‘ভাই বলেছিলেন আজ তুই জেতা’

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৪০ পিএম

প্রচুর পানি খেয়েও ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না তিনি। সে জন্যই আফগানিস্তান ম্যাচে তাঁর দ্বিতীয় স্পেলের তৃতীয় ওভার করার সময় থেকেই কাফ মাসলে টান প্রথম অনুভব করতে শুরু করেন মুস্তাফিজুর রহমান। আবার আবুধাবির ধীরগতির উইকেটে বাড়তি স্পিনার রাখার চিন্তায় একাদশে রুবেল হোসেনও ছিলেন না যে কাঁধ থেকে দায়িত্বের বোঝা একটু কমবে। ‘কাটার মাস্টার’ সেই বোঝা শেষ ওভার পর্যন্ত বইলেন।

এর মাঝখানে দরদর করে বেরিয়ে যেতে থাকা ঘামে শরীর কখনো কখনো ছেড়েও দিচ্ছিল। কিন্তু হাল না ছাড়ার মানসিকতায় নিজেকে কঠিন পরিস্থিতিতে বোলিংয়ের জন্য তৈরি রাখার চেষ্টাও করে গেছেন প্রতিনিয়ত। বোতলের পর বোতল পানি শেষ করেছেন। গুনে তো আর রাখেননি, তবে এটুকু বলতে পারলেন যে, ‘যখনই গলা শুকিয়ে আসছিল, দুই বোতল করে মেরে দিয়েছি।’

প্রতিবার দুই বোতল করে পানি খেয়ে নিজেকে সতেজ রাখার চেষ্টা করতে করতে একসময় এসে যায় সেই সময়, যখন শেষ ওভারে জেতার জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন ৮ রান। এই সময়ের ক্রিকেটে ৬ বলে ২০-২৫ রানের সমীকরণও যখন দলগুলো অবলীলায় মিলিয়ে ফেলে, সেখানে সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও গুলবাদিন নাঈবের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকায় ভরসা ছিল না আরো। কিন্তু মুস্তাফিজ তাঁর বোলিং চাতুরী দিয়ে ভরসাও হয়ে উঠলেন, আবার ৩ রানের জয়ে দলের এশিয়া কাপ ফাইনালে যাওয়ার জানালাও খুলে রাখলেন। নিজের মধ্যে বিশ্বাস যেমন ছিল, তেমনি ছিল দোলাচলও। স্বল্পবাক মুস্তাফিজ কাল দুপুরে ফেস্টিভাল সিটির ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্বভাবসুলভ হাসিতে বলছিলেন ওই সময়টির কথাই, ‘গোল বলের কোনো বিশ্বাস নেই। ওপরওয়ালা সহায় থাকলে হয়। শেষ ওভারে কুড়ির ওপরে রান থাকলে ঠিক ছিল। কিন্তু ২০ রান পর্যন্ত কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেকোনো মুহূর্তে ওই রানটা নিয়ে নিতে পারে। আমার চেষ্টা ছিল, নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল। আর সময়ও ভালো গেছে। এই আর কি!’

মাশরাফি বিন মর্তুজাও চেয়েছিলেন, মুস্তাফিজের হাত ধরেই টানা দুই হারের পর ভালো সময় আসুক বাংলাদেশেরও। সে জন্যই শেষ ওভারে মুস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেওয়ার সময় সে কথাটা বলেও দিয়েছিলেন। কী বলেছিলেন অধিনায়ক। মুস্তাফিজের নিজের মুখ থেকেই শুনে নেওয়া যাক এর বিস্তারিত, ‘‘শেষ ওভারে যখন ৮ রান দরকার ছিল ওদের, মাশরাফি ভাই এটাই বলছিলেন যে আমরা অনেকবার এই পরিস্থিতিতে গিয়ে হেরেছি। ভাই বলছিলেন, ‘৮-৯ রান করতে গিয়ে আমরা অনেক হেরেছি। আজ তুই জেতা।’ ভাই কথাগুলো বলার সময় খুব ভালো লাগছিল।’’

এমনই ভালো লাগছিল যে একসময় অধিনায়ককে বোলিং করতে পারবেন না বলে জানানো মুস্তাফিজের শরীরে তখন খেলে যায় অন্য রকম শিহরণ, ‘একসময় আমি একদমই পারছিলাম না। ভাই বলেছেন বলে তবু চেষ্টা করলাম। ভাবলাম যে কপালে থাকলে হবে। পাশে তখন অপু ভাইও (বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম) ছিলেন। উনিও বললেন চেষ্টা করে দেখতে। কপালের হাতে ছেড়ে দিয়ে চেষ্টা করে দেখলাম।’

সেই চেষ্টায় খাদের কিনার থেকে ঘুরে বাংলাদেশ দল আবার কক্ষপথে। আগের দুই ম্যাচের হারে গুমোট হয়ে থাকা দলের পরিবেশও এখন বদলে গেছে বলে মনে হচ্ছে তাঁর, ‘জেতার কারণে আমাদের ভালো হয়েছে। দুটো ম্যাচ হারার পরে অন্য রকম ছিল পরিবেশ। এখন একটি ম্যাচ জিতেছি, আরেকটি জিতলে ফাইনালে যাওয়ার সুযোগও আছে। কাজেই আমাদের এখন ফুরফুরে মেজাজেই থাকার কথা।’ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে নিজের সঙ্গে নিজের লড়াইয়েও একেকজন জিতেছেন আফগানিস্তান ম্যাচে। সেটি মাশরাফি থেকে শুরু করে প্রায় সবাই। এ জন্যই জয়ের তৃপ্তিটা আরো বেশিই অনুভব করলেন মুস্তাফিজ, ‘দুবাইয়ের চেয়ে আবুধাবিতে গরম আরো বেশি। সবারই কষ্ট হয়েছে গরমে। অনেক ঘেমেছে সবাই। সবারই মাংসপেশিতে টান পড়ছিল। আমার নয় শুধু, অনেকেরই। সবার অনেক কষ্ট হয়ে গেছে। এই কষ্টের জন্যই জয়টা আরো বেশি স্বস্তি দিয়েছে আমাদের।’

স্বস্তিটা মুস্তাফিজের নিশ্চিতভাবেই আরো বেশি হওয়ার কথা। ‘ভাইয়ের’ চাহিদামতো শেষ ওভারে বোলিংয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দলকে যে জেতাতেও পেরেছেন! সূত্র: কালেরকন্ঠ।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: