সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরু

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২২ এএম

সংসদে পাসকৃত ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’র বিভিন্ন ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এরই মধ্যে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে।

শনিবার (২৭ অক্টোবর) সংগঠনটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সংসদ সদস্য ওয়াজিউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে যুগোপযোগী আধুনিক ও উন্নত সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের দাবি করে আসছে। আমাদের দাবিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সরকার আইন পাস করলেও অনেকগুলো ধারা শ্রমিকদের স্বার্থের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। যেখানে পরিবহন শ্রমিকদের চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমরা জানি দুর্ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটে না, কিন্তু অপরাধ পরিকল্পিতভাবেই ঘটে। দুর্ঘটনা মামলায় তদন্ত করে অপরাধী হিসেবে বিচারে ৩০২ ধারায় শ্রমিকদের ফাঁসি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমনিতেই প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি চালায় তার ওপর আবার বিচারের মৃত্যুর ঝুঁকি। এ কারণে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পেশা ছেড়ে দেয়ার চিন্তা শুরু করে দিয়েছে।

সড়ক পরিবহন জনগুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সড়ক পরিবহন এর প্রধান চালিকা শক্তি শ্রমিক। এই শ্রমিকদের সমাজ ও জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আইনের এই ধারাগুলো বিশেষ মহলকে খুশি করতে পারলেও জাতীয় জীবনে চরম বিপর্যয়ের সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। যা আমাদের কাম্য নয়।

তাই এই আইনের সংশোধন করা ও বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আমরা ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। এ লক্ষ্যে রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হবে।

শ্রমিকদের ৮ দফা দাবিগুলো হলো:

১. সড়ক দুর্ঘটনায় সকল মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে।

২. শ্রমিকদের অর্থদণ্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না।

৩. সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে।

৪. ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে।

৫. ওয়েস্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করতে হবে।

৬. সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

৭. গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. সকল জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে। লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।

এর আগে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ গত ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে ধর্মঘট করেছিল। পরবর্তীতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছিল ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা।

এদিকে, শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জে ট্রাকচালক-শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার (২৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুপুর ২টায় থেকে ৩টা পর্যন্ত পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করেছে।

অন্যদিকে, সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। বিশেষ করে রাজধানীতে অফিসগামী যাত্রীরা পড়েছে বিপাকে। রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে থাকলেও কোন গাড়ি না থাকায় কেউ কেউ পাঠাও, উবার, সিএনজিতে করে অতিরিক্তি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে অফিসে।

এ বিষয়ে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে শ্যামলী আসা কাওসার নামে এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সকাল বেলা রাস্তায় এসে দেখি বাস নেই। কিন্তু অফিসে তো যেতে হবে। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সিএনজি দিয়ে আসতে হল। আর এরা এই সুযোগে নির্ধারিত ভাড়া চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: