অবশেষে খাসোগি হত্যা নিয়ে মুখ খুললেন যুবরাজ সালমান
বহুল আলোচিত সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ওই হত্যাকাণ্ডকে ‘জঘন্য’ ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন। খাসোগি হত্যাকাণ্ডকে ‘জঘন্য’ অভিহিত করে এর সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জনসমক্ষে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
বুধবার (২৪ অক্টোবর) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের এক সম্মেলনে মোহাম্মদ বিন সালমান এই বিষয়ে মুখ খুলেন। রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
সম্মেলনে বক্তৃতা দেয়ার সময় যুবরাজ বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড সৌদি আরববাসীর জন্য খুবই বেদনার। সারা বিশ্বের মানুষের জন্যই এটা বেদনার। এটা খুবই অপ্রয়োজনীয় ছিল।’
সৌদির প্রভাবশালী এই যুবরাজ আরো বলেন, ‘বিশ্বের কাছে আমরা প্রমাণ করব যে সৌদি আরব ও তুরস্ক এ দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অপরাধী যেই হোক, তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসবে। শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারেরই জয় হবে।’
যুবরাজ তুরস্কের সঙ্গে আমাদের সৌদি আরবের খুব ভালো একটি সম্পর্ক আছে উল্লেখ করে বলেন, ‘খাসোগি হত্যা তুরস্ক ও সৌদি আরবের পারস্পরিক সম্পর্কে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। তিনি আরো বলেন, আমরা চাই না, এ ঘটনার কারণে (জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড) তা কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হোক। যত দিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আমাদের বাদশা, তত দিন তা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
তুরস্কের সংবাদ মাধ্যম বলছে, সৌদি কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত কনস্যুলেটের ভেতরে একটি কুয়ায় তল্লাশি চালানোর অনুমতি দেননি তদন্তকারীদের।
সৌদি আরব বলেছে, খাসোগির মৃতদেহ কোথায় তা তারা জানে না। তবে বর্তমানে খুন হওয়া সাংবাদিক জামাল খাসোগির মৃতদেহের সন্ধান পাওয়াটা এখন তদন্তের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জামাল খাসোগির মৃতদেহের খন্ডিত অংশ পাওয়া গেছে বলে খবর বেরিয়েছে। তুরস্কের বিরোধীদলের একজন নেতাকে উদ্ধৃত করে কিছু সংবাদপত্র সৌদি কনসাল জেনারেলের বাড়ির বাগানে এবং কুয়াতে মৃতদেহ পাবার কথা বলছে।
কিন্তু তুরস্কের পুলিশ সূত্রগুলো এসব খবর সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, তারা এখনো মৃতদেহের সন্ধান করছে।
ইতোমধ্যে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর প্রধান জিনা হ্যাসপেল তুরস্কে সফরে গিয়েছেন, এবং সেদেশের গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ তাকে এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে অডিও-ভিডিও রেকর্ডিং দেখিয়েছেন বলে তুরস্কের দুটি সংবাদপত্র রিপোর্ট করেছে।
দৈনিক সাবাহ সংবাদপত্র বলছে, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তার সাথে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর থেকে করা রেকর্ডিং শেয়ার করেছেন। যাতে ওই হত্যাকান্ডের বীভৎস খুঁটিনাটি আছে।
একজন সৌদি কর্মকর্তা নাম উল্লেখ না করে বার্তা সংস্থা রয়টারকে বলেছেন, ধস্তাধস্তির সময় খাসোগির গলা পেঁচিয়ে ধরায় তিনি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান, তারপর তার মৃতদেহ একটি কার্পেটে জড়িয়ে ফেলে দেবার জন্য একজন স্থানীয় সহযোগীর হাতে তুলে দেয়া হয়।
গত ২ অক্টোবর খাসোগি তার বিবাহবিচ্ছেদের দলিলপত্র সংগ্রহ করতে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর আর বের হননি। সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সূত্র উদ্ধৃত করে বলা হয়, সৌদি আরব থেকে আসা ১৫ জনের একটি দল তাকে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করে এবং তার লাশ টুকরো টুকরো করে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পর পর দ্বিতীয়বার বলেছেন, সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকান্ডকে তিনি কোনোভাবেই ধামাচাপা পড়তে দেবেন না।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান অভিযোগ করেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকান্ড যা ঘটিয়েছে সৌদি গোয়েন্দা এবং অন্য কর্মকর্তারা। ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটের মধ্যে এই হত্যাকান্ডে যাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা ছিল, যাদের নির্দেশে এই হত্যাকান্ড হয়েছে। তাদের শাস্তি পেতে হবে।
সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মন্তব্য বলেছেন, খাসোগির হত্যাকান্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য চেষ্টা।
সৌদি নাগরিক ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগিকে হত্যার দিন তার সাথে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটে গিয়েছিলেন খাসোগির প্রেমিকা হ্যাতিস সেঙ্গিজ। জানা যায়, তুর্কি নাগরিক হ্যাতিসকে সাথে নিয়েই তাদের বিয়ে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের জন্য সেদিন সেখানে গিয়েছিলেন খাসোগি। হ্যাতিসকে বাইরে রেখে একাই ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরও তিনি ফিরে না আসায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হ্যাতিস।
প্রথমে অস্বীকার করার পর পরে অবশ্য সৌদি আরব স্বীকার করেছে যে, দূতাবাসের ভেতরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আলোড়ন চলছে বিশ্বজুড়ে। বিভিন্ন দেশ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে। সৌদি আরবের পাল্টা হুমকিতে পরিস্থিতি এখন ঘোলাটে।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে তুরস্ক। মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান পার্লামেন্টে এ বিষয়ে বিভিন্ন বিষয় তুলে বলেন, তিনি এ ঘটনার আরো গভীরে যাবেন।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচক ও ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাসোগি গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসুলেটে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করে প্রেমিকাকে বিয়ে করার কথা ছিল তার। হ্যাতিস সেদিন তার প্রেমিকের ফিরে আসার অপেক্ষায় কনসুলেটের বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন। জামাল খাসোগি ফেরত না আসায় তিনিই মিডিয়াকে প্রথম জানান নিখোঁজের ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় তদন্তে বেরিয়ে আসে খাসোগিকে সৌদি আরব হত্যা করেছে ওই কনসুলেটের ভিতরে। এর ফলে হ্যাতিসের জীবন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই তুরস্ক সরকার তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে।
হ্যাতিস সেঙ্গিজকে ২৪ ঘন্টার নিরাপত্তা দিচ্ছে তুরস্ক। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি গত ২১ অক্টোবর এমনটাই জানিয়েছে।
ইস্তাম্বুল গভর্নরের অফিসে থেকে এ জন্য একটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, হ্যাতিস সেঙ্গিজকে নিরাপত্তা দিতে হবে। এ নির্দেশের ফলে ইস্তাম্বুল পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তাকে নিরাপত্তা দেবে।
উল্লেখ্য, তুর্কি নাগরিক হ্যাতিস ইস্তাম্বুলে একজন ডক্টরাল স্টুডেন্ট।
২০ অক্টোবর সৌদি আরব খাসোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করার পর একটি মর্মস্পর্শী টুইট করেন হ্যাতিস। তিনি লিখেন : ‘তারা তোমার শরীরটাকে পৃথিবী থেকে তুলে নিয়ে গেছে কিন্তু তোমার সুন্দর হাসিটি পৃথিবীতে চিরকাল রয়ে যাবে’।
বিডি২৪লাইভ/এসএস
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: