যুক্তফ্রন্টের ৭ দফা দাবিতে যা আছে

প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৩৬ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সংলাপ চলছে গণভবনে। বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি, অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি. চৌধুরী) নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়। সেখানে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে না দেয়া হলেও নিষ্ক্রিয় করা, জাতীয় সরকার গঠন, সীমিত ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন করা, ইভিএম বাতিল, রাজবন্দীদের মুক্তিসহ এ ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেছে যুক্তফ্রন্ট।

শুক্রবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ দিকে গণভবনে বৈঠকে যুক্তফ্রন্টের নেতারা এসব দাবি তুলে ধরেন।

যুক্তফ্রন্টের দাবিগুলো হল:

নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া না গেলেও নিষ্ক্রিয় করা: নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সম্ভব না হলে নিষ্ক্রিয় করতে হবে। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার: নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কর্মচারীদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন শতভাগ রাষ্ট্রপতির অধীনস্থ করতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর এমপিরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনও প্রকল্প উদ্বোধন বা প্রতিশ্রুতি যাতে না দিতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় আইন করে মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করতে হবে। সরকারি দলের প্রার্থীদের বিল বোর্ড, ব্যানার, পোস্টার অপসারণ করতে হবে।

জাতীয় সরকার গঠন: নির্বাচনকালীন সরকার চাই। জাতীয় সরকার গঠন: প্রয়োজনে এক দিনের জন্য সংসদ ডেকে জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। অথবা মন্ত্রিপরিষদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা জোট থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েও একটি সন্তোষজনক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচনে সকল প্রকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার অথবা বর্তমান সরকারের নির্বাচন বিষয়ে সম্পূর্ণ ক্ষমতা সীমিত করতে হবে।

সীমিত ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন করা: আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আমাদের জন্য গর্বের। তারা বিভিন্ন দেশে নির্বাচনকালীন সহিংসতা রোধ ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ সুনামের সঙ্গে করে আসছে। সুতরাং নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলার বিঘ্ন না ঘটে-সেহেতু আমাদের প্রস্তাব:

ক. সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এবং নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর পর্যন্ত মোতায়েন করতে হবে।

খ. নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনীকে সীমিত ক্ষমতা দিতে হবে যেমন, আটক রাখার ক্ষমতা ও তাদের ভোট কেন্দ্রে থাকতে দিতে হবে। যাতে করে ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।

ইভিএম বাতিল: আধুনিক এবং বিজ্ঞানমনস্ক নির্বাচনে আমাদের অনেক আগ্রহ আছে, কিন্তু ইভিএম সম্পর্কিত যেসব প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জন প্রয়োজন তা আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথেষ্ট নেই। সেজন্য এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সঠিক হবে না বলে আমরা মনে করি।

রাজবন্দীদের মুক্তি: নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।

নির্বাচন সম্পর্কিত মামলা প্রত্যাহার: নির্বাচন সম্পর্কিত মামলা নির্বাচনের পর এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন অতি সত্বর প্রণয়ন করতে হবে।

এর আগে সংলাপে অংশ নিতে শুক্রবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জোট নেতা ও বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদল গণভবনে প্রবেশ করেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে ২১ সদস্য বিশিষ্ট দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

যুক্তফ্রন্টের প্রতিনিধিদল অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান, মোহাম্মদ ইউসুফ, সহ-সভাপতি মাহমুদা চৌধুরী, সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজা, বিএলডিপি সভাপতি নাজিমউদ্দীন আল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গণি, মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মর্তুজা এবং জাতীয় জনতা পার্টির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী তাঁর দলের সঙ্গে সংলাপে বসতে শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠান। পরে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সংলাপের জন্য বি. চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানান।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: