বাংলাদেশ-পাকিস্তান হাইভোল্টেজ ম্যাচ, জিতবে কে?

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:০৯ পিএম

এশিয়া কাপের অঘোষিত সেমিফাইনালে কাল (২৫ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে এ ম্যাচ দুই দলের জন্যই এক বিশাল যুদ্ধক্ষেত্র। কারণ যে দল হারবে তাদের এশিয়া কাপ শেষ হয়ে যাবে সেখানেই। বাঁচা-মরার এই লড়াইয়ে চলুন জেনে নেয়া যাক দুই দলের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার জায়গাগুলো।

ওয়ানডে’র পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের চেয়ে যোজন-যোজন ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। কারণ মুখোমুখি ৩৫টি ম্যাচের মধ্যে ৩১টিতেই জিতেছে তারা। বাংলাদেশের জয় সেখানে মাত্র ৪টি খেলায়। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকদের বিরুদ্ধে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। এরপর জয়ের জন্য ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে টাইগারদের। ২০১৫ সালে ঘরের মাটিতে অবশেষে জয় পায় তারা। শুধু তাই নয়, দুই দলের সর্বশেষ সেই সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করে বাংলাদেশ। ফলে ঐ সিরিজ জয়ের সুখ স্মৃতি মাশরাফিদের অবশ্যই বাড়তি প্রেরণা যোগাবে।

এদিকে এবারের এশিয়া কাপের পারফর্ম্যান্স নিয়ে কিছুটা বিপাকে রয়েছে পাকিস্তান। আফগানদের বিরুদ্ধে হারতে হারতে বেঁচে গেছে তারা। তবে ভারতের কাছে দুই দফায় বিধ্বস্ত হওয়ার স্মৃতি কোনোভাবেই স্বস্তি দেবেনা সরফরাজ বাহিনীকে। বিশেষ করে শেষ ম্যাচে রোহিত শর্মা ও শেখর ধাওয়ানের ব্যাটিংয়ের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে দলের বোলাররা, তা কোনোভাবেই ইতিবাচক কিছু নয়। ২৩৮ রানের দেয়া টার্গেটে ভারত পৌঁছে যায় ৯ উইকেট হাতে রেখে। এতেই বোলারদের দুরবস্থা বোঝা যাচ্ছে বেশ। দলের মেইন স্ট্রাইক বোলার মোহাম্মাদ আমির এখন পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় উইকেট শূণ্য। হাসান আলির অবস্থাও খুব একটা সুবিধার নয়। নতুন হিসেবে উসমান খান এখনও ধারাবাহিক হতে পারেননি। তারপরও পাকিস্তানের বোলিংকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়েই রাখতে হবে। পেস অ্যাটাকের পাশাপাশি শাদাবের স্পিন বোলিং তাদের বাড়তি শক্তি যোগাবে।

আর ব্যাটিংয়ে পাকদের অবস্থা তথৈবচ। ফর্ম নেই ওপেনার ফখর জামানের । অন্য ওপেনার ইমাম উল হক ও বাবর আজমই টপ অর্ডারের মূল ভরসা। মিডল অর্ডারে শোয়েব মালিকই এখন পর্যন্ত ধারাবাহিক। সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি সরফরাজ, আসিফ, ফাহিম আশরাফরা। ফলে ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে পাকিস্তান শিবিরে। কোচ মিকি আর্থারও জানিয়েছেন সেই কথা। আর ভারতের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আত্নবিশ্বাসহীনতাও কাজ করবে তাদের ভেতর।

অন্যদিকে আফগানিস্তানকে শেষ ওভারে হারানোর তরতাজা অনুভূতি নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। মাঝের দুই ম্যাচ খারাপ খেলার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসার লক্ষণ স্পষ্ট হয়েছে গত ম্যাচেই। ফলে মাঠের লড়াইয়ে টাইগাররা নিজেদের উজাড় করেই খেলবে তা আশা করা যায়। তবে বাংলাদেশের মূল সমস্যা এখনও ব্যাটিং লাইনকে ঘিরে আবর্তিত। দলের টপ অর্ডার গোটা টুর্নামেন্টেই ব্যর্থ। ওপেনাররা এক ম্যাচেও পাননি রানের দেখা। সেদিক থেকে কারা ওপেন করবেন, সেটাও দেখার বিষয়। তিন ম্যাচ ব্যর্থতার পর বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর। তার জায়গায় মুমিনুল বা সৌম্যকে দেখা যেতে পারে। মিডল অর্ডারে সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহই বাংলাদেশের মূল শক্তি। শেষ ম্যাচে ইমরুলের ব্যাটিংও বাড়তি প্রেরণা দিচ্ছে টাইগারদের। ইমরুলের উপস্থিতি ব্যাটিং ডেপথ বাড়াবে নিঃসন্দেহে। লোয়ার মিডল অর্ডারে মাশরাফি ও মিরাজ হাল ধরবেন দলের। তাদের কাছে কিছু রান আশা করতেই পারে সমর্থকরা।

আর বোলিংয়ে মাশরাফিকে নতুন বলে সহায়তা করবেন আগের ম্যাচের নায়ক মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর স্পিন আক্রমণে দলের মূল ভরসা সাকিব ও মিরাজ। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে নাজমুল ইসলাম নাকি রুবেল হোসেন খেলবেন, তা নিশ্চিত নয় এখনও। কন্ডিশন অনুযায়ী তাদের মধ্যে একজনকে পাবে টাইগাররা। পার্টটাইম বোলার হিসেবে মাহমুদুল্লাহ গত ম্যাচে কার্যকর ছিলেন। এ ম্যাচেও তাকে ব্যবহার করা যেতে পারে পাকদের বিরুদ্ধে। তবে ওভারঅল বাংলাদেশের ব্যাটিংটাই বেশি ভাইটাল হবে এ ম্যাচে। টপ অর্ডারদের রান করার বিকল্প নেই এই খেলায়।

সবমিলিয়ে আত্নবিশ্বাস ও শেষ সিরিজে পাকিস্তানকে হারানোর অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখবে কিছুটা। অন্যদিকে ভারতের কাছে শোচনীয় হারের পর পাকিস্তানেরও জয় ছাড়া কোনো পথ নেই। তাদের মোটামুটি মানের ব্যাটিংয়ের সাথে থাকছে গতিসম্পন্ন পেস অ্যাটাক। আর বাংলাদেশের রয়েছে মিডল অর্ডারনির্ভর ব্যাটিং লাইন ও বৈচিত্র্যসম্পন্ন বোলিং শক্তি। ফলে মাঠের লড়াইটা জমজমাট হেবে বলেই আশা করা যায়। আত্নবিশ্বাস ধরে রেখে, পজেটিভ ক্রিকেট খেললে এই পাকিস্তানকে হারানোর সক্ষমতা যে বাংলাদেশের রয়েছে, তা বলাই যায়।

বিডি২৪লাইভ/এএআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: