মডেল কন্যার লিভ টুগেদার, এতিম ৩ সন্তান

প্রকাশিত: ০৩ আগষ্ট ২০১৮, ০৮:৫২ এএম

বিল্লাল হোসেন রবিন: মডেল কন্যা মাহমুদার বয়ফ্রেন্ড সাগর ইসলাম বাপ্পি। মাহমুদার স্বামী ও এক সন্তান আর বাপ্পির স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। মাহমুদার বাসা নারায়ণগঞ্জে হলেও বাপ্পির স্ত্রী-সন্তান থাকতো মুন্সীগঞ্জে। তবে সাগর কাজ করতো নারায়ণগঞ্জে। একটি মেগাশপে কাজের সূত্র ধরে মাহমুদার সঙ্গে বাপ্পির পরিচয়।  এক সময় তারা পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। ভেঙে যায় মাহমুদার সংসার।

তার একমাত্র কন্যা নানীর বাড়িতে  থেকে যায়। অন্যদিকে বাপ্পি পরিবারের অগোচরে নারায়ণগঞ্জে মাহমুদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়। এরই সূত্রধরে মাহমুদা ও বাপ্পি দুই পরিবারের অজান্তে গোপনে নারায়ণগঞ্জের গোগনগরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। সেখানে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে লিভ টুগেদার করে। কিন্তু বেশিদিন তাদের সুখ স্থায়ী হয়নি। মাত্র এক মাস ২০ দিনের মাথায় ৩০শে জুলাই রাতে তালাবব্ধ ওই ফ্ল্যাট থেকে মাহমুদার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অন্যদিকে ৩১শে জুলাই মারা যায় বাপ্পি। তাদের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে দুই পরিবারের অবুঝ তিন সন্তান এতিম হয়ে গেছে। নিহত মাহমুদা নারায়ণগঞ্জ শহরের নাগবাড়ী এলাকার আক্কাস মিয়ার মেয়ে এবং বাপ্পি মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভার রিকাবীবাজার পূর্বপাড়া এলাকার জহিরুল ইসলামের ছেলে।

সূত্রমতে, ২০১৬ সালের মাহমুদা আক্তার শহরের উকিলপাড়ায় মেগাশপ ‘টপটেন’ এ কাজ নেয়।  সে ছিল ওই সময়ে টপটেন শাখার প্রথম নারী বিক্রয়কর্মী। এর ক’মাস পর সেখানে চাকরি নেয় সাগর ইসলাম বাপ্পি। এক সঙ্গে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হয়। এক সময় এই ঘনিষ্ঠা পরকীয়া প্রেমে রূপ নেয়। দু’জনের মধ্যে মন দেয়া নেয়া চলে। ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করা অবস্থাই মডেলিং ও অভিনয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠে মাহমুদা। তাকে মানিসক সাপোর্ট দেয় বাপ্পি। এরই মধ্যে  ২০১৭ সালের প্রথম কয়েক মাস কাজ করেই নিজেই রিজাইন করে মাহমুদা। 

মাহমুদা টপটেনের আন্ডার গার্মেন্টস বিভাগে কাজ করত। সেখান থেকে রিজাইন করার পর আর ওখানের কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। এমনকি কাজের সহকর্মীদের ফেসবুকও ব্লক করে দেয়। উচ্চাবিলাসী মাহমুদার সঙ্গে অল্পদিনেই অনেক ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। শুটিংয়ের বদৌলতে সে দেশের বিভিন্ন লোকেশনে ঘুরে বেড়ায় এবং আড্ডা দেয়। এদিকে মাহমুদা তার সন্তানেরও তেমন একটা খোঁজ নিতো না। স্বামী হাফিজুর রহমানের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর তার শিশুকন্যা জারা নানীর বাসায় বড় হতে থাকে। সাগর ইসলাম বাপ্পি মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভার

রিকাবীবাজারের পূর্বগ্রামে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে নারায়ণগঞ্জে চাকরির সুবাদে মাহমুদার সঙ্গে রঙ্গলীলায় মেতে উঠে। যা তার পরিবার জানতো না। সবশেষ সে গত রমজান মাসে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া বালুর মাঠে ‘ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড’ এ এক মাস সেলসম্যানের চাকরি করে। ঈদের পর দুই পরিবারের অজান্তে মাহমুদা ও বাপ্পি গোগনগরে গোপনে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। এবং স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করে। তাদের রঙ্গলীলা একসময় দু’জনের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাহমুদাকে খুন করে ঘাতক ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে সটকে পড়ে। 

হায়রে পরকীয়া, হায়রে প্রেম! রঙ্গলীলা মানুষকে এতো অমানুষ করে তোলে তা দেখা গেছে শহরের গোগনগরে মডেল মাহমুদা আক্তার ও তার বয়ফ্রেন্ডের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে মাহমুদার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আর মাহমুদার লাশ উদ্ধারের একদিন পর মারা যায় তার বয়ফ্রেন্ড সাগর ইসলাম বাপ্পি। যদিও পরিবার দাবি করছে বাপ্পি স্ট্রোক করে মারা গেছে। তবে কেউ কেউ বলছে সে আত্মহত্যা করেছে। আবার কারো মতে, মাহমুদার লাশ উদ্ধারের খবর হয়তো তাকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল, যা সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করেছে। সে যা-ই হোক। পুলিশের তদন্তে সব পরিষ্কার হবে। নিহত মাহমুদার পাঁচ বছরের ফুটফুটে একটি মেয়ে। নাম- রিয়ানা রহমান জারা। অন্যদিকে তার বয়ফ্রেন্ড সাগর ইসলাম বাপ্পির দুই ছেলে। একজনের নাম মাসরিফ ইসলাম। বয়স সাত। 

ছোট ছেলের নাম ফারদিন ইসলাম। তার বয়স পাঁচ। দুই পরিবারের অবুঝ তিন সন্তান আজ এতিম। জারার বাবা থেকেও নাই। সে মাকেও হারিয়েছে। আর মাসরিফরা দুই ভাই বাবাকে হারিয়েছে। তবে জারা জানে না তার মা বেঁচে নেই। কিন্তু মাসরিফরা বুঝে গেছে তাদের বাবা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। এদিকে মাহমুদার লাশ উদ্ধারের একদিন পরই ৩১শে জুলাই বাপ্পির মৃত্যুর বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে সর্বত্র। কিন্তু প্রশ্ন যা-ই হোক মাহমুদা ও বাপ্পির পরকীয়ায় তাদের তিন সন্তান আজ এতিম। তাদের ভবিষ্যৎ আজ অন্ধকার। হয়তো আদরে-অনাদরে তারা একদিন বড় হবে। কিন্তু একজন ফিরে পাবে না তার মাকে আর দুইজন ফিরে পাবে না তাদের বাবাকে। নিষ্পাপ এই শিশুদের কোন অপরাধ ছিল না। শুধু বাবা-মায়ের পাপের প্রায়শ্চিত্তের শিকার হয়েছে তারা। সূত্র: মানবজমিন।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: