ইভিএমে যে ষড়যন্ত্র দেখছেন বি.চৌধুরী

প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২৮ পিএম

ভোট চুরি এবং মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে সরকার ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী)।

শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি আয়োজিত ‘গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার: প্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বিকল্প ধারার প্রতিষ্ঠাতা বি. চৌধুরী বলেন, ‘শেষপর্যায়ে এসে কত লাখ বা কোটি ভুয়া ভোটার তারা তৈরি করেছে তা আমরা জানি না। আমরা ওইদিকে যায়নি। আমরা তো ইভিএম নিয়ে মেতে আছি।’

‘ইভিএমে দুই ধরনের ষড়যন্ত্র আছে। একটি হলো- ভোট চুরির ষড়যন্ত্র। অপরটি হলো- মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিয়ে রাত-দিন খালি ইভিএম নিয়ে পড়ে থাকা, আর ভুলে যাও ছেলে-মেয়ে ও বাচ্চাদের ওপর যেসব জুলুম হয়েছে।’

‘তরুণ ভোটাররা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে’- এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে জনসংখ্যা রয়েছে পাঁচ কোটি ১৬ লাখ। ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে যে জনসংখ্যা তারা ভোটবঞ্চিত ছিল। এবার তারা প্রথম ভোট দেবে।’

‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, যারা আন্দোলন করল, তাদের রামদা, হাতুড়ি, লাঠি দিয়ে পেটানো হল। তাদেরই গ্রেফতার করা হল। যারা পিটিয়েছে তাদের তো গ্রেফতার করা হয়নি। এসব ছাত্রের মা-বাবা আছে, এরা ভোটার। তারা কি এ স্বৈরাচার সরকারকে ভোট দেবে?’

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান ছিল বড় স্বৈরাচার। ১০ বছরের বেশি টেকেনি। দ্বিতীয় স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কত বছর টিকেছে? আশ্চর্যজনক, ১০ বছর টিকেছে। এখন যে স্বেচ্ছাচারী সরকার আছে তাদের মেয়াদও ১০ বছর। অনেক সহ্য করেছি, ১০ বছর হয়ে গেছে, এবার চলে যাও। আমার মনে হয়, এটাই আওয়ামী লীগের শেষ বছর।’

‘আমরা একটা কথা প্রায়ই শুনি, বাংলাদেশে নাকি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি হচ্ছে। বিদেশিদের সঙ্গে নাকি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অন্যরকমের সরকার, সংবিধানের বাইরের সরকারের জন্য। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, আমরা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশীদার নই। অসাংবিধানিক কোনো সরকারকে আমরা স্বীকৃতি দেব না। অগণতান্ত্রিক সরকারকে আমরা মেনে নেব না।’

তিনি বলেন, ‘এক স্বেচ্ছাচারীর পরিবর্তে অন্য স্বেচ্ছাচারীকে আমরা ক্ষমতায় আসতে দেব না। যারাই গণতন্ত্রের পক্ষে, আমরা তাদের সঙ্গে থাকব। শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা ছিল আমরা তাদের সঙ্গে যাব না, এটা পরিষ্কার। আমরা চাই এ সরকার নির্বাচনকালীনের জন্য একটি নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করবে। আমরা নির্বাচন বর্জনের কথা বলি না, সরকারকে বাধ্য করব নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করতে।’

দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমকে গ্রেফতারের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শহিদুল আলমের গ্রেফতার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে যখন এক রকম কথা বলেন, আবার তার (প্রধানমন্ত্রী) ভাগ্নি মুক্তি চান- এসব দেখে আমরা বিব্রত হই। আমরা অবিলম্বে শহিদুল আলমের মুক্তি চাই।’

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ৭২’র সংবিধানপ্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের পরিণতি আমরা দেখেছি। যারা দুই নম্বরি, তিন নম্বরি করেছে; ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে তাদের অবস্থান হয়েছে। ইতিহাস প্রমাণ করে, বাংলাদেশের জনগণ কখনও পরাজিত হয়নি। বড় বড় স্বৈরাচার আমরা দেখেছি, কেউ তাদের চিরস্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ যদি সঠিকভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়, যদি তারা নিজেদের ভোট নিজেরা দিতে পারে; তাহলে আমি মনে করি বাংলার মানুষ ভুল করবে না। তরুণ সমাজকে ভোট পাহারা দেয়ার জন্য বোঝাতে হবে, যাতে জাল ভোট কেউ দিতে না পারে।’

আ স ম রব বলেন, ‘যুক্তফ্রন্ট-গণফ্রন্ট মিলে যে ঐক্য হয়েছে আমরা এটাকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে নিয়ে যাব। স্বৈরাচার সরকার ও স্বাধীনতাবিরোধীরা ছাড়া বাংলাদেশের সবাইকে আহ্বান জানাবো আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য।’

মাহমুদুর রহমান মান্নার বাসায় সিভিল ড্রেসে ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) লোক যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারবিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যারা আছেন, আগামীতে যদি তাদের কারও বাসায় হামলা করা হয়, পরিণতি ভালো হবে না, ভয়াবহ হবে। আমরা জবাব দেব।’

‘আমরা অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ব্যবহার করা লোক। আমরা মাঠে নামবো, ঘরে বসে থাকব না। মিছিল হবে, মিটিং হবে, অনুমোদন না দিলে বসে পড়বো। কোনো অনুমোদন নেব না। সংবিধানের কোথাও লেখা নাই মিছিল-মিটিংয়ের জন্য অনুমোদন নিতে হবে।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ইভিএম মেশিন, যন্ত্রপাতির জন্য আগেই এলসি খুলে বসে আছেন। একনেকের অনুমোদন নাই, কোনো মন্ত্রিসভার বৈঠক নাই; কী করে এলসি খুললেন? কীভাবে অনুমোদন দিলেন? এটা ফোরটুয়েন্টির ব্যাপার। এরা সব লুটেরা, লাখ-লাখ, কোটি-কোটি টাকা লুট করেছে। এটা একটা লুটের প্রকল্প। একই সঙ্গে টাকাও লুট করবে, ভোটও লুট করবে।’

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: