অসুস্থ খালেদার বক্তব্যে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
গত মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) হালকা বেগুনি রঙের এক ধরনের শাড়ি পরে কারাগারের আদালতে আসেন খালেদা জিয়া। পায়ে সাদা জুতা। এ সময় তার বাম হাতসহ শরীরের নীচের অংশে একটি সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। চেহারায় অসুস্থতা আর যন্ত্রণার ছাপ ছিল স্পষ্ট। কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন বারবার।
দৃশ্যত বাম হাত একেবারেই নাড়াতে পারছিলেন না তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ওই অবস্থাতেই পরিত্যক্ত কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজির করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
আদালতে বিএনপি নেত্রী ছিলেন আঘা ঘণ্টার মতো। পুরোটা সময়ই হুইল চেয়ারেই বসেছিলেন ৭৩ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। কারাগারে এজলাস স্থাপন করায় খালেদা জিয়ার অসন্তোষও ছিল স্পষ্ট। আইনজীবীদের বক্তব্যের একপর্যায়ে সেই অভিব্যক্তিও প্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘আমাকে সাজা দেয়ার জন্যই এখানে আদালত বসানো হয়েছে। এখানে ন্যায়বিচার নেই। আপনাদের যা মন চায়, আমাকে যতদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দেন। আমি অসুস্থ বারবার আদালতে আসতে পারব না। আর এভাবে বসে থাকলে আমার পা ফুলে যাবে। আমার সিনিয়র কোন আইনজীবী আসেননি। এটা জানলে আমি আসতাম না। এই আদালত চলতে পারে না। এই আদালতে ন্যায়বিচারও হবে না।’
আদালতে করা বিএনপি চেয়ারপারসনের এমন মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, অপরাধী এবং পলায়নপর মনোবৃত্তি থাকাতেই তিনি (খালেদা জিয়া) বিচারের মুখোমুখি হতে চাচ্ছেন না।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন।
বাসসের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া গত ছয় মাসে একবারও আদালতে হাজির হননি এবং আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন তিনি আর আদালতে আসবেন না।’ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন ‘এটা কি ধরনের কথা, কোনো নাগরিক, যিনি আইন ও সংবিধান মেনে চলেন তিনি কি এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করতে পারেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ছয় মাসে কয়েকবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া একবারও এই মামলায় আদালতে হাজির হননি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রীর অপরাধী মানসিকতার জন্যই তিনি বিচার এড়িয়ে চলছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) পলায়নপর মনোবৃত্তি রয়েছে এবং সেভাবেই তিনি চলছেন, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার কোনো গোপন বিচার হচ্ছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আদালতের দরজা খোলাই আছে। কিন্তু বিএনপির আইনজীবীরাই যাননি সেখানে।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে আর কোনো মামলায় আদালতে হাজিরা দেননি খালেদা জিয়া। এ কারণে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি শেষ হতে পারছে না। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পর কারাগারেই আদালত বসানোর ব্যবস্থা হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর সেখানে বিএনপি নেত্রীকে হাজিরও করা হয়।
বিএনপি অভিযোগ করছে, ক্যামেরা ট্রায়াল (গোপন বিচার) করা হচ্ছে তাদের নেত্রীর। এটি সংবিধান বিরোধী।
প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) নড়াচড়া করতে অসুবিধা। সে ভেতরে থাকে সেখান থেকে জেলখানায় আসবে। তাই ওখানে কোর্ট বসবে।’
‘এটা ক্যামেরা ট্রায়াল নয়। পুরো দরজা খোলাই ছিল। তাদের কোনো কোনো আইনজীবী গেটে গিয়ে বসেছিল। কিন্তু কোর্ট রুমে ঢুকে নাই। তারা আশপাশে বসে ছিল।’
‘অবাধে সবাই যাতায়াত করতে পেরেছে এটা ক্যামেরা ট্রায়াল হলো কীভাবে?’-বিএনপির কাছে প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
কারাগারে আদালত বসানোকে অসাংবিধানিক দাবি করায় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে দলের জন্ম হয়েছে অসাংবিধানিক উপায়ে। সংবিধান লঙ্ঘন করে দল গঠনকারী যারা তার কাছে আমাদের সংবিধান শিখতে হবে।’
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে কারাগারে আদালত বসিয়ে কর্নেল তাহেরের বিচারের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তার মানে জিয়া অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিল বলে সে জেলগেটে বিচার করতে পারবে, বাকিরা পারবে না? তারা (বিএনপি) যদি সেটা বোঝাতে চায় তো বলুক।’
খালেদা জিয়ার মামলার শুনানিতে তার আইনজীবীরা আদালতে শুনানি করেননি। তবে একজন আইনজীবী পর্যযবেক্ষক হিসেবে ভেতরে গিয়েছেন। আর গণমাধ্যমকর্মীরাও সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। তারা খালেদা জিয়ার বক্তব্যও প্রচার করেছেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শুনানি হচ্ছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায়। গত ১ ফেব্রুয়ারি এই মামলার আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি ঠিক হয়েছিল। এই মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ আসার কথা।
আইনজীবীরা কেন গেলেন না, এই প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আমরা কী মনে করব? যে প্যানেল জানে খালেদা জিয়া দোষী? তাকে ডিফেন্ড করে খুব বেশি লাভ হবে না? তাই কোনো ছুতো ধরে তারা বোধ হয় তাকে আর ডিফেন্ড করতে চায় না?’
‘সাধারণ মানুষ এটাই ধরে নেবে। না হলে যেখানে কোর্ট বসবে সেখানে আইনজীবী যাবে। যেখানে জজ সাহেব বসবে মামলা পরিচালনা করতে হলে আইনজীবীরা সেখানে যাবে এটাই তাদের কাজ। তারা গেল না, খালেদা জিয়াকে বয়কট করল কেন?’
‘আইনজীবীরা জানে এই মামলায় তাকে (খালেদা জিয়া) নির্দোষ প্রমাণ করার মতো কোনো তথ্য তাদের কাছে নাই, তারা নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে না। মূলত তিনি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।’
প্রতিহিংসা থেকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে বিএনপির অভিযোগেরও জবাব দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘এখানে প্রতিহিংসার কী আছে? এতিমের টাকা তো আমরা খেতে চাই না। ভাগ ভাটোয়ারা করে যে ভাগে কম দিয়েছে তাই হিংসা করব?’
‘বলা হয়েছে টাকা রেখে দেওয়া হয়েছে। ৯১ সালে টাকা এলো এত বছর রেখে দেওয়া হলো। এতিমরা টাকা পেল না কেন? ২৫ বছর টাকা ব্যাংকে রেখে খালেদা জিয়া তার সুদ খেল। আপন মনে করে টাকা রেখে দিল।’
‘এতিমখানার যে জিয়া অরফানেজ নাম দিল এতিমখানা কই? তার ঠিকানা কই? ঠিকানাও দেখাতে পারেনি এতিমখানাও দেখাতে পারেনি।’
‘এতিমখানার নামে টাকা নিজে আত্মসাৎ করে বসে আছে। এতিমের টাকা চুরি করে কেউ জেলে গেলে তার দায়-দায়িত্ব কার?’
‘১০ বছর বসে তার আইনজীবীরা প্রমাণ করতে পারল না তিনি নির্দোষ। এ দোষটাও কী আমাদের সরকারের?’
বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: