‘দোয়া করি শত্রুরও যেন এ অবস্থা না হয়’
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মমিন মিয়া। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। চিকিৎসকরা বলছেন হৃদরোগে আক্রান্ত তিনি। আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো নয়। ভিটে মাটি বলতে শুধুমাত্র বাড়ি ঘরসহ সামান্য কিছু জমি রয়েছে তার। তাতে তার চার সন্তানসহ ৬ জনের সংসার চলে না। নিজের জমির সাথে অন্যের জমিতেও চাষাবাদ করতেন তিনি। আর্থিক যে অবস্থা তা দিয়ে নামি দামি কোন হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ নেই। কিশোরগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা এসেছেন। উঠেছেন এক আত্মীয়ের বাসায়। গত চারদিন যাবত ভর্তি রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে ঢামেকের বেডে জায়গা হয়নি তার। জায়গা হয়েছে বারান্দায়, সেখানেই শুয়ে আছেন তিনি। বারান্দায় বসেই চিকিৎসা চলছে। টাকা ছাড়া মিলবে না বেড, চিকিৎসা নিতে হবে বারান্দাতেই।
রোগীর পাশেই বসে আছে তার মেয়ে মারিয়াম ও স্ত্রী শুকতারা খাতুন। মেয়ে মারিয়াম বিডি২৪লাইভকে বলেন, গরিব আমরা, টাকা পয়সা নেই। তাই বলে বেডও পাইনি। বারান্দায় বসেই চিকিৎসা চলছে। ‘দোয়া করি শত্রুরও যেন এ অবস্থা না হয়’।
তিনি বলেন, বেড খালি নেই। খালি হলে বেড দেয়া হবে বলে এখানকার লোকজন জানিয়েছে। তবে টাকা হলে নাকি এখনও বেড পাওয়া যায়। যদি টাকা হলে বেড পাওয়া যায় তাহলে বেড খালি নেই বলছে কেন?
তিনি আরও বলেন, আরেকজন বলে গেল বেড নিতে টাকা দিতে হবে। নইলে বেড পাওয়া যাবে না। কাকে টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার নাম জানি না। আজ সকালে তিনি আসেননি, গতকাল সন্ধ্যার পর বলে গেছে আজ সন্ধ্যার পর নাকি আসবে।
এ নিয়ে কথা হয় মমিন মিয়ার স্ত্রী শুকতারা বেগমের সাথে। তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, গত চারদিন আগে হাসপাতালে এসেছি কিন্তু আজও বেড পাইনি। বেড পেতে হলে নাকি টাকা দিতে হবে। ‘বাবা আমরা গরিব মানুষ এতো টাকা অন্যরে দিলে ডাক্তারদের দিব কি? রোগীরেও বা খাওয়াব কি, আমরাও বা খাব কি?
বেড পাওয়া নিয়ে দুলাল নামের একজন দালালের সাথে কথা হয়। তিনি বেড দেওয়া কথাও বলেন। তবে রোগী মমিন মিয়াকে দেখালে তিনি বেড দিতে পারবেন না বলে জানান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রোগী অন্যের, আমি বেড দিতে পারব না। যার রোগী সেই বেড দিবে বলে চলে যায়।
জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয় দালালরাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দালাল ছাড়া চিকিৎসা সেবা পাওয়াই কঠিন। এছাড়া রোগী ভাগিয়ে নিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠায় তারা। সেখান থেকে পার্সেন্টিস পান। তবে একেবারে যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাদের এসব স্থানে না পাঠিয়ে ঢামেকেই চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে তাতেও দালালদের দিতে হয় উপটৌকন বা ঘুষ।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রোকেয়া খানম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে বেড রয়েছে। রোগী আসছে তার দিগুণ। ফলে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের বেড সংকুলন না হওয়ায় বিশেষ সুপারিশে ওয়ার্ডের ফ্লোরে রাখা হচ্ছে রোগীদের। সেখানেও সংকুলান না হওয়ায় রাখা হচ্ছে বারান্দায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ খান আবুল কালাম আজাদ এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বিডি২৪লাইভ/এফএকে/এমআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: