যেখানে অভিনেত্রী ও পুলিশ প্রধানও গুম হয়ে যায়

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৫৬ পিএম

সাম্প্রতিক সময়ে দুই জন চীনা নাগরিকের হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় দেশটির মধ্যে তো বটেই, গোটা বিশ্বেজুড়েও।

নিখোঁজ হওয়া ওই দু’জনের মধ্যে একজন হলেন, এক্স-ম্যান ও আয়রন ম্যান সিনেমার অভিনেত্রী ফান বিংবিং। তাকে কয়েক মাস ধরে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছিল না, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার কোনো কার্যক্রম ছিল না।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই জনসমক্ষে এসে তিনি দু:খপ্রকাশ করলেন কর ফাঁকি দেয়ার বিষয় নিয়ে।

এই অভিনেত্রীর ফিরে আসার ঠিক দু’দিনের মধ্যেই নিখোঁজ হন স্বয়ং ইন্টারপোলের প্রধান মেং হংওয়েই। তার স্ত্রীর দাবি, হারিয়ে যাওয়ার আগে তার স্বামী তাকে একটি ছুরির ইমোজি টেক্সট করেছিলেন এটার মানে দাঁড়ায় যে তিনি প্রচণ্ড বিপদে রয়েছেন।

এরপর গত ৮ অক্টোবর চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, তাকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এই দুইটি ঘটনায় পুরো বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এমন ঘটনায় আবারও বেরিয়ে আসে চীনে জোরপূর্বক গুম হওয়া নতুন কিছু নয়।

ওই প্রতিবেদনে এও বলা হয়, ২০১২ সালে চীনের শীর্ষ নেতার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন শি জিনপেং।

&dquote;&dquote;
প্রেসিডেন্টই সেখানে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী

অনেকেই বলছেন এরপর দেশটিতে অভিযান আরও কঠোর হয় এবং এটি একটি কাঠামোতে রূপ নেয়। বিশেষ করে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে শাস্তি পায় প্রায় ১০ লাখ সরকারি কর্মকর্তা। যদিও সমালোচকদের মতে দুর্নীতির মতো বিষয়টি ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দাই বেশী নেয়া হচ্ছে।

চীনের এক সময়ের প্রভাবশালী একজন নেতা জু ইয়াংকেংও এতে টার্গেট করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে তাকে জেল দেয়া হয় ঘুষের অভিযোগ তুলে।

এবার আলোচনায় এসেছে ইন্টারপোলের প্রধান মেং হংওয়েই ও অভিনেত্রী ফান বিংবিং’র নিখোঁজের ঘটনাটি।

হঠাৎ করেই তারা দু’জন কিছুদিনের জন্য হাওয়া হয়ে গেলেন, এতে করে সর্বত্র আলোচনার ঝড় তোলে।

কিন্তু কেন এমনটি হচ্ছে?

এশিয়া সোসাইটির সিনিয়র ফেলো ইসাক স্টোন ফিস বলছেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি দেখাতে চীন ও বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে তাদের নিজেদের নিয়মকানুনই এখানে নিয়ন্ত্রক এবং আর কারও কাছে তারা এসবের ব্যাখ্যা দিতে রাজি নন।

তার মতে ইন্টারপোল প্রধানের ঘটনা জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক কিংবা আইএমএফ-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দিকে একটি পরিষ্কার বার্তা চীনা নাগরিক তিনি যেখানেই কর্মরত থাকুন না কেন তিনি যেকোন সময়েই আটক হতে পারেন এবং অগ্রিম কোন তথ্য ছাড়াই সেটি হতে পারে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব ঘটনার মাধ্যমে আসলে দেশের অভ্যন্তরেই কড়া বার্তা দেয়া হয় যে কেউই ছাড় পাবে না।

কিন্তু, যারা হাওয়া হয়ে যায় তাদের আসলে কী করা হয়?

অনেকেই সেখানে নির্মমতারও শিকার হয়েছেন। না ঘুমাতে দেয়া, মারধর করা, যৌন নির্যাতন, ইলেকট্রিক শক দেয়ার মতো এমন নানা পন্থা ব্যবহার করা হয় জিজ্ঞাসাবাদের সময়। 

আর এটা নির্ভর করে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তার ওপর। অথবা কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য হতে পারে।

তবে আটক থাকার সময় তাদের সঙ্গে যাই ঘটুক না কেন যারাই হাওয়া হয়ে যান তারাই ফিরে এসে নিজের দোষ স্বীকার করেন।

বর্তমানে যেমন করছেন অভিনেত্রী ফান বিংবিং কিংবা বিচারের মুখোমুখি হতে যাওয়া ইন্টারপোল প্রধানের দায়িত্ব পালন করা প্রধান মেং হংওয়েই।

বিষয়টি সারা বিশ্ব কিভাবে দেখছে সেটি নয় বরং সেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপেং ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আনুগত্যই প্রথম ও শেষ কথা।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: