তাবলিগের বিরোধ মেটাতে সরকারের ৫ নির্দেশনা

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৫২ পিএম

তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব নিরসন এবং তাবলিগের কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাবলিগ জামাতে চলমান দ্বন্দ নিরসনের লক্ষ্যে নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

সম্প্রতি ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়িয়ে দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গেছে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত। এর জেরে কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দেলোয়ারা বেগমের সই করা পরিপত্রটি এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানের তাবলিগের মারকাজগুলোতে ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। একই পরিপত্র সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে তাবলিগ জামাতের চলমান সংকট নিরসনে তাবলিগের উভয় পক্ষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, অপপ্রচার রোধ এবং একে অপরের প্রতি সহনশীল মনোভাব পোষণের কথা বলা হয়েছে।

তাবলিগের সংকট নিরসনে সরকারের পাঁচ নির্দেশনা হলো

১. বর্তমানে তাবলিগে বিদ্যমান দুটি পক্ষ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শক্রমে কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী ইজতেমা ময়দানসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা মারকাজে সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে তাদের কার্যক্রম (সাপ্তাহিক বাণী ও রাত্রিযাপন, পরামর্শ ও তালিম, মাসিক জোড় ইত্যাদি) পরিচালনা করবে।

তবে কোনও পক্ষ চাইলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে মারকাজ ব্যাতিত অন্য কোনও মসজিদে বা জায়গাতেও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

২. তাবলিগের আদর্শ ও চিরাচরিত রীতিনীতি অনুযায়ী কোনও পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের লিখিত বা মৌখিক অপপ্রচার চালাবে না।

৩. দেশের সব মসজিদে আগের মতো শান্তিপূর্ণভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সে লক্ষ্যে যেকোনও মসজিদে উভয় পক্ষের জামাতই যেতে পারবে। এতে কোনও পক্ষই কাউকে বাধা দেবে না। তবে একই সময়ে দুই পক্ষের দেশি ও বিদেশি জামাত একই মসজিদে অবস্থান করা যুক্তিসংগত হবে না। এক্ষেত্রে যে পক্ষের জামাত আগে আসবে সেই পক্ষের জামাত অবস্থান করবে। অন্য পক্ষের জামাত আশপাশের অন্য কোনও সুবিধাজনক মসজিদে যাবে।

৪. উভয় পক্ষ তাদের ইজতেমা বা জোড়ে তাবলিগের দেশি-বিদেশি মুরুব্বিদের আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। এতে একপক্ষ অন্য পক্ষের কার্যক্রমে কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।

৫. কোনও এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে কোনও বিরোধ দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসন উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে। পরিপত্রটিতে বলা হয়, সারাবিশ্বে তাবলিগের কার্যক্রম একটি অরাজনৈতিক অহিংস, শান্তিপূর্ণ ও সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় কার্যক্রম হিসেবে পরিচিত। মুসলিম জণসাধারণ তাদের আত্মশুদ্ধি ও ইসলামের দাওয়াতে প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছেন।

এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ একটি অন্যতম অগ্রসরমান দেশ হওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম জামাত ‘বিশ্ব ইজতেমা’ প্রতিবছর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি এ সংগঠনের মধ্যে দৃশ্যমান বিভক্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে শান্তিকামী সংগঠনটির দুটি গ্রুপের মধ্যে দেশের প্রায় সব এলাকায় প্রায়ই বিন্যাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা ধর্মীয় রীতিনীতি তথা সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলার অন্তরায়। তাই দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সৌহার্দ ও সম্প্রীতি বজায় রাখা তথা সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে পরিপত্রে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের মারকাজ কাকরাইল মসজিদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তাবলিগের দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা সাদ কান্ধলভী বিরোধী অংশ। সাদের অনুসারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন তারা। এ নিয়ে তাবলিগ জামাতে চলছে উত্তেজনা। এ দ্বন্দ্ব নিরসনে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ পটভূমিতে পরিপত্র জারি করলো ধর্ম মন্ত্রণালয়।

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: