবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক পলাতক রয়েছে।
আহত ছাত্রের নাম মো: আশিকুর রহমান (১৫)। সে নবাবগঞ্জ উপজেলার দাঊদপুর কলেজ পাড়া গ্রামের মো: তোফায়েল আহমেদ বাবুর ছেলে ও নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের হেমায়েতপুর চাইল্ড কেয়ার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র।
অভিযোগ রয়েছে এই স্কুলটির দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি নেই। তার পরেও তারা অবৈধ ভাবে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করছেন।
জানা গেছে, চাইল্ড কেয়ার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে প্রধান শিক্ষদের অলিখিত নির্দেশ রয়েছে কোন ছাত্র একদিন স্কুলে না আসলে তাকে দশটি বেতের আঘাত করার। ছাত্র মো: আশিকুর রহমান অসুস্থতার কারণে গত ১৬ জুলাই স্কুলে যেতে পারেনি। এ কারণে ১৭ জুলাই তাকে স্কুলে গেলে শিক্ষক মানিক মিয়া বেত দিয়ে প্রহার শুরু করে। এক পর্যায় বেতের আঘাত আশিকুর রহমানের ডান চোখে লেগে যায়। এতে তার চোখ দিয়ে রক্ত ঝড়তে শুরু করলে তাকে দ্রুত বিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেদিনই তাকে চক্ষু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চক্ষু ওয়ার্ডের চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক হারিসুল ইসলাম হিরু চোখে দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাত্র মো: আশিকুর রহমানকে ঢাকায় রেফার্ড করেন।
এ ব্যাপারে চক্ষু ওয়ার্ডের চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক হারিসুল ইসলাম হিরুর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ছাত্র মো: আশিকুর রহমানের ডান চোখের আঘাত গুরুত্বর। তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। চোখ ভাল হবে কি না তা নিশ্চিত করে কলা সম্ভব নয়। এজন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ওই ছাত্রের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, মো: আশিকুর রহমানকে ঢাকায় হারুন আই ফাউন্ডেশন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসক বিদেশে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে। তার চোখের আইরিশ/রেটিনা বেতের তীব্র আঘাতে ছিটকে বেরিয়ে গেছে। তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে।
ছাত্র নির্যাতনের বিষয় জানতে চাইলে শিক্ষক আকরাম হোসেন বাবলু ও শিক্ষক আনোয়ার সাদত মন্ডল বলেন, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে শিশুর ওপর নির্যাতন বা নৃশংস, অমানবিক, মর্যাদাহানিকর আচরণ বা নির্যাতন না করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। ২০০৮ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশব্যাপী আদেশ প্রদান করে। এ বিজ্ঞপ্তির ৩নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে দেশের প্রচলিত নারী নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ আইন অনুযায়ী শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থী নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশ্বের সব দেশেই এ আইন কঠোরভাবে মানা হয়। মূলত শিক্ষা, শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এ শব্দগুলোর সঙ্গে নির্যাতন নামক কোন শব্দই জড়িত থাকা উচিত নয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নবাবগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ সুব্রত কুমার সরকার বিডি২৪লাইভকে জানান, ৩২৩ ও ৩২৬ ধারায় মামলা হয়েছে। মামলা আসামি শিক্ষক মানিক মিয়া পলাতক রয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।
এদিকে একটি সূত্রে জানা যায়, স্কুলটিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু তারা দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে পড়াচ্ছেন। এই ছাত্রদেরকে অন্য স্কুলের সঙ্গে মোটা অংকের টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করানো হয়ে থাকে। এতে করে যে স্কুল থেকে রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করা হয় সে সব স্কুলের পাশের হার ঠিক থাকে। অপরদিকে পাঠদানের অনুমতি বিহীন স্কুল গুলো পায় মোটা অংকের টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইল্ড কেয়ার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল কেঁটে দেন।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: