সুন্দরী স্ত্রীকে দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ
রুদ্র মিজান: ফেসবুকের টাইম লাইনে নানা অ্যাঙ্গেলের ছবি। ভিডিও। দেখতে খুবই সুন্দরী। প্রতিদিনই একাধিক স্ট্যাটাস লিখে পোস্ট করেন। বেশিরভাগ স্ট্যাটাসই থাকে রোমান্টিক। সুন্দরী তরুণীর ছবি দেখে সহজেই আকৃষ্ট হন অনেকে। তারপর বন্ধুতা, চ্যাট। টাইম লাইনে যত রোমান্টিক চ্যাটে তার চেয়ে বেশি।
রোমান্টিকতার সঙ্গে ব্যবহার করেন শারীরিক প্রসঙ্গ। আকর্ষণ করেন ভিন্ন জগতে। সরাসারি জানিয়ে দেন অর্থের বিনিময়ে সঙ্গী হন তিনি। এভাবেই শুরু। মূলত এটি একটি চক্র। নানা কৌশলে ফাঁদ পাতা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফাঁদে পা দিলে একটার পর একটা প্রলোভন। প্রলোভনে পড়ে সর্বস্ব খুঁইয়েছেন অনেকে।
অনুসন্ধানে এ রকমই একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে এই চক্রের সদস্যদের বাস। চক্রে জড়িত করা হয়েছিল এক তরুণীকে। শেষ পর্যন্ত চক্র থেকে বের হয়েছেন ওই তরুণী।
তবে, অপকর্ম থেকে থেমে নেই চক্রটি। চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণী।
মূলত অল্প সময়ে বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার জন্যই বিভিন্ন নামে ফেসবুকে আইডি খুলে এই চক্র। আইডিতে নিজ স্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে ছদ্মনাম দিতো। চক্রের মূল হোতা ওই তরুণীর স্বামী তৌহিদুল ইসলাম আকাশ।
তরুণীর তথ্যানুসারে, স্বামীর কথায় বাধ্য হয়েই এই অপকর্মে লিপ্ত হন তিনি। তার ফোনে কল দিতো অচেনা পুরুষরা। কথা বলতো। দীর্ঘসময় কথা বলা ছাড়াও তারা ইমো, ভাইবারে ওই তরুণীকে দেখতে চাইতো। তরুণী ক্যামেরার সামনে যেতে সম্মত না হলে মারধর করা হতো। বাধ্য হয়েই স্বামীর কথায় সেজেগুজে ক্যামেরার সামনে বসতে হতো তাকে। ওপাশে থাকা পুরুষ লোকটির নানা কথার উত্তর দিতে হতো। অভিনয় করে হাসতে হতো। আকর্ষণীয় একটা ভাব প্রকাশ করে ক্যামেরার সামনে বসতেন তিনি। শুরুতে কথা বলেই আয় করতেন।
তরুণী জানান, প্রবাসীরা কথা বলার জন্য টাকা পাঠাতো। এক ঘণ্টা কথা বললে ১০০০ টাকা পাঠাতো। কথা বলার আগেই টাকা পাঠাতো। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আগে ফোনে কল দিয়ে হাই-হ্যালো করতো। তারপর প্রবাসীদের প্রত্যাশা বেড়ে যেতো। ভিডিও কলে তরুণীকে দেখতে চাইতো তারা। তখন আরো রেট বাড়িয়ে দেয়া হতো। কিন্তু মূল কাহিনী ঘটতো সরাসরি। ফেসবুকের মাধ্যমে চ্যাট করে, ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার পর সরাসরি ফূর্তি করতে আগ্রহীদের ডাকা হতো ধামরাইয়ের নির্জন স্থানে। উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পুরুষ ব্যক্তি আসতো ঠিকানা অনুসারে। তাকে রিসিভ করতেন ওই তরুণী। এজন্য তাকে নানাভাবে সাজতে হতো। কখনো থ্রি পিস, টু পিস, কখনো জিন্সের প্যান্ট, টিশার্ট বা গেঞ্জি পড়তে হতো। নির্ধারিত স্থান থেকে রিসিভ করে পুরুষ ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হতো নির্দিষ্ট স্থানে।
সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হতো চক্রের কয়েক জনকে। দেশীয় অস্ত্র, ক্যামেরা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করতো তারা। স্বামী আকাশের কথানুসারে নেয়া হতো নির্জন ঘরে। নদীর ওপাড়ে একটি খামার বাড়িতে। ঘরে ঢোকা মাত্রই ঘটতো মূল ঘটনা। আকাশ ও তার সঙ্গীরা ওই ঘরে ঢুকে যুবককে আটক করতো। প্রথমে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ কেড়ে নিতো। মারধর করতো। তারা এটিএম কার্ড চাইতো। তা পেলে জেনে নিতো পিন নম্বর। এছাড়াও বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে টাকা আদায় করতো। এভাবে এক-একজনের কাছ থেকে ৩০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করতো এই চক্র।
তরুণী জানান, এই অপকর্মে কোনোভাবেই জড়িত হতে চাননি তিনি। এ নিয়ে আকাশ ও তার মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। কিন্তু পালিয়ে বিয়ে করেছেন। সংসার চলছিল না কিছুতেই। না খেয়েও থাকতে হয়েছে তাদের। তবু এভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে রাজি হননি। রাজি না হলে তাকে বেদম প্রহার করা হয়। বাধ্য হয়েই আকাশের কথামতো কাজ করে যেতে হতো। ক্রমেই আকাশের অত্যাচার বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত অন্য পুরুষের শয্যাসঙ্গী হতেও প্রস্তাব দেয়া হয় তাকে। এতে ক্ষুব্ধ হন তরুণী। তখনই আকাশ ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মারধর করা হয় তাকে।
শেষ পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নিয়েছেন নির্যাতিতা। বিষয়টি তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পলাতক রয়েছে আকাশসহ এই চক্রের সদস্যরা।
সিটিটিসি’র সাইবার ইউনিটের উপ-কমিশনার মো: আলীমুজ্জামান বলেন, সাইবার ক্রাইমের বেশিরভাগ অভিযোগই ব্যক্তিগত বিষয়। বিশেষ করে প্রেম ভালোবাসা থেকে ব্ল্যাকমেইল কেন্দ্রিক। এ রকম অভিযোগ পেলে সাইবার ক্রাইম দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বলে জানান তিনি। সূত্র: মানবজমিন
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: