হার না মানা এক অনুপ্রেরণার নাম শাহনাজ
জীবন সংগ্রামী এক নারীর নাম শাহনাজ আক্তার পুতুল। সমাজে নানা ধরনের পেশা থাকতেও জীবিকা হিসেবে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং বেছে নিয়েছেন তিনি। দিনে-রাতে যাত্রী পরিবহন করেন এই নারী।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাইকটা ঠেলে নিয়ে বের হন। এর আগে অবশ্য তার সন্তান বাবাহীন ক্লাস ওয়ানে পড়ুয়া বাচ্চাটার মুখে তুলে খাইয়ে দেন। আর নাইনে পড়ুয়া মেয়েটার কাঁধে সযত্নে তুলে দেন স্কুলের ব্যাগ। বাইরে বের হয়ে ঋণের টাকায় কেনা মোটর বাইকটা যখন স্টার্ট দেন বাইকের চাকার সাথে তখন তার দুই মেয়ের ভবিষ্যতের চাকাও যেন ঘুরতে শুরু করে। নিজের বর্তমান-ভবিষ্যত নিয়ে উদাসীন এই সংগ্রামী নারী সন্তানদের ভবিষ্যত সুখ স্বপ্ন চোখে নিয়ে পাড়ি দিতে থাকেন মাইলের পর মাইল। মোটর বাইকের চাকার প্রতিটি ঘূর্ণন সুঁই-সুতার মতো বুনে চলে তার সেই স্বপ্ন।
একজন নারীর জন্য অর্থ আয়ের সবচেয়ে আদি ও সহজ পথে পা না দিয়ে যে মোটর সাইকেলটিকে পুঁজি করে বন্ধুর পথে তিনি পা বাড়িয়েছিলেন, গত মঙ্গলবার এক দুর্বৃত্ত কাজের নাম করে সেই মোটর বাইকটিকে নিয়ে পালিয়ে যায়। সাথে করে নিয়ে গেছে ক্লাস ওয়ান এবং নাইনে পড়ুয়া বাচ্চা দুটোর ভবিষ্যৎ আর শাহনাজের স্বপ্ন। শাহনাজের চোখে শুধুই অশ্রু! নিজের সেই একমাত্র উপার্জনের বাইকটি হারিয়ে অঝরে শুধু কেঁদেই চলেছেন। এরপরে রাজধানীর শেরে বাংলা থানায় জিডি করেন আর কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই ভেবে যে তার এই বাইক কেনার টাকা এখনও শোধ করা হয়নি। এছাড়াও নিজের দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
থানায় জিডি করার পর থানা থেকে ঐ প্রতারককে ধরার চেষ্টা করা হয়। বাইক চুরির ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছিলেন তেজগাঁও বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন। শাহনাজের বাইক চুরির ঘটনাটি জানার পর থেকেই বাইকটি উদ্ধারের জন্য সব ধরনের প্রযুক্তি ও কৌশলে কাজ শুরু করে পুলিশ। শাহনাজের দেওয়া ঘটনার বর্ণনা অনুযায়ী ওই এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। সেই সিসিটিভি ফুটেজে চোরের চেহারা দেখা গিয়েছিল। এরপর বাইকটি উদ্ধারের জন্য নানা দিকে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। সর্বশেষ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রাতে অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে স্কুটি মোটরবাইকটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় প্রতারক জনিকেও আটক করা হয়েছে।
রাজধানীর মিরপুরে জন্ম শাহনাজের। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বাবা নেই, মা আর বোনেরা আছেন। ২০০০ সালে কৈশোরে মিরপুরের এক ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। দুই মেয়েকে নিয়ে মা–বোনদের সহায়তায় দিন যাচ্ছিল তার। এক মেয়ে নবম ও এক মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। খুবই কষ্টে দিন যাচ্ছিল। বাইক নিয়ে পথে নেমে পড়েছেন জীবন সংগ্রামে। দুই মেয়েকে স্কুলে নেওয়া, খাবার তৈরিসহ বিভিন্ন কাজ শেষ করে মায়ের বাসায় মেয়েদের রেখে কাজে বের হতে দুই-তিনটা বেজে যায়। সব খরচ বাদ দিয়ে পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা নিয়ে প্রতিদিন ঘরে ফিরেন শাহনাজ।
প্রতিদিন যখন রাস্তায় মোটরবাইক নিয়ে বের হন, পেছনে পুরুষ যাত্রী থাকে, তখন মানুষ সমাজের চারিপাশের মানুষ হাসাহাসি করে তাকে নিয়ে। কিন্তু শাহনাজ বিশ্বাস করে যে মানুষের হাসি দেখলে তো আর সংসার চলবে না। প্রতিদিন এমন অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। প্রথমদিকে মন খারাপ করলেও এখন আর সেটা ভাবেন না। তাকে তো রোজগার করতে হবে, মেয়েদেরকে পড়াশুনা করিয়ে মানুষ করতে হবে! মেয়েদের ভবিষ্যতের জন্য সবকিছু করতে রাজি তিনি অবশ্যই সেটা সৎ পথে। মেয়েরা চাইলে পাঁচ মিনিটে হাজার টাকা কামাই করতে পারে, কিন্তু ঐ লাইনে যেতে একেবারেই নারাজ তিনি। সম্মানের সাথে রোজগার করে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান তিনি।
বিডি২৪লাইভ/আইএন/এমআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: