খালেদার মুক্তির বিষয়ে যার সঙ্গে দেখা করতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:১৮ পিএম

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড পাওয়া বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন। সেখানে থাকা অবস্থায় গত ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর ছড়ায়।

এর পরদিন কারাগারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলেও সাক্ষাৎ করতে পারেননি। কারা কর্তৃপক্ষ কারণ হিসেবে খালেদার অসুস্থতার কথা জানায়। পরে সেদিনেই কারাগারে ঢাকার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক দল দেখে আসে বিএনপি নেত্রীকে।

আর ১ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার জন চিকিৎসককে দিয়ে গঠন হয় মেডিকেল বোর্ড। সেদিন কারাগারে গিয়ে তার নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

পরে ৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়। সেখানে পরীক্ষা নীরিক্ষা করার পর চিকিৎসক জানান, বেগম জিয়ার ঘাড়ে ও কোমরের হাড়ে কিছুটা সমস্যা আছে। তবে রক্তের রিপোর্টগুলো ভালো, স্বাভাবিক আছে।

কারাগারে নেয়ার পর থেকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়া অন্য কোনো মামলায় হাজিরা না দিলে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বসানো হয় আদালত। গত বুধবার আদালতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়া তার অসুস্থতার কথা জানান।

বিচারকের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘আমার হাতের অবস্থা ভালো না। ডাক্তার বলছে, পা ঝুলিয়ে রাখলে ফুলে যাবে। রিপোর্ট দেখলে বুঝতেন আমার শরীরের অবস্থা কী। সুতরাং আমি আর আসতেই পারব না।’

সেই ঘটনার দু’দিন পর আজ শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চায় বিএনপি।

এ জন্য দলটির পক্ষ থেকে আজ চিঠি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আজকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠাবো। আমরা তার সঙ্গে দেখা করে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার আহ্বান জানাবো। আমরা অবিলম্বে বেগম জিয়াকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে তার চিকিৎসা ও মুক্তির দাবি করছি।’

আজকের সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল খালেদার অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন অত্যন্ত অসুস্থ। আমাদের চিকিৎসক ও আইনজীবীরা এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে কথা বলেছেন। এটা আমাদের দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে। যেখানে বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের প্রশ্ন, বেঁচে থাকার প্রশ্ন, সুস্থ থাকার প্রশ্ন, সেখানে সরকার কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না।’

‘তার (খালেদার) পরিবারের সদস্যরা তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তারা এসে আমাদেরকে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে আমরা শুধু উদ্বিগ্নই নই, আমরা হতবাক ও বিষ্মিত যে এই সরকার তার চিকিৎসার জন্য কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত ৫ সেপ্টেম্বর হুইল চেয়ারে অনেকটা জোর করে তাকে সেই তথাকথিত বেআইনি আদালতে নিয়ে আসা হয়। তখন তিনি বলেছেন যে তিনি খুবই অসুস্থ, তাকে কোনো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তিনি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন। আমি আর এই আদালতে আসতে পারবো না। শারীরিক কারণে আমার পক্ষে আসা আর সম্ভব নয়। আমরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’

‘সরকার আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তাকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে পরিত্যক্ত কারাগারে স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাকে আবদ্ধ করে রেখেছে। একজন সাধারণ বন্দীর সঙ্গেও এ ধরণের আচরণ করা হয় না।’

আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া যেনো নেতৃত্ব দিতে না পারেন এবং জনগণ যেন তাদের পছন্দমতো ভোট দিতে না পারেন, সেজন্য সরকার খালেদার চিকিৎসার বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে বেআইনিভাবে তাকে সাজা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: