যে ২ কারণে পেছাবে না ভোট

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:০৮ এএম

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বরের পর আর পিছানোর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের বেজমেন্টে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তবে এসব কথা বলেন তিনি ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জানান, ৩০০ আসনের গেজেট এছাড়াও টঙ্গিতে ইজতেমার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন এটা হবে ১১ তারিখে তখন সরকার অত্যন্ত ব্যস্ত থাকে। কারণ এদিকে যত্ন সহকারে নজর রাখে আর কম্প্যাক্ট টাইম।

ভোট না পেছানোর পক্ষে দুটি যুক্তি তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। এরপরে আর এটা পেছানোর সুযোগ নেই। কেন পেছানো যাবে না, নানা কারণে আপনাদের (রিটার্নিং কর্মকর্তা) এটা জানা দরকার।’

প্রথমত- তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে সংসদ অধিবেশন বসতে হবে। আপনাদের কাছ থেকে ফলাফল আসবে। এর জন্য ২৯ দিন কিন্তু খুব বড় একটা সময় নয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৩০০ আসনের গেজেট তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে না।’

দ্বিতীয়ত- সিইসি বলেন, ‘টঙ্গীতে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা ১১ ডিসেম্বর বলে আমাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বাইরে থেকে মানুষ আসেন। বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে তাদের আনতে হয়, ৮-১০ দিন সময় লাগে। ১ থেকে ২ তারিখের মধ্যেই তাদের ঢাকায় আনতে হয়। আবার ঢাকা থেকে ফেরত পাঠাতে হয়। ৩০ তারিখ আমাদের জন্য অত্যন্ত কমপ্যাক্ট টাইম। এজন্য যে সময় দেয়া দরকার, সেটা আমরা বিভিন্ন কারণে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের বলেছিলেন- তাদের বড় দিনের আগে বা পরে ভোট করার। আমরা চেষ্টা করেছিলাম, এজন্য ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করে ২৩ ডিসেম্বর দিয়েছিলাম। এরপর সব রাজনৈতিক দল তফসিল পেছানোর অনুরোধ করল। আমরা খুশি হয়েছি। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ দিয়েছি। এটিকে সামনে রেখেই আপনাদের সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হবে।’

নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেজন্য সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতিকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হবে। আপনাদের মাধ্যমেই এটা সম্ভব হবে বলে আমি আশা করি, প্রত্যাশা রাখি।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার বক্তব্যে যেমনটি বলেছেন- ১৬ কোটি মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে। শুধু তাই নয়, আপনারা তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা কোথায় যায়, কার সঙ্গে কি কথা বলেন, সবই মানুষ নিবীড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। সুতরাং আপনাদের মাধ্যমে নতুন অবয়বে, নতুন আঙ্গিকে, নতুন একটা প্রেক্ষাপটের মধ্যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে।’

সিইসি আরও বলেন, ‘আসলেই এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বাংলাদেশে কখনো রাষ্ট্রপতি শাসিত, কখনো সেনা বাহিনীর অধীনে, কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু, সংসদ বহাল থেকে, সরকারের অধীনে নির্বাচন এবারই প্রথম। এজন্য প্রেক্ষাপটও একটু ভিন্ন। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অনেক গুণ বেড়ে গেছে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এবার নতুন একটা ইতিহাস তৈরি হবে। কারণ, এরপর থেকে এই অবস্থাই থাকবে। সরকার থেকেই নির্বাচন হবে, যেটা অনেক দেশে হয়। আর সেটা নির্ভর করবে এবারের নির্বাচনের স্বার্থকতার উপরে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এসব মাথায় রেখেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু করতে যা করা প্রয়োজন কমিশন তা করবে। এ কাজে রিটানিং কর্মকর্তাদের বেশি সহায়তা করতে হবে। তাদের হাতে অনেক ক্ষমতা রয়েছে সংবিধান অনুযায়ী।’

এর আগে, ভোট পেছানো সংক্রান্ত বিভিন্ন জোটের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার নির্বাচনের তারিখের পুনঃতফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের ভোট পেছানোর দাবির পর সোমবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পুনঃতফসিল প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পুনঃতফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর এবং ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন।

এর আগের ঘোষিত তফসিল ছিল- ২৩ ডিসেম্বর হবে ভোটগ্রহণ। মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ২২ নভেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর এবং ৫ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া কথা ছিল।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: