বিতর্কিত রাবি প্রশাসন, একাধিক পদে একই ব্যক্তি!

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:৪৬ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে পছন্দের লোক নিয়োগ দেয়ায় প্রশাসন বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। একই ব্যক্তিকে একাধিক পদে দায়িত্ব দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে আনুগত্য ও পছন্দের লোকদের উপাচার্য অগ্রাধিকার দেয়ায় শিক্ষক সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। আগামী দিনগুলোতে প্রশাসনিক কাজকর্মে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রভাষ কুমার সরকারকে গত বছর ১৭ আগস্ট জনসংযোগ বিভাগের প্রশাসক পদে বসানো হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হওয়ার পর ড. এম আবদুস সোবহান তাকে এই নিয়োগ দেন। এরপর ছাত্র উপদেষ্টা পদ শূন্য হলে ওই পদে ড. প্রভাষকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন উপাচার্য। এই নিয়োগ নিয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রগতিশীল শিক্ষকদের আহ্বায়ক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এম মজিবুর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্য শিক্ষকের অভাব নেই। অথচ কাছের ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর মাধ্যমে উপাচার্য ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। এতে রাবির ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষের দানা বাঁধছে।

সাবেক একজন ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, বিপুলসংখ্যক যোগ্য শিক্ষক থাকলেও একই ব্যক্তিকে দিয়ে দুই পদ চালানোর বিষয়টি অশোভন ও রীতিবিরুদ্ধ। তিনি বলেন, ড. প্রভাষের দক্ষতা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। একাধিক সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা জানান, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসেবে ছাত্র উপদেষ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। কিন্তু জনসংযোগ বিভাগ নিয়ে ব্যস্ততার কারণে ড. প্রভাস ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ইচ্ছেমতো বিজ্ঞাপন বণ্টনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই অধ্যাপক প্রভাসকে জনসংযোগ প্রশাসক পদে বসানো হয়েছে। তারা আরও জানান, উপ-উপাচার্য ড. আনন্দ কুমার সাহার সঙ্গে ড. এম সোবহানের সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। এই কারণে ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়াকে দ্বিতীয় উপ-উপাচার্য নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন ড. সোবহান। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্যই তিনি এটা করেছেন। এতে শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

রাবি শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্র উপদেষ্টা ড. প্রভাস কুমার সরকারের সাক্ষাৎই পাওয়া যায় না। ছাত্র উপদেষ্টার দফতরেও তিনি বসেন না। জনসংযোগ বিভাগে গেলেও তিনি সময় দিতে পারেন না। এতে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাদের দাবি, ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে অন্য কাউকে নিয়োগ দেয়া হোক।

এ ব্যাপারে উপাচার্য ড. এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী করা হচ্ছে। যারা পদবঞ্চিত হচ্ছেন তারাই এসব অভিযোগ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের কয়েকজন নেতা জানান, রাবিতে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষক থাকলেও কয়েকজন শিক্ষকের প্রতি উপাচার্য ড. সোবহান পক্ষপাতিত্ব করছেন। এতে শিক্ষক সমাজ ক্ষুব্ধ।

তাদের অভিযোগ, নিয়োগের ক্ষেত্রে বিতর্কিত ও অযোগ্য লোকদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ভিন্নমতের শিক্ষকদের বসাতে উপাচার্য সাহস পাচ্ছেন না। কারণ এসব পদে পছন্দের লোক না থাকলে ইচ্ছেমতো ও ফরমায়েশি কাজ করানো সম্ভব নয়। একচেটিয়া সুবিধা নিতে ও সার্বিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই ড. সোবহান সংকীর্ণতার বলয় থেকে বের হতে পারছেন না। ফলে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একটি বড় অংশ এখন তার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে।

শরীয়তপুরের জেডএইচ সিকদার প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ছাত্র উপদেষ্টা ড. জান্নাতুল ফেরদৌস শিল্পী যোগ দেন। এতে ছাত্র উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে ওই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পান ড. প্রভাস।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: