ধর্ষণের সময় যা বলেছিল সেই দুই শিশু

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৫৭ পিএম

‍‘লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই দুই শিশুকে ঘরে নিয়ে আসি। এরপর ধর্ষণের চেষ্টা করলে শিশু দু’টি চিৎকার করে ওঠায় তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করি।’ এভাবেই নিজেদের কুকীর্তির কথা স্বীকার করে ডেমরায় শ্বাসরোধে দুই শিশুকে হত্যা করা দুই আসামি।

দুই শিশু হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার সিরামিক মিস্ত্রী গোলাম মোস্তফা (৩১) ও তার ফুপাতো ভাই আজিজুল বাওয়ানীর থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মোস্তফা ও তার খালাতো ভাই আজিজুলকে ৮ জানুয়ারি রাতে গ্রেফতার করে ডেমরা থানা পুলিশ। ৯ জানুয়ারি আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় তারা। ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিমের আদালতে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি।

জবানবন্দিতে গোলাম মোস্তফা বলেন, “আমি ফারিয়াকে গলা টিপে মেরে ফেলি। গলা টিপে ধরার পর ফারিয়া বলেছিল, ‘আঙ্কেল আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, আমাকে ছেড়ে দেন।’ আমার খালাতো ভাই আজিজুল নুসরাতকে গামছা পেঁচাইয়া ধরে চাপা দেওয়ায় সেও মারা যায়।”

জবানবন্দিতে মোস্তফা বলেন, ‘মেয়ে দু’টি মারা যাওয়ার পর আমরা ভয় পাইয়া বিভিন্ন চিন্তা ও পরিকল্পনা করি। কিছু সময় পর আজিজুল আমার বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আমি কোনও উপায় না পাইয়া দু’জনকে আমার বাসার স্টিলের খাটের নিচে লুকাইয়া রেখে কী করা যায় চিন্তা করি। আশেপাশে কোনও লোকজন না দেখে আমি আমার বাসার দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে চলে যাই। পরে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে।’

মোস্তফা কোনপাড়ার শাহজালাল সড়কের নাসিমা ভিলার নিচ তলার একটি কক্ষে স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে ভাড়া ছিলেন। তার স্ত্রী পোশাক শ্রমিক। নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। একমাত্র ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। সেখানেই থাকে সে।

আজিজুল তার জবানবন্দিতে বলেছে, ‘স্ত্রী বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমার খালাতো ভাই মোস্তফা আমাকে ফোন করে তার বাসায় যেতে বলে। সেখানে গিয়ে আড্ডার একপর্যায়ে দু’জনে দু’টি ইয়াবা সেবন করি। দুপুর আনুমানিক সোয়া ২টার দিকে মোস্তফা বাইরে সিগারেট আনতে যায়। কিছুসময় পর লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার কথা বলে সে দু’টি বাচ্চা মেয়ে নিয়ে বাসায় এসে দরজা আটকাইয়া দেয়। এসময় সাউন্ডবক্স ছেড়ে দেয়। আমরা বাচ্চা দুইটার সঙ্গে বিভিন্ন কথা বলি।’

তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে মোস্তফা তার স্ত্রীর লিপস্টিক দিয়ে বাচ্চা মেয়ে দু’টিকে সাজায়। এরপর নুসরাতকে আমি জড়াইয়া ধরার চেষ্টা করলে সে চিৎকার করে। তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরি। এসময় দোলাও চেচামেচি করলে মোস্তফা তার মুখ ও গলা টিপে ধরে। এক পর্যায়ে দু’টি বাচ্চাই মারা যায়। কিছুক্ষণ পর মোস্তফার বাসায় লাশ রেখে বের হয়ে যাই। পরবর্তীতে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে।’

মোস্তফা কখনও পোশাক কারখানায়, আবার কখনও রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। আর আজিজুলও পোশাক শ্রমিক।

ওয়ারি বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আজিজুলও মোস্তফা দু’জন মিলে দুই শিশুকে ধর্ষণের ফন্দি আঁটে। আমরা তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করেছি। তারা আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। অভিযোগপত্র দাখিলের পর তাদের বিচার শুরু হবে।’

প্রসঙ্গত, ডেমরার কোনাপাড়ায় শাহজালাল রোডে পাশাপাশি দুটি বাসায় থাকতো দোলা আর নুসরাত। স্থানীয় একটি নার্সারিতে পড়তো তারা। ৭ জানুয়ারি দুপুরে বাড়ির সামন থেকে নিখোঁজ হয় তারা। খোঁজ না পেয়ে পরিবারের এলাকায় মাইকিংও করে। পরে রাতে মোস্তফার বাসার খাটের নিচ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: