মেয়েদের নিয়ে গতকালের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন শফী
অতীতে নারীদের নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক মন্তব্য করে আলোচনায় আসা হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফি আবারো নতুন করে আলোচনায়। এবার তিনি মেয়েদের পড়াশুনা নিয়ে মন্তব্য করে তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।
শুক্রবার চট্টগ্রামের আল জমিআতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দি সম্মেলনে মেয়েদের স্কুলে-কলেজে না পাঠানোর জন্য সেখানে উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষকে ওয়াদা করিয়েছেন। তার মতে, স্কুল-কলেজে মেয়েদের না পড়ানোই ভালো। আর পড়ালেও সেটা সর্বোচ্চ চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত।
এবার মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে দেয়া বক্তব্যের ব্যাখা দিলেন হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। আজ শনিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আল্লামা শফী দাবি করেন, মাহফিলে দেয়া তার বক্তব্যের একটি খণ্ডাংশ বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপাত্র মাসিক মুঈনুল ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক সরওয়ার কামাল প্রেরিত ওই বিবৃতিতে হেফাজত আমির বলেন, বক্তব্যে আমি মূলত বলতে চেয়েছি ইসলামের মৌলিক বিধান পর্দার লঙ্ঘন হয়, এমন প্রতিষ্ঠানে নারীদের পড়াশোনা করানো উচিত হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এখানে শিক্ষা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ যাবতীয় সব কিছুই রয়েছে। ইসলামে নারীদের শিক্ষার বিষয় উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সবাই অবগত যে, উম্মুল মুমিনিন হজরত মা আয়েশা (রা.) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। তিনি শিক্ষাগ্রহণ না করলে উম্মত অনেক হাদিস থেকে মাহরুম হয়ে যেত।
ইসলামের একটি মৌলিক বিধান হচ্ছে পর্দা উল্লেখ বিবৃতিতে তিনি বলেন, নারীদের পর্দার বিষয় ইসলামে সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। আমি আমার বক্তব্যে বলতে চেয়েছি, শিক্ষাগ্রহণ করতে গিয়ে যেন পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা না হয়। কারণ আমাদের দেশের বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে সহশিক্ষা দেয়া হয়, অর্থাৎ ছেলেমেয়ে একই সঙ্গে শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। এতে করে পর্দার লঙ্ঘন হয়। আমি মূলত এই সহশিক্ষা গ্রহণেই মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছি।
অভিযোগ করে আল্লামা শফী বলেন, সংবাদমাধ্যমে আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছে। আমি কওমিপন্থী ছয় বোর্ডের নিয়ন্ত্রণকারী হাইয়াতুল উলইয়ালিল জামিয়াতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করছি। আপনারা জানেন যে, ওই ছয় বোর্ডের অধীনে হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সনদ গ্রহণ করে থাকেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান প্রদান করেছেন। এতে করে আমাদের দেশের লাখো মাদ্রাসাছাত্র ও ছাত্রীরা দাওয়ারে হাদিস পাস করে মাস্টার্সের সমমান অর্জন করছেন। যে সম্মিলিত বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে হাজার হাজার নারী রাষ্ট্র স্বীকৃত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত বলে পরিগণিত হচ্ছে, সেই বোর্ডের প্রধান হয়ে আমি কীভাবে নারী শিক্ষার বিরোধী হলাম তা বোধগম্য নয়।
হেফাজত আমির বলেন, নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে নই, তবে নারীর জন্য নিরাপদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয় আমরা আগেও সতর্ক করেছি, এখনো করছি। আমরা চাই নারীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হোক, তবে সেটা অবশ্যই নিরাপদ পরিবেশে থেকে এবং ইসলামের মৌলিক বিধানকে লঙ্ঘন না করে। শিক্ষাগ্রহণ অবশ্যই জরুরি, তবে সেটা গ্রহণের জন্য আমরা আমাদের কন্যাদের অনিরাপদ পরিবেশে পাঠাতে পারি না।
‘আমি চাই এ দেশের নারীরা শিক্ষিত হোক, কারণ মা শিক্ষিত হলেও সন্তান সঠিক শিক্ষা পাবে। নারীদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য পরিবেশ তৈরি করুন। যেখানে পরিচালক থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা সবাই নারী থাকবেন। সে ধরনের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকলে আমরা তাতে উৎসাহিত করব।
এর আগে, শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসার ১১৮তম বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দি সম্মেলনে ওই মাদ্রাসার পরিচালক ও হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি। যারা তার আদর্শ অনুসরণ করবে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তিতে থাকবে। পরকালে তারাই হবে সফলকাম ব্যক্তি। এ জন্য মাহফিলে উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হাত তুলে ওয়াদা করেন।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে দেবেন না। বেশি হলে ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে পারবেন। আর বেশি যদি পড়ান পত্রপত্রিকায় দেখতেছেন আপনারা। ওই মাইয়া (মেয়ে) ক্লাস এইট, নাইন, টেন, এমএ ও বিএ পর্যন্ত পড়ালে কিছুদিন পর আপনার মেয়ে থাকবে না। তাই আপনারা আমার সঙ্গে ওয়াদা করেন। বেশি পড়ালে আপনার মেয়েকে টানাটানি করে অন্য পুরুষ নিয়ে যাবে। আমার এ ওয়াজটা মনে রাখবেন।
শাহ আহমদ শফির এ মন্তব্য এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষই এর সমালোচনা করে বলছেন, আহমদ শফির এই বক্তব্য নারীদের পিছিয়ে রাখার জন্য নতুন অপচেষ্টা। কেননা বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী তার যোগ্যতার প্রমাণ রেখে পুরুষের পাশাপাশি থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে নারী তার সাফল্যের চিহ্ন রাখেনি। দেশের উন্নয়ন সূচকেও নারীর এ অবদানের কথা উঠে এসেছে। সেই প্রশংসা বার্তা এসেছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকেও।
বিডি২৪লাইভ/এআইআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: