কোন পথে ইসি?

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:০২ এএম

দলীয় সরকারের অধিনে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণমূল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতির পাশাপাশি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি পুলিশ প্রশাসন ও ক্ষমতাশীনদের বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও হয়রানি অভিযোগ করে আসছে। এ নিয়ে তারা ইসিতে একাধিক লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা ইসির জন্য এক প্রকার চাপ বলে মনে করেছেন অনেকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা গত ১৩ নভেম্বর রিটানিং কর্মকর্র্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ২০১৪ সালে সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু তখন সব দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আসলেই এ বছরের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কখনও রাষ্ট্রপতি শাসিত, কখনও সেনাবাহিনীর অধীনে, কখনও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এবারই সরকারের অধীনে নির্বাচন। আপনাদের মাধ্যমে নতুন একটা ইতিহাস তৈরি হবে। কেননা এই নির্বাচন যদি সফল হয়, তাহলে এরপর থেকে হয়ত সরকার ও সংসদ থেকেই নির্বাচন পরিচালিত হবে। স্থিতিশীল অবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে এ পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি। তাদের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা, পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক হয়রানি ও আচরণ, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করা হয়েছে।

গত ১৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পরে ৭৭৩ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তারে দাবি করে এর প্রতিকার চেয়ে সিইসির কাছে চিঠি দেয় বিএনপি।

তারআগে গত ১৬ নভেম্বর সিইসির কাছের ৪৭২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের তালিকা জমা দিয়েছিলো বিএনপি।

বিএনপির মামলার তালিকা প্রসঙ্গে গতকাল সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেন, মামলার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে শুরুতে ৪ থেকে ৫ হাজার জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওই সব মামলা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের। আর এবারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে করা মামলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য বিএনপির পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। তাই ব্যবস্থা নিতে পারছি না।

গত ২০ নভেম্বর পৃথক পাঁচটি চিঠি সিইসি বরাবর জমা দেয় ঐক্যফ্রন্ট। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা, জেলা প্রশাসনে নিয়োজিত ৪৫ উপদেষ্টাকে বাতিল, ড্রোন উড়িয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এবং প্রশাসনে রদবদলের দাবি জানায়।

এ প্রসঙ্গে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ঢালাও রদবদল প্রস্তাব ইসি গ্রহণ করবে না। অভিযোগ স্পেসিফিক হতে হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ গতকাল পুলিশের ৭০জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের ২২ জনের প্রত্যাহারে দাবিসহ ১৩ দফা অভিযোগ দাখিল করে প্রতিকার চেয়েছে দলটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন বাংলাদেশে নতুন। এরআগের নির্বাচনে (দশম সংসদ নির্বাচন) সব দল অংশগ্রহণ করেনি। সেই নির্বাচন নিয়ে সব মহলে প্রশ্ন রয়েছে। এরমধ্যে দলীয় প্রতীকে চলতি বছর অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচন নিয়েও কমিশনকে অনেক সমালোচনা মুখে পরতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতে এবারের সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি করা ইসির জন্য বড় চাপের। তবে কমিশন সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসি কর্মকর্তারা আরো জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নই সবচেয়ে বেশি পর্যবেক্ষক পাঠায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সহিংসতার কারণ দেখিয়ে সংস্থাটি প্রথম মুখ ফিরিয়ে নেয়। এরপর সংস্থাটির পথ ধরে অন্যরাও সে বছর নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেনি। ২০০৮ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এই সংস্থাটিই সব থেকে বেশি পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সবার অংশগ্রহন নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ইসি এখন অনেকটাই চাপের মধ্যে আছে। তারা এখন উত্তপ্ত সিটে আছে। এই চাপ তারা সহ্য করতে পারকে কি-না সেটাই দেখার বিষয়।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন সততার সাথে সঠিকবাবে দায়িত্ব পালন করলে সুষ্ঠু জাতীকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব। তারা সেই দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করতে পারে কনি-না সেটাই এখন দেখার বিষয়। সময় সেটা বলে দিবে।

বিডি২৪লাইভ/এআই।এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: