আদালতে ক্ষোভ প্রকাশ করে যা বললেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:৫৮ পিএম

নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পুরাতন ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে বসছে আদালত। মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯ নং বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে তাকে হুইল চেয়ারে করে হাজির করা হয়।

পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মামলা চলছে সেই কক্ষের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলছেন, এতো ছোট জায়গায় মামলা চলতে পারে না। এখানে আমাদের কোনো আইনজীবী বসতে পারেন না। এখানে মামলা চললে আমি আর আদালতে আসব না।

ওই আদালতে হাজির হয়ে আদালতে জায়গা সঙ্কট দেখে ঢাকার ৯ নং বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, এখানে আইনজীবীদর গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আপনারা সাজা দিলে দিয়ে দেন, তাও আমি এ আদালতে আসব না। 

এই কারাগারেই দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বন্দী রয়েছেন খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ১০ জন এই মামলার আসামি।

মামলাসূত্রে জানা যায়, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।

মামলা করার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সাংসদ এমএএইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

এর আগে ৯ ডিসেম্বর প্রতিবেদন গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে আদালতকে বলেন, এ মামলাটির বিচার দেশে এবং বিদেশে হচ্ছে। বিদেশিরা যে তদন্ত করেছেন সে বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

অপরদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার এ বিষয়ে শুনানির জন্য তারিখ পেছানোর আবেদন করেন এবং এ বিষয়ে আপত্তি দেবেন বলে আদালতে মৌখিকভাবে জানান। তারা বলেন, এ মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব আসামির উপস্থিতিতে মামলাটি শুনানি করা হোক।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার ৯ নং বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান আপত্তি দাখিল এবং এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।

২২ নভেম্বর ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে এ মামলায় রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। খালেদাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়াও মামলায় রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সাক্ষ্য নিতেও আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আদালত শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখা হয়। সেখান থেকেই গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয়। টানা এক মাস ২ দিন বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: