বগুড়ায় ভুয়া ডাক্তারদের দৌরাত্মে অসহায় মানুষ!
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় ভুয়া ডাক্তারে ছয়লাব হয়ে গেছে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে গ্রাম্য চিকিৎসক বা ওষুধ ব্যবসায়ীরা চিকিৎসা পত্রে নামের আগে ডাক্তার লিখে প্রতারিত করছে মানুষকে। চিকিৎশাস্ত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্থাৎ প্রাক স্নাতক উপাধি প্রাপ্তদের এমবিবিএস ডাক্তার বলা হয়। যারা তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার লেখার বৈধতা রাখেন।
অথচ উপজেলা জুড়ে মেডিকেল এ্যাসিস্টেন্ট, হেলথ এ্যাসিস্টেন্ট, ওয়ার্ড বয়, এল এম এম, ওষুধের দোকানী এমনকি মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোয়নি এমন অনেকেই তাদের নামের আগে ডাক্তার বসিয়ে প্রতিনিয়ত রোগী দেখছেন এবং প্রতারণা করছেন। এমন বহু ভুয়া ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া গেছে শিবগঞ্জ উপজেলায়। এদের হাতে পড়ে জীবন হারাচ্ছে, অনেকে আবার প্রতারিত হচ্ছে গ্রামের অশিক্ষিত সাধারণ মানুষ। এসব ভুয়া ডাক্তারদের অনেকেই ঝাঁড়-ফুকসহ কবিরাজী চিকিৎসাও করে থাকেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদর, মোকামতলা, আমতলী, গুজিয়া, দাড়িদহ, মহাস্থান, ভায়েরপুকুর, কিচকসহ উপজেলার প্রত্যেক বন্দরে ভুয়া ডাক্তারদের চেম্বার। এরা মোটরসাইকেল যোগে প্রতিনিয়ত গ্রামে গ্রামে রোগীদের দেখতে যায়। গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় বলেও জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে মোকামতলায় এরকম কয়েকটি ডাক্তারের চেম্বার পাওয়া যায়। যাদের অনেকে মাধ্যমিকের গন্ডিও পেরোনি, অথচ ডাক্তার হয়ে চেম্বার খুলেছেন। নামের আগে ডাক্তার লিখে প্যাড বানিয়েছেন। শুধুমাত্র ফার্মেসি থেকে ওষুধ বিক্রির অভিজ্ঞতা নিয়েও ডাক্তারি করছেন এমন দুজনকেও পাওয়া যায়। ৩ জন গ্রাম্য ডাক্তার আছেন, যারা আবার ডাক্তারির পাশাপাশি ঝাঁড়-ফুক দিয়েও রোগ সারিয়ে ফেলেন। এভাবে প্রতিনিয়িত গ্রাম্য সাধারণ মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব ভুয়া ডাক্তার। সেই সাথে সাধারণ মানুষদের ভুল চিকিৎসা দিয়ে শরীরের স্থায়ী ক্ষতি করছে তারা। এছাড়াও মোকামতলা বন্দরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কয়েকটি দন্ত চিকিৎসালয় দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাম্য ডাক্তার বলেন, আমাদের চিকিৎসায় রোগ ভাল হয়। এজন্য রোগী আমাদের কাছে ছুটে আসে। গড়ে প্রতিদিন আমি ২০/২৫ জন রোগী দেখি। তার দৈনিক আয় ৪/৫ হাজার টাকা বলেও তিনি দাবি করেন। ঝাঁড়-ফুকের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, রোগীদের ওষুধে রোগ না সারলে দোয়া-তাবিজ দিয়ে সারিয়ে দিই। এতে দোষের কিছু নেই।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সলিমুল্লাহ জানান, এক কথায় এরা ভুয়া। সাধারণ রোগীদের প্রতারণা করে এমবিবিএস ডাক্তারদের পদবি ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। সরকারি নিয়মানুসারে এদের বিরুদ্ধে ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত জেল অথবা আর্থিক জরিমানাসহ উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যেতে পারে।
এলাকার সুধী জনদের অভিযোগ, এ সকল ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে বগুড়া সিভিল সার্জনসহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোন মনিটরিং। যে কারণে তারা প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। তাছাড়া এই সকল ভুয়া ডাক্তারদের রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী পেটুয়া বাহিনী ও ক্ষমতাশীল দলের জনপ্রতিনিধি। যাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পায়। ভুক্তভোগী সাধারণ রোগীদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সকল ভুয়া ডাক্তারদের তালিকা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির বলেন, যারা নামের আগে ডাক্তার লিখে ও ঝাঁড়-ফুক দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি২৪লাইভ/এমকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: