এখনও পলাতক ১১ খুনি

প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:২০ এএম

জাতির ইতিহাসে কলঙ্কময় জেলহত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচার ২০১৩ সালে নিষ্পত্তি হলেও পলাতক থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা এখনও কার্যকর হয়নি। কলঙ্কময় এই হত্যা মামলার ১১ আসামি বিদেশে পলাতক আছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওই খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা রয়েছে, সে বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে।

পলাতক ১১ জনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হল- মোসলেহ উদ্দীন, বহিষ্কৃত দুই সেনা সদস্য দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাসেম মৃধা।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হল- আহমেদ শরফুল হোসেন, কিসমত হাশেম, নাজমূল হোসেন আনসার, খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও আবদুল মাজেদ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর একই বছর ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে।

কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এমন জঘন্য, নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।

জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, জেলহত্যা মামলার পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের বিষয়ে চেষ্টা চলছে। যারা এখনও পলাতক আছেন, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার কাজ চলছে।

তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা আছে, তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন তৎকালীন ডিআইজি (প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে জেলহত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে।

২ বছর তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ ১৯৯৮ সালের ২০ অক্টোবর ২০ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

এরপর দীর্ঘ ৬ বছরেরও বেশি সময় চলে বিচারকাজ। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি দফাদার আবুল হাসেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

অপর ১২ আসামি খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, মো. কিসমত হোসেন, নাজমুল হোসেন আনসার, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান ও সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া ৫ জন হলেন- বিএনপি নেতা প্রয়াত কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ও মো. খায়রুজ্জামান।

উচ্চ আদালতে মামলার নিষ্পত্তি : যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে দেয়া রায়ে ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনকে খালাস দিয়েছিলেন। তবে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি হিসেবে এ চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এদিকে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট এক রায়ে শুধু রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।

মৃত্যুদপ্রাপ্ত দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধা এবং যাজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর চার আসামিকে খালাস দেয়া হয়।

হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত এ চারজনের ফাঁসি কার্যকর হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার আবারও ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ফাঁসির তিন আসামির মধ্যে শুধু দু’জনকে খালাস দেয়ায় রায়ের ওই অংশটির বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি দফাদার আবুল হাসেম মৃধার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর ওই রায়ের ২৩৫ পৃষ্ঠার অনুলিপি প্রকাশ পায়।

বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার লেখা ওই রায়ে বলা হয়, ‘এ মামলায় পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে যে, ২ নভেম্বর রাতে রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে এ দুই আসামি কারাগারে ঢুকেছিলেন। তাদের সঙ্গে আরও দুই সামরিক বাহিনীর লোক ছিল। তারা তাদের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে হত্যা করে। হাইকোর্ট বিভাগ এ দুই অভিযুক্তকে নির্দোষ দেখিয়ে ভুল এবং অবিচার করেছে।’.

বিডি২৪লাইভ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: