সেই মডেল কন্যার বয়ফ্রেন্ডের রহস্যজনক মৃত্যু!
বিল্লাল হোসেন রবিন: নারায়ণগঞ্জে নিহত মডেল কন্যা মাহমুদা আক্তারের বয়ফ্রেন্ডের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার নাম সাগর ইসলাম বাপ্পি (৩৬)। সে মুন্সীগঞ্জের সদর থানার মীরকাদিম পৌরসভার রিকাবীবাজার পূর্বপাড়ার জহিরুল ইসলামের ছেলে। তার মায়ের নাম দেলোয়ারা ইসলাম। সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার গোগনগর এলাকায় তালাবদ্ধ ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে মাহমুদার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হওয়ার একদিন পর মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে বাপ্পির রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পরিবার তড়িঘড়ি করে তার দাফন সম্পন্ন করে।নিহত বাপ্পির পারিবারের দাবি, স্ট্রোক করে বাপ্পি মারা গেছে। কিন্তু কেউ কেউ বলছেন বাপ্পি আত্মহত্যা করেছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিহত মাহমুদার বয়ফ্রেন্ডকে শনাক্ত করা গেছে। সে নারায়ণগঞ্জে থাকতো। তবে তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। কিন্তু পরে জানতে পারলাম মাহমুদার বয়ফ্রেন্ড মারা গেছে। আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এবং সে কীভাবে মারা গেছে তা জানতে থানা থেকে লোক পাঠাবো মুন্সীগঞ্জে।
মুন্সীগঞ্জের রামপাল (হাতিমারা) তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ জিল্লুর রহমান জানান, আমরা শুনেছি রিকাবীবাজার পূর্বপাড়ায় বাপ্পি নামে একজন স্ট্রোক করে মারা গেছে। এর বেশি কিছু তিনি জানাতে পারেননি। এদিকে নিহত মাহমুদার বাবা আক্কাস আলী মঙ্গলবার রাতে বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। সূত্র মতে, মাহমুদা ও বাপ্পি দু’জনেই বিবাহিত। মাহমুদার এক কন্যাসন্তান ও বাপ্পির দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি মেগাশপে কাজ করার সুবাদে তাদের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি হয়। এক সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সূত্র ধরে দু’জনেই ওই প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে দেয়। মাহমুদা মডেলিং ও অভিনয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মিশনে নামেন। স্ত্রীর অগোচরে বাপ্পি মাহমুদাকে মানসিক সাপোর্ট দেয়। তারা দু’জনে বিভিন্ন স্থানে ঘুরেও বেড়ায়। এরই মধ্যে মাহমুদা কয়েকটি শর্ট ফ্লিমে কাজও করেছেন।
তার সঙ্গে আরো নতুন নতুন বন্ধুর সম্পর্ক হয়। এদিকে বাপ্পি সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ শহরের চষাড়া বালু মাঠে ‘ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন’-এ গত রমজান মাসজুড়ে সেলসম্যানের চাকরি করেছে। ঈদের পর মাহমুদা ও বাপ্পি গোপনে নারায়ণগঞ্জ শহরের গোগনগরের আলামিন নগর এলাকার মোহাম্মদ আলী আকবরের বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করে। এক পর্যায়ে ৩০শে জুলাই রাতে ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ভেতর থেকে মাহমুদার লাশ উদ্ধার করে।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এই ফ্ল্যাট যারা ভাড়া নিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে তেমন দেখা সাক্ষাৎ হতো না। কথাও হতো না। তাই তারা কে কি করেন, নাম কি, কিছুই তারা জানতে পারেননি।
মাহমুদার ছোট বোন শাহিদা জানান, ‘গত বুধবার বাবার সঙ্গে আপুর ফোনে কথা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার থেকে আপুর ফোন বন্ধ। সবার ধারণা বৃহস্পতিবারই আপুকে হত্যা করা হয়েছে।’
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয়দের সূত্র মতে, মাহমুদার বাবা আক্কাছ আলী নাগবাড়ি এলাকার ডায়াবেটিস হাসপাতালের একজন নিরাপত্তা প্রহরী। মডেলিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চাওয়া মাহমুদা ছিলেন অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী। তার জীবনযাপনও ছিল সেই ধরনের। স্বামী হাবিবের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বিভিন্ন ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন তিনি। বেশ কয়েকটি শর্টফ্লিমেও কাজ করেছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন শুটিং করতে গিয়ে। আড্ডাও ছিল ছেলেদের সঙ্গে। পরিবার থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। যার কারণে মা-বাবাসহ পরিবারের কেউই তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেননি।
নিহত মাহমুদার মা সুফিয়া বেগম জানান, ২০১৩ সালে মাহমুদার একটি বিয়ে হয়। এক বছর পর যৌতুকের দাবিতে স্বামী হাফিজুর রহমান মাহমুদাকে নির্যাতন করলে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। ওই সময় তাদের সংসারে জন্ম নেয় রিয়ানা রহমান জারা। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে মেয়ে রিয়ানা রহমান জারাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করছিল মাহমুদা। নিজের ও মেয়ের খরচ জোগাড় করতেই চাকরি শুরু করেন।
তিনি জানান, জারাকে এ বছর প্লে গ্রুপে শেরেবাংলা একাডেমিতে ভর্তি করে দেয় তার নানা। তাছাড়া পাশের বাসার এক শিক্ষিকা তাকে পড়ায়। জারাও পড়ালেখায় খুব ভালো। এখন এ মেয়েটার কি হবে। জন্মের পর বাবা ছেড়ে গেছে। এখন মাকে হারালো। তার ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার।
এদিকে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নে মাহমুদা বেপোরায়া হয়ে উঠেন। যার পরিণতিতে তিনি লাশ হয়েছেন। এবং তিন-চারদিন আগেই তাকে হত্যার পর লাশ তালাবদ্ধ রেখে ঘাতক পালিয়ে যায়। এছাড়া আরো জানা যায়, মিডিয়ার কল্যাণে মাহমুদার সঙ্গে আরো অনেক ছেলের সখ্য গড়ে উঠে। যাদের সঙ্গে তিনি শুটিংয়ের বদৌলতে দেশের বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বন্ধুদের সঙ্গে তার মোজ-মাস্তির অনেক ছবি নিজের ফেসবুক আইডিতে আপলোড দিয়েছেন বিভিন্ন সময়। তবে তার ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা যায়, ৩রা জুলাইয়ের পর ২০শে জুলাই তিনি তার তিনটি ছবি আপলোড দিয়েছেন। এবং ২৬শে জুলাই তাকে ফেসবুকে অ্যাকটিভ দেখা যায়। এরপর তাকে আর ফেসবুকে অ্যাকটিভ দেখা যায়নি। ৩০শে জুলাই রাতে নিজের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ মাহমুদার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে ২৬শে জুলাইয়ের পর যেকোনো সময়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
সূত্র মতে, ২০১৬ সালে মাহমুদা আক্তার শহরের উকিলপাড়ায় মেগাশপ ‘টপটেন’ এ কাজ নেন। খুব অল্প সময় কাজ করেন বলে জানায় সেখানকার ইনচার্জ জানে আলম।
তিনি বলেন, মাহমুদা আক্তার নারায়ণগঞ্জ টপটেন শাখার প্রথম নারী বিক্রয়কর্মী ছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালের প্রথম কয়েক মাস কাজ করে নিজেই রিজাইন করেন। মাহমুদা টপটেনের আন্ডার গার্মেন্ট বিভাগে কাজ করতেন। সেখান থেকে রিজাইন করার পর আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এমনকি সহকর্মীদের ফেসবুকও ব্লক করে দেন।
টপটেনে কর্মকালীন মাহমুদার সহকর্মী নিপা জানান, মাহমুদা চুপচাপ নিজের কাজ করতেন, কারো সঙ্গে বেশি আলাপ তার পছন্দ ছিল না। মাহমুদা খুব বেশি শিক্ষিত না। মর্গান স্কুলে পড়ালেখা করেছিলেন। ক্লাস সিক্সের পর আর পড়াশোনা করেননি।
এদিকে মাহমুদার ফেসবুক আইডিতে কিছু ছবির মধ্যে অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানো ও আড্ডার অসংখ্য চিত্র পাওয়া গেছে। তার ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা যায় ৩রা জুলাইয়ের পর ২০শে জুলাই তিনটি ছবি আপলোড দিয়েছেন। এবং ২৬শে জুলাই তাকে ফেসবুকে অ্যাকটিভ দেখা যায়। এরপর তাকে আর ফেসবুকে অ্যাকটিভ দেখা যায়নি। এর আগে সর্বশেষ ১৮ই জানুয়ারি নিজের আইডিতে প্রোফাইলে মেয়ের সঙ্গে নিজের একটি ছবি আপডেট দেন।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনে অভ্যস্ত মাহমুদার মোবাইলের কললিস্ট চেক করলেই হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে।
বিডি২৪লাইভ/এমআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: