চম্পা, গর্জন, বৈলামসহ দুর্লভ গাছের বন উজাড়
বান্দরবানের আলীকদম এলাকার ৪০ একরেরও বেশি প্রাকৃতিক রিজার্ভ বন উজাড় হচ্ছে। চিম্বুক রেঞ্জের অন্তর্ভূক্ত বিশাল এই বনাঞ্চলটিতে চম্পা ফুল, গর্জন, বৈলামসহ নানা দুর্লভ প্রজাতির প্রাকৃতিক গাছ রয়েছে। প্রায় ৮ বছর ধরে চকরিয়া ও আলীকদমের একটি গাছ পাচারকারী চক্র নিঃশেষ করে দিচ্ছে এই রিজার্ভ বনটি।
এই প্রাকৃতিক রিজার্ভ বনটি বান্দরবানের থানচি-আলীকদম সড়কের দিরি ম্রো পাড়া ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। চিম্বুক রেঞ্জের প্রায় ৪০ একর এলাকাজুড়ে এই রিজার্ভ বনটির অবস্থান।
থানচি-আলীকদম সড়কের ডিম পাহাড় সড়কটির কাছে হওয়ায় ট্রাকে করে পাচারকারীরা উজাড় করে নিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক বনের দুর্লভ গাছগুলো। বনটিতে কেটে ফেলা কোনো কোনো গাছের বেড় প্রায় ১৫ ফুট। হস্তচালিত করাতে বড় বড় এসব গাছ কাটতে না পারায় এখন পেট্রোল-চালিত করাত দিয়ে সাবাড় করা হচ্ছে পুরো বনাঞ্চলটি।
ক্রামা মন্দিরের প্রলোভন: প্রভাবশালী কাঠ পাচারকারী চক্রটির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে দিরি পাড়ার ম্রো জনগোষ্ঠী। দিরি কার্বারী পাড়ায় বসবাসকারী ম্রো জনগোষ্ঠীর সবাই ক্রামা ধর্মাবলম্বী। পাড়ায় একটি ক্রামা মন্দির নির্মাণ করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাচারকারী চক্রটি পুরো পাড়ার রিজার্ভ বনটিই সাবাড় করতে বসেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
পাড়া কার্বারী (পাড়া প্রধান) দিরি ম্রো জানান, গত ৮ বছর আগে পাড়ায় একটি ক্রামা মন্দির নির্মাণ করে দেয়ার কথা বলে গাছ পাচারকারীরা একটি আবেদনে স্বাক্ষর নেয়। পরে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ওই আবেদনটি দিয়ে গাছ পাচারের ১৫ বছরের একটি চুক্তি করে। ক্রামা মন্দির নির্মাণের সুযোগে পাচারকারীরা গত ৮ বছর ধরে পাড়া রিজার্ভের গাছ কেটে নিচ্ছে।
আলী-কুতুব গংয়ের কাণ্ড: ম্রো জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, আলীকদম উপজেলার গাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ও কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকার কুতুব সওদাগর মিলে রিজার্ভটি বনটি উজাড় করছেন।
তাদের অভিযোগ, শ্রমিকরা পেট্রোল-চালিত করাত দিয়ে প্রতিদিন রিজার্ভের বড় বড় গাছ কেটে নিচ্ছে। আগে হস্তচালিত করাত ব্যবহার করা হলেও সময় বেশি লাগায় এখন সেখানে পেট্রোল চালিত করাত ব্যবহার করে হরদম গাছ কাটা হচ্ছে।
সম্প্রতি বান্দরবানের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক খবর পেয়ে থানচি আলীকদম সড়কের দিরি পাড়া এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, পাড়ার পাশে রিজার্ভ বনটি কেটে উজাড় করে ফেলা হয়েছে। বনের বড় বড় প্রাকৃতিক গাছ পেট্রোল-চালিত করাত দিয়ে কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে পাড়ার কাছে। ট্রাকে করে সুবিধামতো সময়ে বিশেষ করে রাতের আঁধারে পাচার করা হচ্ছে এসব গাছ।
স্থানীয়রা জানান, দিরি পাড়া থেকে গাছগুলো আমতলি এলাকায় জমা করে সেখান থেকে চকরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রায় সময় রাতের আঁধারে ট্রাকে করে সরাসরি চকরিয়ায় পাচার করা হচ্ছে পাড়া রিজার্ভের মূল্যবান গাছ।
ম্রো জনগোষ্ঠী অসহায়: আলীকদম সদর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি এক সদস্য জানান, দীর্ঘদিন থেকে দিরি পাড়া এলাকার মূল্যবান দুর্লভ প্রজাতির গাছগুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে। আলীকদম চকরিয়া সড়কে বিভিন্ন চেক পোস্ট থাকার পরও রাতের আঁধারে পাচারকারী চক্রটি ট্রাকে করে গাছ চকরিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে।
পাড়ার লোকজন জানান, বাধা দিলেও পাচারকারী চক্রটি উল্টো হুমকি-ধামকি দিয়ে রিজার্ভ বনের গাছ কেটে চলেছে। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এখন ঝিরি ঝর্ণায় দেখা দিয়েছে পানি সঙ্কট। পাড়া রিজার্ভ বনগুলোতে নানা প্রজাতির প্রাকৃতিক গাছ থাকে। এ কারণে বনগুলোর ঝিরি ঝর্ণায়ও থাকে প্রচুর পানি। এসব বনের কাছেই গড়ে উঠে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বড় বড় পাড়া। পাড়া রিজার্ভে দুর্লভ প্রজাতির মূল্যবান গাছ থাকায় পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে এসব বনের গাছ কেটে নিতে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাঠ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী সাংবাদিককে জানান, যে এলাকা থেকে গাছ কাটা হচ্ছে তা রিজার্ভ নয়। সেখানে জোত পারমিটের মাধ্যমে বৈধ পন্থায় গাছ কাটা হচ্ছে।
দুর্লভ প্রজাতির গাছ কেন কাটা হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ‘পরে কথা বলব’ বলে ফোন লাইন কেটে দেন।
লামা বন বিভাগের তৈন রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শামসুল হুদা জানান, খবর পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিরি পাড়া এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ৫০০ ঘনফুট কাঠ জব্দ করা হয়েছে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বন বিভাগের বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট থাকার পরও রাতের আঁধারে পাচারের সময় ট্রাকগুলো কেন আটক করা হয় না জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, দিরি পাড়া এলাকা থেকে কাঠ পাচারের বিষয়টি তাদের জানা নেই। তবে বিষয়টি সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি রেঞ্জ কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠাবেন বলে জানান।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: