শেষ দিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিরোধের পরিকল্পনা, এরপর আন্দোলন
মাত্র ১১ দিন পরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এখনো জমে ওঠেনি প্রচার-প্রচারণা। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগেই সময় যাচ্ছে বড় দু’জোটের। মাঠেই নামতে পারছে না বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ইতোমধ্যে নিরাপত্তাহীন কথা জানিয়ে নির্বাচনী এলাকা ছেড়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী রেজা কিবরিয়া। হামলা হয়েছে বিরোধী এ জোটের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপরও। এ সব ঘটনায় উৎসব হারিয়েছে একাদশ জাতীয় নির্বাচন।
মহাজোট প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় কিছুটা দেখা গেলেও অতীতের তুলনায় তা নগণ্য। আর বিরোধী জোটের প্রচারণায় দেখতে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার। এবার শুরুতেই নির্বাচনী সহিংসতায় মৃত্যু, প্রার্থী গ্রেপ্তার, হামলা, মামলায় উদ্বেগ-আতঙ্কে ঐক্যফ্রন্টের বহু নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া। পুরুষ ছাড়া এলাকাগুলোতে গভীর রাতে নারীদের পোস্টার সাটানোর কাজ করতে দেখা গেছে।
গত একসপ্তাহে অর্ধশত জেলায় শতাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঐক্যফ্রন্টের তথ্যমতে, প্রার্থীসহ প্রায় ৮০০ উপরে গ্রেপ্তার। এমন পরিস্থিতেও ক্ষমতাসীনদের সাথে প্রতিরোধে মাঠে থাকতে চূড়ান্ত পথে এগুচ্ছে তারা। নীরব আর কৌশলেই হাটছে রাজনৈতিক মাঠের সবচেয়ে বড় জোটটি।
ঐক্যফ্রন্টের এক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিরোধ এবং আন্দোলন থেকে ব্যালটবক্স সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট কৌশলেই হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। রাজনৈতিক চাপ, আন্তর্জাতিক চাপ, সবকিছুই সমন্বয় করে চলতে হচ্ছে। এখন মাঠে কিছুটা ঢিলেঢালাভাবে দেখালেও শেষ মুহূর্তে পূর্ণশক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা সকলেরই এক কথা। তারা বলছেন, সরকার চাইছে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াক। এজন্য হামলা মামলা করছে। যতই হামলা মামলা করা হোক না কেন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকার ঘোষণা তাদের।
গত সোমবার রাতে এক বৈঠকে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কৌশলে স্বল্প পরিসরে মাঠে থাকবে তারা।
ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের দাবি, জনগণ ঐক্য থাকলে কোন শক্তিই কাজে আসবে না। পরিবর্তন হতে বাধ্য। জনগণের কাছে মার খেয়ে যাবে সকল ষড়যন্ত্র। তারা আরো বলছেন, পরিবর্তনের সবুজ বার্তা নিয়েই ঐক্যফ্রন্ট গঠন। সংলাপ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকা সবই আন্দোলনের অংশ। সফলভাবে ঐক্য গঠন, এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকা সবই নির্দিষ্ট ছকের আলোকে হচ্ছে। শেষ ফলাফলটাও ছকের আকারে সম্পন্ন হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতেও আশাবাদি ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনের ৩-৫ দিন আগে থেকে তাদের একমাসের মজবুত পরিকল্পনা আছে। শেষ তিনদিন মাঠে থেকে ভোটে টিকে থাকতে পারলে সবুজ সংকেত আসবে দৃঢ়বিশ্বাস রাখছেন শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা। আর যদি পরাজয় ঘটে তাহলে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই টানা আন্দোলন দেয়া হবে। আন্দোলনের চূড়ান্তরূপে আরেকটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতেও ক্ষমতাসীনরা বাধ্য হবেন এমন মত ড. কামালের নেতৃত্বে থাকা ঐক্যফ্রন্টের।
এছাড়া জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তি ভাবাচ্ছে সরকারকে। দীর্ঘদিন আন্দোলনের বাইরে তারা। এখনো নীরব। সরকারের ধারণা, শেষ কামড় দিতে পারে দলটি। পরিবর্তনে ঐক্যফ্রন্ট সেই জামায়াতের শক্তিই কাজে লাগাতে চায় বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
সোমবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ড. কামাল হোসেন বলেন, কোথাও আমাদের ধানের শীষের প্রার্থীরা নামতে পারছে না। আমাদের প্রার্থীরা মাঠে নামলেই তাদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। ঢাকা শহরের কোথাও ধানের শীষের পোস্টার নেই। কেন পোস্টার নেই সে বিষয়ে আপনারা খবর নেন।
তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, সরকার যদি বুদ্ধি খাটিয়ে আমাদের বর্জনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পার পাবে। মরে গেলেও আমরা নির্বাচন বর্জন করব না। আমার লাশ নিয়ে ভোট দিতে নিয়ে যাবে। আমার আঙ্গুলটা তো থাকবে, সেটা দিয়ে ভোট দেবে। ইলেকশন হতে হবে। তারা যদি চাই জঘন্যভাবে হামলা করবে, আমারা ইলেকশন করব না; এটা হবে না।
বিএনপির মাহসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টর মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মির্জা আব্বাসের ওপরে হামলা হয়েছে। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে গুলি করা হয়েছে। সুব্রত চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে। তাকে প্রচারণা করতে দেয়নি। নবী উল্লাহ নবীর এলাকায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন প্রার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে, অথচ নির্বাচন কমিশন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, কিছুই করে না। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করবেন না। অবিলম্বে হামলা-মামলা গ্রেফতার বন্ধ করুন, অন্যথায় সব দায় দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘আমি মোটেও মনে করি না নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং বলে কিছু আছে। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটা এখন একটা অর্থহীন কথায় পর্যবসিত হয়েছে।’
নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন আমরা সরাসরি করি না। রিটার্নিং কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে। তাদের বাহিনীর সদস্যরা কতটা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে তা তারা বলতে পারবেন।’
আসম আব্দুর রব বলেন, ‘এর আগে বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করার নজির নেই। এবার প্রার্থীদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাহলে নির্বাচন হবে কীভাবে।’
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, সরকার, নির্বাচন কমিশন, সব প্রশাসনের লোকজন ভোটের মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিপক্ষে নেমেছে। আমাদের ওপর হামলা করার সময় পুলিশ দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে পুলিশ বলে ওপরের নির্দেশ নেই।
বিডি২৪লাইভ/এএফকে/এমআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: