৮০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ১০:০০ এএম

কাজী সোহাগ: নির্বাচনের আগেই অন্তত ৮০টি আসনে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়বে আওয়ামী লীগ। এসব আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের শক্ত প্রতিপক্ষ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বেশির ভাগ আসনে রয়েছেন একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী। এসব আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা পাল্টাপাল্টি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এক নেতা অন্য নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। প্রকাশ্যে সভা সমাবেশে একে অন্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন। এমনকি কেন্দ্র পর্যন্ত অভিযোগ নিয়ে আসছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সাংগঠনিক জরিপ অনুযায়ী অন্তত ৮০টি আসনে এমন অবস্থা বিরাজ করছে।

এসব আসনে একক প্রার্থী ঠিক করা এবং প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার পর সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থীকে বশে আনা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কেন্দ্র থেকে আগেই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ প্রার্থী হলে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। 

দলীয় সূত্র বলছে, অন্যান্য আসনে ছোটখাটো বিরোধ থাকলেও তা মেটানো সম্ভব। তবে এসব আসনের বিরোধ মেটানো জটিল ও কঠিন। চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ আসনগুলোতে রয়েছেন সরকারের প্রভাবশালী কয়েক মন্ত্রীও। 

আবার স্থানীয় এমপির বিপক্ষে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও। পাশাপাশি আসনগুলোতে রয়েছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। এমন কয়েকটি আসন রয়েছে যেখানে এক নেতা আরেক নেতার মুখ পর্যন্ত দেখেন না। সেখানে দলীয় কর্মসূচি পালন করা হয় আলাদাভাবে। এদিকে দলের নির্দেশে বিরোধপূর্ণ আসনগুলোতে সবাই নৌকার পক্ষে ভোট চাইলেও গণসংযোগ করছেন পৃথকভাবে। এতে কর্মী ও সমর্থকরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছেন। কোন কোন স্থানে এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আর দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কারণে এক ডজন এমপিকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা, প্রতিহত করার ডাক কিংবা মনোনয়ন না দেয়ার জন্য প্রকাশ্যে কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। 

নির্বাচনের আগে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের এক রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ওই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, দলীয় কোন্দল ও মনোনয়ন বিরোধ দলের পক্ষ থেকে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। তবে এসব বিরোধকে খুব স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন দলের শীর্ষ নেতারা। 

তিনি বলেন, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে দলে অনেক নতুন মুখ এসেছে। তাদের প্রায় প্রত্যেকের রয়েছে জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বগুণ। তাই নির্বাচনের আগে এ ধরনের বিরোধ হতেই পারে। 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, দলীয় কোন্দলের বিষয়টি সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন দলের সভাপতি।

তিনি নিজের তত্ত্বাবধানে সার্ভে করাচ্ছেন। তিনি বলেন, মনোনয়ন বোর্ড যখন কাউকে নৌকার প্রতীক দেবে তখন সবাই এক হয়ে কাজ করবে। তবে এ পর্যন্ত আমার বিভাগে (চট্টগ্রাম) অন্তত বড় ধরনের কোনো বিরোধ নেই। আমলে নেয়ার মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি। এসব জায়গায় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে তবে সেটাকে সংঘর্ষের পর্যায়ে নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। 

এদিকে শুক্রবারের যৌথসভা শেষে অনেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, সালাম যারা করেছেন, তাদের সালাম নিয়েছেন তিনি। তবে মনোনয়ন পাবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা নেই। আর মনোনয়ন না পেয়ে দলের বিরোধিতা করলে এবং এ কারণে দল হারলে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। এটা যেন সবাই মনে রাখেন। 

মনোনয়ন কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে যৌথসভায় শেখ হাসিনা নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এ বিষয়ে এখন অনানুষ্ঠানিক প্রস্তুতি চলবে। তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।

একই বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচনী এলাকা ও এমপিদের অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে করা একাধিক জরিপ প্রতিবেদন তার কাছে আছে। এসব প্রতিবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, অন্তত ৭০ জন সংসদ সদস্যের অবস্থা ভালো নয়।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনবিচ্ছিন্ন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। কাউকে মনোনয়ন থেকে বাদ দেয়া হলেও যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তার পক্ষে কাজ করতে হবে। 

কেউ পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতা করলে তাৎক্ষণিকভাবে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। অতীতে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শাস্তি দিয়ে ক্ষমা করা হয়েছে। এবার আর তা করা হবে না। 

আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি নানা সংস্থা দিয়ে জরিপ চালিয়েছেন। এসব জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে যারা ভালো অবস্থানে আছেন, তাদের একটি তালিকা করেছেন। এ তালিকায় মন্ত্রী, সংসদ সদস্যের পাশাপাশি নতুন প্রার্থীও আছেন। আর জনপ্রিয়তার দিক থেকে পিছিয়ে এমন তালিকাও আছে। এই সংখ্যাটা প্রায় ১০০। কাউকে কাউকে নিজের অবস্থান উন্নতির জন্য দল থেকে আগেই তাগিদ দেয়া হয়েছিল। এরপর অনেকে নিজের অবস্থান কিছুটা সংহত করতে সক্ষমও হন। তবে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। 

এদিকে বিরোধপূর্ণ নির্বাচনী আসনগুলোতে জোটের শরিক দলগুলোকে নিয়ে বিরোধের নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর পাশাপাশি শরিক দলের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপাচ্ছেন। ভোট চাচ্ছেন নৌকা প্রতীকের পক্ষে। এ ধরনের প্রচারণায় ক্ষুব্ধ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। 

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সমর্থিত এমপি একেএম রেজাউল করিম তানসেনের নির্বাচনী জনসভার পোস্টারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি শোভা পায়। ছবির নিচের অংশে জাসদের মশাল প্রতীকের ছবি থাকলেও ভোট চাওয়া হয়েছে নৌকার। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। বিষয়টি অবগত হয়েছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সূত্র: মনবজমিন

বিডি২৪লাইভ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: