মাঠ ছেড়ে প্রযুক্তি গেমসে শিশুরা, উত্তরণের উপায় কি?

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:০৮ পিএম

নগরায়নের কারণে উধাও হয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। ইট, বালু ও পাথরের আড়ালে আটকা পড়েছে শিশুদের বর্ণিল শৈশব। গ্রামের শিশুরা খেলাধুলার কিছুটা সুযোগ পেলেও, শহুরে শিশুদের সে সুযোগ দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।

পাঠ্যপুস্তকের অধ্যয়নের পাশাপাশি খেলাধুলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়, ‘আনন্দহীন শিক্ষা কোন শিক্ষাই নয়।’

তাই শিক্ষার পাশাপাশি শিশু বয়স থেকেই ছেলেমেয়েদের জন্য আনন্দ দানের ব্যবস্থাও করতে হবে। আর শিশুদের এ আনন্দ দানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে খেলাধুলা।

একটা সময় ছিল যখন শিশুদের খেলাধুলার জন্য মাঠ ছিল। কিন্তু আজ গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই মাঠ কমে আসছে। মাঠ নেই বললেই চলে। তাই বাধ্য হয়েই শিশুদের আনন্দ দানের জন্য ঘরের মধ্যেই বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে অভিভাবকদের। আর এ ক্ষেত্রে আধুনিক যুগের ডিজিটাল গেমসই বেশি পছন্দ শিশুদের।

তেমনি একটি গল্প ভোলার ওয়েস্টার্ন পাড়ার ফাহমিদা সুলতানার পরিবারের। তার তিন সন্তান। ইভানের বয়স ৯ বছর। ইরিনের বয়স ৬ বছর। আর ইয়ানের বয়স দেড় বছর। ওরা দুই ভাই এক বোন।

তিন বাচ্চাকে লালন-পালন করতে ফাহমিদা সুলতানা সায়মার হিমশিম খেতে হচ্ছে। একজন খেতে চাইলে আর একজন টয়লেটে যায়। আর একজন কিছু ফেলে ভেঙ্গে দেয়। এই অবস্থার মধ্যে পরিবারের গৃহকর্তা এলজিইডি কর্মচারী নুরুদ্দিন (টিপু) বড় দুই ভাই-বোনের জন্য ট্যাব ও ডেস্কটপ নিয়ে এসেছেন। এখন দুই ভাই-বোন সারাদিন তাতে গেমস খেলে। নতুন নতুন গেমস নামায়। আবার খেলা শেষ হলে নিজেরা গেমসের মতো মারামারিও করে।

এদিকে সায়মা যেন একটু হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। কেননা এখন খাওয়া, ঘুম ও পড়াশুনা বিলম্বিত হলেও দুই ভাই (তার ছেলে) তাকে আর আগের মতো যন্ত্রণা দেয় না।

অন্যদিকে একই পাড়ার রোজিনা। এবার তাদের গল্প। তিনি ও তার স্বামী আবদুর রহিম দুজনই শিক্ষক। তিন সন্তানের জননী তিনি। তার বড় ছেলে আফনানের বয়স ১০ বছর। মেজ ছেলে আয়নানের বয়স ৬ বছর। আর ছোট ছেলের আদনানের বয়স ৩ বছর। সকাল বেলা ছোট ছেলে আদনানকে নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। আর বড় ছেলে আফনান তার স্কুলে যাওয়ার সময় মেজ ছেলে আয়নানকে নিয়ে তার স্কুলে পৌছে দেয়। স্কুল থেকে এসে দু' ভাই ট্যাব নিয়ে গেইমস খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারও নিষেধ তাদের কানে যায় না। এতে বেশি বাধা দিলেও ঘরের সব কিছু ভেঙে একাকার করে দেয়।

ভোলা সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মোঃ মোমিন মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিজিটাল গেমস শিশুদের ওপর মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক প্রভাব ফেলে।

এ বিষয়ে করণীয় কি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে মায়েরদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুদেরকে বেশি বেশি গল্প শোনাতে হবে। চিত্রকলা, গান, নাচ প্রভৃতির সাথে যুক্ত করতে হবে।

বাবা-মাকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হয় এমন খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখা গেলে প্রযুক্তি আসক্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: