ক্রেতাশূন্য ময়মনসিংহের চামড়ার বাজার
ঈদুল আজহার পর এই সময়টায় দিনরাত সরগরম থাকার কথা ময়মনসিংহের বৃহৎ চামড়া ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র শম্ভুগঞ্জ চামড়ার হাট। অথচ এবার তার পুরোপুরি ব্যতিক্রম। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত কোরবানির চামড়া নিয়ে এসে স্তুপ করে রেখেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিক্রির জন্য ক্রেতা পাচ্ছেননা। ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে পুরো চামড়ার বাজার।
ত্রিশ/চল্লিশ বছরের মধ্যে এবছর কোরবানি মৌসুমে সবচেয়ে কম দাম এবং চাহিদা হীন পন্যে পরিণত হয়েছে চামড়া। লবনের দাম বেশি, চাহিদা অপ্রতুল, বড় ট্যানারি ব্যবসায়ীদের নাক সিটকানো ভাবের পাশাপাশি বাজারে ক্রেতার অভাব থাকায় কোরবানি পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ব্যবসায়ীরা।
দু’একজন ট্যানারি মালিক ও সাধারণ ব্যবসায়ী বাজারে আসলেও দাম বলছে প্রতি পিসে ক্রয় দামের চেয়ে ৩ থেকে ৪শ টাকা কমে। ফলে বড় অংকের লোকসানে পড়বার আতঙ্কে আছেন সুদে টাকা ধার নিয়ে চামড়া কেনা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্থায়ী ব্যবসায়ীরাও। ঈদের বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও মাঠ থেকে ক্রয়কৃত চামড়া বিক্রি করতে পারছেননা ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় চলতে থাকলে চোরাই পথে পাশের দেশে চামড়া পাচার হয়ে যাবার পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ীই পথে বসার আশংকা করছেন। ময়মনসিংহের চামড়ার বাজার ঘুরে এমন তথ্য মিলেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কেউ চামড়া ক্রয় করেনি। মাঠ পর্যায়ে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ষাঁড়গরুর কাঁচা চামড়া ৩০০ থেকে ৬০০টাকায় বিক্রি হয়েছে। গাভী গরুর যেকোন ধরণের চামড়া ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছেন কোরবানির মালিকরা। খাসির চামড়া প্রতিপিস ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছাগলের চামড়া বিনা পয়সায়ও অনেকে ক্রেতাকে গছাতে পারেননি।
মুক্তাগাছার হোসেন আলী নামের একজন জানান, তিনি ৭০ হাজার টাকা দামের কোরবানি ষাঁড়ের চামড়া মাত্র ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। আব্দুল আজিজ নামের একজন জানান, তিনি ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা দামের একটি ষাঁড় গরুর চামড়া মাত্র ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। হারেজ আলী নামের একজন বলেন, তিনি ১৭ হাজার টাকা দামের একটি খাসির চামড়া মাত্র ৩০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, চামড়ার দাম না থাকায় গরীব লোকজন যারা চামড়া বিক্রির পয়সা পেয়ে থাকে তারা এবার বঞ্চিত হয়েছেন।
শম্ভূগঞ্জ চামড়া বাজার ইজারাদার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, দেশের বৃহত্তম চামড়ার বাজারগুলোর অন্যতম ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ চামড়ার বাজার। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলা ছাড়াও সিলেট বিভাগের অনেক জেলা থেকে পাইকার, ফরিয়ারা চামড়া বিক্রির জন্য আসেন এই বাজারে। প্রতি কোরবানি ঈদে কয়েক লাখ পিস গরু ছাগলের চামড়া কেনাবেচা হয় এখানে। আর এই এলাকার প্রায় ৫শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন। যারা এখানে চামড়া ক্রয়-বিক্রয় করেন।
তিনি আরো বলেন, বাজারে ক্রেতা এবং বিক্রেতা সমাগম ঘটাতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের থাকা খাওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি খাজনা কম মূল্যে নির্ধারণ করা হয়েছে।
শনিবার শম্বুগঞ্জ বাজারে চামড়া বিক্রি করতে আসা মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, তিনি ৫ লাখ টাকা ধার করে প্রতিবারের ন্যায় এবারও চামড়া কিনেছেন। কিন্তু বাজারে এসে বসে থেকেও চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, দেখেন সারা বাজারে কোন ক্রেতা নেই। ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনছেন না। তিনি অভিযোগ করেন, ট্যানারি মালিকদের কেউ কেউ সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত লোকজন দিয়ে কিছু কিছু চামাড়া সংগ্রহ করছেন। এতে আমাদের মত ব্যবসায়ীরা যারা বছরের এই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকি তাদের মহাবিপদ হয়েছে।
আলী আকবার নামের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি ৯ লাখ টাকার চামড়া ক্রয় করে বাজারে নিয়ে এসেছেন কিন্তু ক্রেতা না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না। তিনি বলেন, কম-বেশি দূরে থাক কেউ কোন দামই করছেন না। কিভাবে বিক্রি করবো? এবার চামড়ায় লোকশান হবার সম্ভাবনা শতভাগ নিশ্চিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন অপেক্ষায় আছি শেষ পর্যন্ত কত টাকা লোকশান গুণতে হয়। তিনি আশংকা করে বলেন, এঅবস্থায় থাকলে চোরাই পথে চামড়া বিদেশে পাচার হয়ে যাবে।
পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ী রঞ্জিত রবিদাস বলেন, তিনি সুদে ধার নিয়ে ১৫ লাখ টাকার চামড়া কিনেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এভাবে ব্যবসা করে আসছেন। এখন তিনি মহাবিপাকে পড়েছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মনে হয় টাকা খাটিয়ে কোন নিষিদ্ধ পন্যের ব্যবসা করছি। চামড়ার যেন কোন দামই নেই। এই চামড়া বিক্রি করতে না পারলে তার বাঁচার কোন পথ থাকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ত্রিশাল উপজেলা থেকে আসা চামড়া বিক্রেতা নারায়ন চন্দ্র দাস বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত। এবছর ২০লক্ষ টাকার চামড়া ক্রয় করেছি সুদে টাকা নিয়ে। চামড়া কম দামে ক্রয় করলেও লবণের দাম এবং যাতায়াত ভাড়া বেশি হওয়ায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। চামড়া প্রতি ৩০০-৪০০ টাকা কম বলছে পাইকাররা। ঋণের বোঝা কিছুটা হালকা করতে বাধ্য হয়েই কম দামে চামড়া বিক্রি করতে চাচ্ছি কিন্তু তাও ক্রেতা পাচ্ছিনা।
শেরপুর থেকে আসা চামড়া বিক্রেতা মজিবুর রহমান জানান, প্রতিটি চামড়া কিনার পর লেগে থাকা মাংস ছাড়ানো জন্য খরচ হয় ১০০ টাকা, লবণ ১৫০ টাকা, জমা দিতে হয় ৬০ টাকা তারপর আবার যাতায়াত ভাড়া। এতে ৬০০ টাকার চামড়ায় প্রায় খরচ পরে ১০০০ টাকা। কিন্তু বাজারে আসলে পাইকার পাইনা। যাও দুই একজন আছেন তারা দাম বলছেন ৬০০-৭০০ টাকা। এই অবস্থায় চামড়া কিনে এবার বড় বিপদেই পড়তে হয়েছে।
শম্ভূগঞ্জের বৃহত্তম এই চামড়া বাজারে সপ্তাহের শনি এবং মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া ক্রয় বিক্রয় করতে আসেন ব্যবসায়ীরা।
বিডি২৪লাইভ/এমকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: