ফাটলের নেপথ্যে শর্তের চাপ
জাতীয় ঐক্য গড়ার শুরু থেকেই চলতে থাকে টানাপড়েন। কখনও নীরবে, কখনও প্রকাশ্যে। প্রতিটি বৈঠকেই অন্য দলগুলোর সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় বিকল্পধারার। দলটির নানা শর্ত পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে উদ্যোগী নেতাদের পক্ষে। ক্রমে বাড়তে থাকে দূরত্ব। দেখা দেয় জটিলতা। সর্বশেষ গত শুক্রবার যুক্তফ্রন্টের শরিক জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসভবনের বৈঠকেও বাকবিতণ্ডা হয়। নানা শর্তের জট খুলতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বি. চৌধুরীকে বাদ দিতে বাধ্য হন ড. কামাল হোসেন। অন্যরাও এ বিষয়ে একমত হন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়েছে বহুল আলোচিত জাতীয় ঐক্যের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐক্য গড়ার শর্ত হিসেবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ স্বাধীনতাবিরোধী শব্দ নিয়েই মূলত পাহাড়সম জটিলতা দেখা দেয়। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের 'ক্ষমতার ভারসাম্যে'র জন্য ঐক্য গড়ে তোলার আগে 'আসন বণ্টনে'র নিশ্চয়তা চেয়েছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দলটি। বিএনপিকে দেড়শ' আসন দিয়ে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে দেড়শ' আসন দেওয়ার দাবি তোলে তারা। তাদের এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য দল। ক্ষুব্ধ হন ঐক্যের উদ্যোক্তারা। তবুও নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে বিকল্পধারা।
এ পরিস্থিতিতে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মধ্যে দূরত্ব মেটাতে দুই নেতার বৈঠকের আয়োজনও করা হয়। গতকাল ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসভবনে বৈঠকে এ বিষয়ে সুরাহা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তবে এই বৈঠক নিয়ে এসব দলের মধ্যে দিনভর নানা গুঞ্জন চলতে থাকে। ঐক্যের একাধিক নেতা সকাল থেকেই এ বৈঠক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই বৈঠক আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি-না। দুপুর থেকে ড. কামাল হোসেনের মতিঝিল চেম্বারে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন।
এমন পরিস্থিতিতে বিকেল সাড়ে ৩টায় বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরী আসেন। ওই সময় ড. কামাল হোসেন বাসায় ছিলেন না। এ ঘটনায় বিব্রত হয়ে মাহী বি. চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তারা ড. কামাল হোসেনের আমন্ত্রণে তার বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু বাসার দরজা খোলেননি কেউ। বি. চৌধুরীর মতো একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে ডেকে এনে তার সঙ্গে দেখা না করা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। এখন বোঝা যাচ্ছে, ঐক্য কাদের কারণে হচ্ছে না, কেন হচ্ছে না? আর এটাও পরিস্কার হয়ে গেল- কারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে ঐক্যে নেওয়ার চক্রান্ত করছে এবং মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তবে গণফোরামের যুগ্ম সম্পাদক আ ও ম শফিকউল্লাহ জানান, ড. কামাল হোসেনের পক্ষ থেকে বি. চৌধুরীকে জানানো হয়, তিনি মতিঝিলের অফিসে রয়েছেন, তিনি যেন সেখানে আসেন। কিন্তু তারা মতিঝিলে না এসে বেইলি রোডে তার বাসায় গিয়েছেন। সে সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা জানান, বিকল্পধারা যে শেষ পর্যন্ত এই ঐক্যে থাকবে না এটা অনেক দিন ধরেই বোঝা যাচ্ছিল। এতদিন তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমঝোতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপির বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো নেতাদের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ মাহী বি. চৌধুরী অংশগ্রহণ করেন। তার বিভিন্ন সময়ের কিছু কিছু আচরণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে ছিল না। বিভিন্ন সময়ে মাহী বি. চৌধুরীর বিএনপিকে নিয়ে কটাক্ষ করার ঘটনাও সহজভাবে নেননি নেতারা। এর ওপর সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিটি দল ক্ষুব্ধ ছিল। গতকাল যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
গতকাল দুপুর থেকেই ড. কামাল হোসেনের পেশাগত কার্যালয়ে আ স ম আবদুর রব, জাফরুল্লাহ চৌধুরী বৈঠক করেন। বিকেল ৩টার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখানে উপস্থিত হয়ে সাড়ে ৩টায় বের হয়ে পাশে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের চেম্বারে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে বিকেল ৪টার দিকে মির্জা ফখরুল আবার ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে যান।
এরপর এমন পরিস্থিতিতে সেখানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেন, জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য তাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই পরিকল্পনায় তারা সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ঘোষণা দেন।
তবে এত কিছুর পরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল আশাবাদী। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব আশা প্রকাশ করে বলেন, কোনো কারণে যুক্তফ্রন্টের এ দলটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আসতে না পারলেও অচিরেই তারা যোগ দেবে। সূত্র: সমকাল
বিডি২৪লাইভ/এমআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: