চেঙ্গিস খানের বিস্ময়কর সাফল্যের রহস্য!

প্রকাশিত: ০৬ আগষ্ট ২০১৮, ০৪:৩৪ পিএম

‘চেঙ্গিস খান’ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এক বিজেতার নাম। সমরকৌশলে তার সমকক্ষ জেনারেলের সংখ্যা পৃথিবীতে অতি নগন্য। ইতিহাসে আলেকজান্ডার, জুলিয়াস সিজার, হানিবল এবং নেপোলিয়নের মত শ্রেষ্ঠ সমরনায়কের সাথে উচ্চারিত হয় তার নাম। তিনি এককভাবে জয় করেছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অঞ্চল এবং একই সাথে হত্যা করেছিলেন প্রায় ৪ কোটি নিরাপরাধ মানুষ। মঙ্গোলিয়া থেকে শুরু করে চীন হয়ে সম্পূর্ণ মধ্য এশিয়া, রাশিয়া, বুলগেরিয়া ও ইউক্রেন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তার সুবিশাল সাম্রাজ্য। ধ্বংস, হত্যা, চাতুর্য, ক্ষমতা, লিপ্সা এবং রণকুশলতার এক অভূতপূর্ব মিশেলে গড়া চেঙ্গিস খানের জীবন কাহিনী যেন এক জীবন্ত ইতিহাস। চলুন জানা যাক তার এই ঐতিহাসিক সাফল্যের প্রকৃত কারণগুলো।

&dquote;&dquote;১. চেঙ্গিসের অসাধারণ নেতৃত্বগুণ: ১১৬২ সালে, জন্ম নেয়া চেঙ্গিস ছিলেন জন্মগত নেতা। তার পিতা ছিলেন একটি মোঙ্গল গোত্রের প্রধান। ছোটবেলায় বাবার মৃত্যুর পর, অবলীলায় পৃথিবীর নির্মম জীবন ও সংগ্রামে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। তরুণ অবস্থাতেই বুঝতে শেখেন রাজনীতি ও কূটনীতির জটিল সমীকরণগুলো। যার ফলে ট্রাইবাল লিডার হতে খুব বেশি সময় লাগেনি তার। সেখান থেকে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গোটা মঙ্গোলিয়ার রাজা হয়েছেন ৩৫ বছর বয়সে। ততোদিনে গোত্রীয় বিভক্তি দূর করে, পুরো দেশকে একটি নেতৃত্বের আওতায় আনতে সফল হয়েছিলেন এই অসাধারণ নেতা। অনুগত সৈন্যরা তাকে যেমন ভয় পেত তেমনি, শ্রদ্ধা ও ভক্তি করত।

&dquote;&dquote;২. দুর্দান্ত সমরকৌশল: যুদ্ধের বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি ও ট্যাকটিকস বিবেচনায় চেঙ্গিস খান সর্বকালের অন্যতম সফল মাস্টারমাইন্ড। জানতেন সৈন্য সাজানোর সবধরনের ফর্মেশান। প্রয়োজনের সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। রণক্ষেত্রে একাধিক ডাইভারসন তৈরি করার সক্ষমতা ছিল তার। যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশলগত অবস্থান নির্ণয় এবং সেই অনুযায়ী জিওগ্রাফিক্যাল সুবিধা আদায়ে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সবচেয়ে সমৃদ্ধ ছিল তার ওয়ার প্ল্যানিং এবং সময়মত তার প্রয়োগ করার দক্ষতা।

&dquote;&dquote;৩. প্রচন্ড গতি আগ্রাসী মনোভাব: চেঙ্গিস খান ও তার সেনাদল প্রচন্ডরকম গতিশীল ছিল। আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে দিনে তারা ৬০ থেকে ১০০ মাইল পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারত। দলে ভয়-ডর বলে কিছু ছিল না। চেঙ্গিস আক্রমণ করতে ভালোবাসতেন। প্রতিপক্ষকে সুযোগ না দিয়ে বিধ্বস্ত করতেন অতিদ্রুত। সারপ্রাইজ অ্যান্ড অ্যাটাক ছিল তার অন্যতম প্রধান অস্ত্র।

৪. তীরন্দাজদের অসাধারণ দক্ষতা: তৎকালীন বিশ্বে মোঙ্গল বাহিনীর চেয়ে ভয়াবহ তীরন্দাজ দল আর কোনো মিলিটারি বাহিনীতে ছিল না। চেঙ্গিস অশ্বারোহী তীরন্দাজ ব্যবহার করতেন বেশি। একাধিক ইউনিট ব্যবহার করা হত এই কাজে। সামনে পেছনে বিভিন্ন কায়দায় মোক্ষমভাবে তীর নিক্ষেপ করত তারা। ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে এতো নিখুঁতভাবে তীরন্দাজী করার সামর্থ ছিল না আর কোনো বাহিনীর। মাঝে মাঝে হেরে যাওয়ার ভান করে তীরন্দাজরা পশ্চাদপসরণ করত। মনে হত, তারা পরাজয় মেনে পালিয়ে যাচ্ছে। অথচ সেটা ছিল একটা কৌশলমাত্র। শত্রু ইউনিট আগ বাড়িয়ে পিছু ধাওয়া করতে গেলেই মোঙ্গল তীরন্দাজদের ভয়াবহ কাউন্টার অ্যাটাকের সামনে পড়ত।

৫. প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা: চেঙ্গিস খান ও মোঙ্গল বাহিনীর নাম শুনলেই সে আমলের সব রাজা ও শাসকরা আতংকিত হয়ে পড়তেন। কারণ, সুকৌশলে চেঙ্গিস খান প্রতিপক্ষের হৃদয়ে তার ভয় তৈরি করার মত ধ্বংসযজ্ঞ চালাতেন প্রতিটি অভিযানে। এক একটি দেশ ও শহর জয়ের পর এমনভাবে মানুষ হত্যা করা হত যে, রক্ত গঙ্গা বয়ে যেত। বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হত। গণহত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, নির্বিচার লুন্ঠন ও পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে গোটা পৃথিবী জুড়েই আতংক তৈরি করেছিলেন চেঙ্গিস খান। বেইজিং শহর, সমরকন্দ, মারভ বা তুর্কমেনিস্তানে তার অভিযানের পর সমগ্র এলাকা মৃত্যুপূরীতে পরিণত হয়েছিল। এরকম বীভৎস ও বর্বর আক্রমণে প্রতিপক্ষের হৃদয়ে স্বাভাবিকভাবেই চেঙ্গিস ও মোঙ্গল আতংক কাজ করত।

৬. সুশৃঙ্খল সেনাদল: সেনাদলের চেইন অব কম্যান্ড ঠিক রাখতে চেঙ্গিসের স্ট্র্যাটেজি ছিল অসাধারণ। তাদের বিভিন্ন ইউনিটে সাজানো, নিয়মিত ট্রেইনিং দেয়া, বিভিন্ন ফর্মেশানে অ্যভস্ত করার পাশাপাশি পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রতাপশালী সেনাদলে পরিণত করেছিলেন চেঙ্গিস। সবার গোত্রীয় ও জাতিগত বিভেদ দূর করেছিলেন ব্যক্তিগত ক্যারিশমায়। তার অশ্বারোহী, তীরন্দাজ, পদাতিক সব বাহিনীই ছিল প্রচন্ড রকমের আনুগত্যশীল ও সুশৃঙ্খল। যার ফলে শত্রুর উপরে প্রাধান্য বিস্তার করা ও জয় ছিনিয়ে আনা ছিল সময়ের ব্যাপার। সেই সাথে চেঙ্গিস ও তার সেনাপতিদের নিজস্ব দক্ষতা ও পারদর্শীতা তো ছিলই।

এছাড়া বর্বরতা, নিষ্ঠুরতাকেও তার সাফল্যের কারণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে তৎকালীন পৃথিবীর ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং প্রতিপক্ষ শক্তিগুলোর অনৈক্যও মোঙ্গলদের করে তুলেছিল অজেয় ও অপ্রতিরোধ্য। ইতিহাসে বিভিন্নভাবে চেঙ্গিস খানের সাফল্যের কারণগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে, তবে উপরোক্ত বিষয়গুলো মোটামুটিভাবে কমন রিজন হিসেবে উল্লেখ করেছে হিস্টোরিক্যাল সোর্সগুলো।

হিস্টোরিইয়ুথ ডটনেট

বিডি২৪লাইভ/এএআই/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: