জটিলতায় খালেদা তারেকের নেতৃত্ব

প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:২৪ এএম

কাফি কামাল: বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশের কারণে নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি। বিশেষ করে বিএনপির নেতৃত্ব দানে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সামনে তৈরি হয়েছে আইনি জটিলতা। হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশের ফলে গঠনতন্ত্রের ওই সংশোধনী আপাতত কার্যকর থাকছে না। ফলে দুটি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দলীয় নেতৃত্বে রাখা এবং নির্বাচনে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সুযোগও আটকে যাচ্ছে। বিএনপি নেতারা অবশ্য বলছেন, পুরো বিষয়টির পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। 

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপিকে বিব্রত করতে এটি করা হচ্ছে’। 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যে রায় হয়েছে তা ভয়ংকর।

বিএনপির নেতৃত্বে জিয়া পরিবারের কেউ যেন না থাকতে পারে সেই ইঙ্গিতপূর্ণ একটি রায় আদালত দিয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আজ বলতে পারবো না। কারণ রায়ের বিস্তারিত এখনো পড়ে দেখিনি। তবে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে আগামী নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। কারণ তারা জিয়া পরিবারকে ভয় পায়। এই ষড়যন্ত্র জনগণ সফল হতে দেবে না। 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, জনসমর্থিত ও গণমানুষের দল বিএনপি। মানুষের ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন হয়েছেন, তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন। কে কী বলল, তাতে আমাদের কিছু আসে-যায় না। খালেদা জিয়া আমাদের দলের চেয়ারপারসন, বর্তমানে তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান-এই বিশ্বাস নিয়ে দেশের মানুষ সংগ্রাম করে যাবে।’ 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, যে ব্যক্তি রিট পিটিশন করেছেন, তার এই রিট পিটিশন করার কোন এখতিয়ার নেই। এখানে রিট পিটিশন মেইন্টেনেবল না। এখানে বিএনপির লোকজনকে পক্ষ করা হয়নি, বিএনপির অথরিটিকে পক্ষ করা হয়নি। আমরা আদেশের কপি সংগ্রহ করছি, যদি দেখি যে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া দরকার, সে ক্ষেত্রে সেটাই নেব। অনেক সময় আদালতকে ভুল বুঝিয়ে অর্ডার নিয়ে নেয়া হয়। এটা নিয়ে আমরা বসব, সিনিয়র আইনজীবীরা বসবেন, তারপর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তিনি বলেন, আদেশটি হয়েছে আমাদের আদালত বর্জনের দিন, আমরা ওই আদালতেও যেতে পারি, আপিলও করতে পারি। এটা তো শেষ আদেশ না, এরপর আপিল আছে বা এই আদালতে স্টে-ভ্যাকেটের (স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া) জন্য যেতে পারি, কেননা রিটে আমাদের পক্ষ করা হয়নি। 

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে অব্যাহত ষড়যন্ত্র তারই অংশ হিসেবে এসব করা হচ্ছে। যিনি এই ব্যাপারে রিট করেছেন তিনি বিএনপির কেউ নন, তার এই রিট করার কোন অধিকারই নেই। জনস্বার্থ মামলার সর্বশেষ যে গাইডলাইন দিয়েছে উচ্চ আদালত সেখানেও জনৈক ব্যক্তির মামলা করার অধিকার নেই। তার পরও উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব হচ্ছে। 

তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র আটকে দিয়ে বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করতে পারবে না। এখন স্থায়ী কমিটির যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে কোন সমস্যা নেই; যত ষড়যন্ত্রই হোক দলের নেতাকর্মীরা তাদের মনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নেতার আসনে রেখেই রাজনীতি ও আন্দোলন করবে। 

দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে দলীয় গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনী এনেছিল বিএনপি। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে বিলুপ্ত করা হয় ৭ ধারা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাক্ষরে ওই সংশোধিত গঠনতন্ত্র ইসির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় দুর্নীতি মামলার সাজায় তার কারাগারে যাওয়ার ১০ দিন আগে ২০১৮ সালের ২৮শে জানুয়ারি। এ সময় গঠনতন্ত্র থেকে ৭ ধারাটি বাদ দেয়ার ঘটনায় নানামুখী আলোচনার শিকার হয় বিএনপি। 

এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ই জুলাই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে দলীয় গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সর্বসম্মত প্রস্তাবে বিলুপ্ত ৭ নম্বর ধারার অনুরূপ একটি ধারা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিওতে সংযোজন করার অপচেষ্টা চলছে। এরপর ওই ধারার দোহাই দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ 

তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপিকে বিপর্যস্ত করতে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছেন শেখ হাসিনা। মঈন-ফখরুদ্দীন যে কায়দায় বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছিল, সেই একই কায়দায় পুনরায় বিছানো হচ্ছে ষড়যন্ত্রের জাল। বিএনপির বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হবে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের সংস্থাগুলো নানামুখী তৎপরতায় যুক্ত হয়ে পড়েছে। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকার তার বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনের আরপিও সংক্রান্ত কিছু উদ্দেশ্যপূর্ণ রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য মাঠে নেমেছে।’ 

সেদিন মির্জা আলমগীর বলেছিলেন, ‘২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে সপ্তম ধারা বাতিলসহ দলের গঠনতন্ত্রে সর্বশেষ সংশোধন করা হয়। যা পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়।’ 

তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রের অংশ দলের সদস্যপদের আবেদনপত্র সংশোধন করে ‘আমি কখনোই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না’ এ বাক্যটি সংযোজন করা হয়। আমাদের জানামতে কোনো দলের গঠনতন্ত্রে সদস্য পদ লাভের জন্য এমন ঘোষণা দেয়ার বিধান নেই। 

মির্জা আলমগীর বলেছিলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত থেকে দুর্নীতির দায়ে ১৩ বছরের সাজা পেয়েও আদালতকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে সরকারের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এখনো সংসদে, মন্ত্রিসভায় এবং আওয়ামী লীগে তার সদস্যপদ ও নেতৃত্ব বহাল রেখেছেন।’

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ইসিতে নিবন্ধিত হওয়ার সময় দলীয় গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়। পরবর্তী সময়ে তা সংশোধন করা হলে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিল হলেও সেখানে আনা সংশোধনী দীর্ঘদিন ইসিতে জমা দেয়নি দলটি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপিকে চিঠিও দেয়া হয়েছিল। সূ্ত্র: মানবজমিন

বিডি২৪লাইভ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: