একাদশ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হলে গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাস হবে

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৮ পিএম

বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় মহাজোট; অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে তুলছে। আর এই জোট দুটির মূল লড়াইটা হতে যাচ্ছে ‘নৌকা’ এবং ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে। জোটের অন্য শরিক দলগুলো ইতোমধ্যেই এই দুটি প্রতীকেই ভোট করতে সম্মত হয়েছে। সব দল ও জোট নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা ও প্রস্তুতি শুরু করলেও বিরোধী জোটের শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকা না থাকার বিষয়ে কিছুটা সংশয় থেকে যাচ্ছে। 

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলো নিয়ে বেশ সমালোচনা মুখে পরেছে। এতে কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে পারিবারিক খোঁজ-খবর নেয়ার বিষয়টি নিয়ে বিরোধী জোট যে আপত্তি তুলেছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কিছু জানে না বলে জনগণকে সচেতন করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে না পারলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী পরিবেশের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু না। আর নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের যথাযথ ও ন্যায্য ভূমিকা পালনের বিষয়ে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন উঠতে থাকলে নির্বাচনে সাধারণ জনগণের আস্থার জায়গা অনেকটা নড়বড়ে হয়ে যাবে বলেই বিজ্ঞজনদের ধারণা। 

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমত, সব দলের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা প্রদান করা; দ্বিতীয়ত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য কিংবা অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে দেশের রাজনীতিতে চিরতরে আস্থার অপমৃত্যু হবে। আগামী নির্বাচনই হবে ভবিষ্যতে সাধারণ জনগণের ভোটে অংশ নেওয়ার আগ্রহ কিংবা অনাগ্রহের ভিত্তি। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতাশীন দলের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হতে যা। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু হলে রাজনীতিতে জনগণের আস্থা তৈরি হবে এবং জনগণ রাজনীতির একটি সুষ্ঠু প্লাটফর্ম পাবে। কমপক্ষে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগে আস্থার পরিবেশ তৈরির ভিত্তি হিসেবে হলেও এই নির্বাচনটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আর এ দায়িত্ব ক্ষমতাশীল দলকেই নিতে হবে।বিরোধী জোট নানাভাবে এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ক্ষমতাশীল দলকে অবশ্যই জনগণের আস্থার জায়গা তৈরি করে দিয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নিতে হবে।            

বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে সরকারি দলের প্রার্থীদের ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ওই নির্বাচনটি দেশ-বিদেশে নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হয় যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নটি শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও আলোচনার খোরাক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনটি সব দলের অংশগ্রহণে হবে কিনা, সেই আলোচনাটি আজ বিশ্বব্যাপী। গত ১৫ নভেম্বরের ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিতর্কে বলা হয়েছে, এ নির্বাচনই শেষ সুযোগ, যেখানে নির্ধারিত হবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে, নাকি পরিস্থিতি অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হবে। নির্বাচনের পরিবেশকে আস্থার জায়গায় রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর সযত্ন প্রচেষ্টা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও উদার মনোভাব থাকতে হবে। এই পরিবেশ তৈরিতে সবচেয়ে বেশি  ইতিবাচক হতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। 

এই মুহূর্তে অনেকের মনেই একটি আশংকার জায়গা আছে আর তা হলো- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট  নির্বাচনে না আসকে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা কিনা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসা না আসার সঙ্গে কি খুব বেশি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়া না হওয়ার প্রশ্ন আছে? তারা নির্বাচনে না এলে মূলত তাদের রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই বরং এ ক্ষেত্রে পাল্টা আওয়ামী লীগেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ চলে আসবে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কিংবা প্রশাসনের যেমন দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তেমনি দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইতিবাচক  দায়িত্ব পালনের কোনো বিকল্প নেই। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে শুধু পরাজিত শক্তি মনে করলে সেটি হবে তাদের জন্য অদূরদর্শী। আবার বিএনপিকেও গণতান্ত্রিক আচরণ অব্যাহত রাখার মাধ্যমেই রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ ও ভূমিকার ওপরই আগামী নির্বাচনে সাধারণ জনগণের আস্থার জায়গা তৈরির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রশাসন যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে ইতিবাচক হয় আর নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো যদি পারষ্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জনগণকে আস্থার জায়গায় নিয়ে আসতে পারে তাহলে বাংলাদেশ হবে গণতন্ত্র চর্চার রোল মডেল। তখন আর কোনো রাজনৈতিক দলকে পরামর্শের জন্য বিদেশীদের দ্বারস্থ হতে হবে না।

মোস্তফা কামাল     
লেখক,গবেষক ও প্রাবন্ধিক    

খোলা কলামে প্রকাশিত লেখার সাথে প্রতিষ্ঠানের কোন সম্পর্ক নেই। এটা লেখকের একান্ত মতামত।     

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: