ঘরে বাইরের বিদ্রোহে বেকায়দায় বিএনপি!

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৯ এএম

সবই ঠিকঠাক ছিল। সমস্যাটা হলো শনিবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন জামায়াত নেতা আবদুল হালিমের হাতে ২২ জনের মনোনয়ন তুলে দিলেন তখনই। সারা রাত চলল এ নিয়ে দেন দরবার। কাজের কাজ কিছুই হলো না। ২২ আসনের বেশি পাচ্ছে না দলটি। তাদের দাবি ২৫টি, তবে আরও দুটি আসন উন্মুক্ত।

জামায়াতকে তার চাহিদা অনুযায়ী আসন না দেয়ায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে দলটি নেতাকর্মীদের মাঝে। এর প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনি মাঠে বলে ধারণা অনেকের। জামায়াত আরও ২৮টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে নামতে পারে বলে একটি গোপন সূত্রে জানা গেছে।

জামায়াত তাদের দ্রোহ রাজপথে না দেখালেও বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতরা ঠিকই দেখিয়েছেন। তারা শনিবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে রোববার (৯ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত কয়েকবার হামলা চালিয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে। হামলার শিকার হয়েছেন দলটি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। আহত হয়েছেন তার গাড়ি চালক।

শীর্ষ নেতাদের কার্যালয়ে আটকে রেখেই কয়েক দফা তালাবদ্ধ করে রাখে বিএনপির নয়াপল্টনের কেদ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। শনিবার সন্ধ্যার পরে গুলশান কার্যালয়ে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের হামলায় সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। শনিবার সারা দিনই গুলশান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে মনোনয়ন বঞ্চিতরা। কেন্দ্রীয় নেতাদের কোন ঘোষণাই মানছেন না বিদ্রোহীরা। ঘরে বাইরের এ বিদ্রোহে কিছুটা হলেও বেকায়দায় পড়েছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।

শুধু ঢাকায়ই নয়, বিএনপির এ বিদ্রোহ ঢাকার বাইরেও দেখা গেছে। মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি থেকে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মনোনয়ন বঞ্চিত শেখ আব্দুল্লাহর শতাধিক নেতা-কর্মী।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, বিষয়টি সাময়িক। ভোটের মাঠে এর প্রভাব পড়বে না। তাদের আশা ধানের শীষ পেলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ধানের শীষ হলো একটি আবেগের নাম। শত বাধা আসলেও এই ধানের শীষকে কেউ নেতা-কর্মীদের থেকে দূরে রাখতে পারবে না। নির্বাচনী মাঠে ধানের শীষ পেলে সবাই সবকিছু ভুলে যাবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন। এটা সাময়িক, সবসময়ই এটা হয়ে থাকে।

এদিকে, শেষ পর্যন্ত দেন দরবার করছে জামায়াত। তাদের খুশি করতে না পারলে ভোটের মাঠে সমস্যায় পড়তে পারে বিএনপি।

জামায়াতের নেতারা বলছেন, বরাবরই জামায়াতকে ছাড় দিতে হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশি ছাড় দিতে হয়েছে। এক্ষেত্রে দর কষাকষি করলেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপির অটল অবস্থান ও টানা অনুরোধের কারণে রবিউল বাশার (সাতক্ষীরা-৩), ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী (সিলেট-৫), হাবিবুর রহমান (সিলেট-৬) আসনগুলোতে ছাড় দিতে হলো

জানতে চাইলে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের তো বরাবরই কোরবানি হতে হয়। আমাদের তিনটি সিট কম দিয়েছে। তদবির করার পরও তিনটি দিল না, ২২টি পেলাম।’

তবে সিলেট জামায়াতের নেতারা বলছেন, সিলেট-৫ এ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী উইনিং ক্যান্ডিডেট। তিনি আগেও নির্বাচিত হয়েছেন। তার জায়গায় জমিয়তের (কাশেমী অংশ) উবায়দুল্লাহ ফারুককে মনোনয়ন দেওয়ায় জেতার বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিগত নির্বাচনে উবায়দুল্লাহ ফারুকের ভোটপ্রাপ্তির সংখ্যা ছিল খুবই কম।

জামায়াত বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জামায়াত এ দশ বছর অনেক কষ্ট করেছে। বিএনপির এ জোট ক্ষমতায় আসলে জামায়াতকে মূলায়ন করা হবে।

তবে বলা যায়, শীর্ষ দু’নেতা মাঠে না থাকা, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বন্ধু জামায়াত ও দলীয় নেতা-কর্মীদের বিদ্রোহের কারণে কিছুটা হলেও বেকায়দায় বিএনপি।

বিডি২৪লাইভ/এএফকে/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: