মোস্তাফিজের চেয়েও ভয়ংকর মাশরাফি
ক্রিকেট বিশ্বে ‘কাটার মাস্টার’ নামেই পরিচিতি পেয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ পেসার মোস্তাফিজুর রহমান।
এই তো ২০১৫ সালে ফিরে গেলেই সবার চোখের সামনে ভেসে উঠবে ‘কাটার’ কারিশমা। এই মোস্তাফিজ এই কাটারের মায়াজালেই বিদ্ধ করেছিলেন- পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
অবশ্য ইনজুরি এবং ফর্মহীনতার কারণে ২০১৫-১৬ সালের মোস্তাফিজকে খুব একটা দেখেনি ক্রিকেটপ্রেমীরা। যেমনটি অভিভাবক মাশরাফির আড়ালে লোকে দেখেও দেখছে না পারফর্মার মাশরাফিকে।
মাশরাফি বিন মুর্তজা এই নামটা একজন নেতার, একজন অনুপ্রেরণাদায়ী অভিভাবকের, একজন ‘বড়ভাই’র। কিন্তু, এই অভিভাবক সত্তার জন্য আলোচনার টেবিলে পারফর্মার মাশরাফি খুব কৌশলে ঢাকা পড়ে যান, অথচ বাংলাদেশ দল হোক কিংবা বিপিএল ফ্রাঞ্চাইজি দল- বেশির ভাগ সময়ই মাশরাফির এনে দেয়া দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্পেলের ব্রেক থ্রুগুলোই ম্যাচের ‘টেকনিক্যাল টার্নিং পয়েন্ট’ হয়ে দাঁড়ায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ব্রেক থ্রু গুলো মাশরাফি এনে দেন কাটারে। ‘কাটার’? মাশরাফি? হ্যাঁ, আপনার অবাক লাগতেই পারে। কিন্তু গত ৫-৬ বছর ধরে মাশরাফির সব থেকে বড় অস্ত্র এটাই। পা দুটো বেইমানি করছে বহু আগ থেকেই, গতিও আগের মত নেই। আছে দুটো জিনিস– স্পট এবং কাটার। গত ৩ বছরে মাশরাফী তার কাটারে প্রচুর সংখ্যক উইকেট নিয়েছেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সাথে ম্যাচে ৪ টির ৪ টিই নিলেন কাটারে। এক্ষেত্রে মাশরাফী ২ টা জায়গা বেশীর ভাগ সময় অবলম্বন করেন। ব্যাক অফ লেন্থ, অথবা গুড লেন্থ।
আরেকটু সোজা বাংলায় বললে ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে ৬ থেকে ৯ মিটার দূরত্বের মধ্যে বল রাখেন এবং সেক্ষেত্রে অফ স্ট্যাম্প চ্যানেল বা তার একটু বাইরে থেকে ইন কাটার বা আউট সুইংগিং কাটার করেন। এদিন ২টি উইকেট তিনি পেয়েছেন এভাবে। তবে, তামিম এবং স্মিথ এর বিশেষ দুটি উইকেট পেয়েছেন স্লটে কাটার দিয়ে অর্থাৎ ব্যাট থেকে ২-৩ মিটার আগে বল পিচ করিয়ে। দুজনকেই আগে কয়েকটি বল ব্যাক অফ লেন্থ বা গুড লেন্থ এ মিস করিয়ে এরপর শট খেলতে বাধ্য করিয়েছেন, যার ফলাফল দুজনই মিড অফে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন।
হ্যাঁ, এই ম্যাচে অফিসিয়ালি প্রাপ্ত স্বীকৃতি পেয়েছেন পারফর্মার মাশরাফি যেটা হয়তো বেশির ভাগ সময়ই পান না। এই তো আগের ম্যাচেই ভয়ংকর হয়ে উঠা পল স্টারলিংকে কাটারের মায়াজালেই বিদ্ধ করলেন। স্টারলিং বারবার জোরের উপর করা অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলগুলো ফ্লিক বা গ্লান্স করে স্কয়ার লেগ বা ফাইন লেগ দিয়ে চার মারছিলেন। দ্বিতীয় স্পেলে এসে মাশরাফি অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ব্যাক অফ লেন্থ এ বল পিচ করিয়ে ইনসুইংগিং স্লোয়ারে বোল্ড করলেন স্টারলিংকে। এমন কাজ মাশরাফি আগেও করেছেন।
যেমন ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড বধের ম্যাচে ভয়ংকর হয়ে উঠা ইয়ান বেল এবং এলেক্স হেলস এর ৯০ রানের পার্টনারশিপ মাশরাফি ভেঙ্গেছিলেন কাটারে। ২০১৫ সালেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারিস সোহেল-সাদ নাসিমের ৭৭ রানের পার্টনারশিপ, তৃতীয় ওয়ানডেতে হারিস সোহেল-আজহার আলীর ১০০ কিংবা সে বছরই ইংল্যান্ডের সাথে স্বল্প পুঁজি নিয়ে লড়তে নেমে ইনফর্ম বেন স্টোকসকে বোল্ড করা– এসব কিছুই হয়েছে কাটারে। গত এশিয়া কাপেও এমন রেকর্ড আছে তার।
এই ঘটনাগুলো পরিসংখ্যানের দিক থেকে হয়তো খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা না, রেকর্ড বুকে লেখাও নেই। কিন্তু টেকনিক্যালি এগুলো ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। এই টার্নিং পয়েন্টগুলো হয়তো খুব একটা আলোচনায় আসে না। ক্রিকেট এমনই, এখানে এমন ছোট ছোট নগণ্য ঘটনাগুলো বড় বড় ইতিহাসের জন্ম দেয়- কিন্তু চলচ্চিত্রের পার্শ্ব নায়কের মত আড়ালে থেকে যায়। তবে এখানে প্রতিযোগিতাটা মাশরাফির নিজের সাথে নিজেরই। এখানে মূল নায়ক অধিনায়ক মাশরাফি, পার্শ্ব নায়ক পারফর্মার মাশরাফি।
পরিশেষে এ কথা বলাই যায়, মোস্তাফিজুর রহমানের চেয়েও ভয়ংকর মাশরাফি বিন মুর্তজা।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: