যে কারণে স্থগিত ২৯ কেন্দ্রের ভোট

প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৪ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংঘাত ও সহিংসতাসহ ব্যালট পেপার ছিনতাই বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে ২৯৯টি আসনের ৪০ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৯টি ভোটকেন্দ্র স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সারা দেশের নির্বাচনী রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাই, সহিংসতা এবং আরও বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে এসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ছাড়াও দু-একটি হতাহতের ঘটনাও রয়েছে।

রংপুর-২: আসনে কালীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং কতিপয় দুষ্কৃতকারী কর্তৃক জালভোট প্রদানের প্রচেষ্টায় কারণে ভোট গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১: আসনে চারটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো তেররশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজগন্নাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং চার হাসানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ব্যালট পেপার ছিনতাই ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার কারণে ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে।

শেরপুর-১: আসনে দুটি কেন্দ্রে দুষ্কৃতকারীরা অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে ভোটকেন্দ্রে দখলের চেষ্টা করে। তারা ব্যালট পেপার ছিনতাই হয় এবং ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়। পরিস্থিতি প্রিসাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তাই ভোটকেন্দ্র ভোট গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রগুলো হলো, জামিয়া আরাবিয়া তালিমুননেছা মহিলা মাদ্রাসা এবং সাহাব্দিরচর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নরসিংদী-৩: আসনে কোন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ায় এবং ৬টি ব্যালট বাক্স ছিনতাই হওয়ায় ভোট গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বাহ্মণবাড়িয়া-১: আসনে দুটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্র দুটি ধানতলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কোয়রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বাহ্মণবাড়িয়া-২: আসনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে প্রিসাইডিং অফিসার তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রগুলো হলো, যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সোহাগপুর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩: আসনে রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হওয়ায় দুপুর ১টায় ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়।

কুমিল্লা-১: আসনে ভেলানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রটিতে ৫টি ব্যালট বাক্স ভাঙচুর এবং ব্যালট পেপার ছিনতাই হওয়ায় ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।

কুমিল্লা-৭: আসনে পশ্চিম বেলাশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র স্থগিত হয়। ব্যালট বাক্স ছিনতাই এবং ভাঙচুর হয়। ব্যালট বাক্স ছিনতাইকালে একজন ছিনতাইকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।

কুমিল্লা-৮: আসনে আড্ডা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার কারণে কেন্দ্রটিতে ভোট স্থগিত হয়।

কুমিল্লা-১০: আসনে বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে দুষ্কৃতকারী কর্তৃক প্রায় ১ হাজার ৮০০ ব্যালট পেপার পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

চাঁদপুর-৫: আসনে দক্ষিণ বড়কুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ব্যালট পেপার চুরি হওয়ায় ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

নোয়াখালী-১: আসনে তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয় ।কেন্দ্রগুলো হলো, কেগনা নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নওয়াবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়।

নোয়াখালী-২: আসনে মধ্য নাটেশ্বর ইসলামিয়া ইবতেদায়ি নূরানি দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রটিতে দুষ্কৃতকারী কর্তৃক প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পুলিশসহ মোট ৭ থেকে ৮ জন আহত হওয়ায় ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়।

নোয়াখালী-৩: আসনে চারটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট বাক্স এবং নির্বাচনী মালামাল ছিনতাইয়ের কারণে ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রগুলো হলো, খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য নরোত্তমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব বাবুনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সুনামগঞ্জ-৩: আসনে কারাড়াই মাদ্রাসায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই হওয়ার কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়।

সুনামগঞ্জ-৫: আসনে কলাউড়া দারুস সুন্নাহ কাসিমিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্র্রটিতে ভোট গ্রহণ বন্ধ আছে।

কক্সবাজার-১: আসনে মাতবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে ভোটকেন্দ্রর বাইরে দুপক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে আবদুল্লাহ আল-ফারুক নামে একজন মৃত্যুবরণ করে।

চট্টগ্রাম-১০: আসনে শহীদনগর সিটি কর্পোরেশন সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে ভোট গ্রহণে অনিয়ম থাকায় ভোট স্থগিত করে বাধ্য হয় প্রিসাইডিং অফিসার।

রাঙামাটি একটি কেন্দ্রটিতে ভোর আনুমানিক সাড়ে ৬টায় ঘাগড়া ইউনিয়ানাধীন রাঙ্গীপাড়ায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১০ থেকে ১২ জন কর্মী আহত হন। গুরুতর আহত ২ জনের মধ্যে ঘাগড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বশিরউদ্দিন মৃত্যুবরণ করে।

ফলাফল ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, গোলযোগ এবং অনিয়মের কারণে ২২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বাদ বাকি সব কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে এবং ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ সুসম্পন্ন হয়েছে।

সারা দেশে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এগুলো কমিশনের নজরে এসেছে। এই সহিংস ঘটনার প্রত্যেকটি বিষয় তদন্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন জানান সচিব।

বিডি২৪লাইভ/এসএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: