যমুনার বুকে বালু চর দ্বীপ

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:১২ পিএম

প্রতি বছরই যমুনা নদীর বুকে জেগে উঠে চর একেকটি দ্বীপ। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথায় ধূ-ধূ বালু চর। রয়েছেও চারদিকে সবুজের সমারোহ। মূল নদীতে চর জেগে কয়েকটি চ্যানেলে ভাগ হয়েছে। অন্যদিকে চরের মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

বর্ষায় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বিশাল চর পাড়ি দিতে হয় তাদের। আবার খরার সময় সূর্যের প্রচণ্ড তাপ নিয়েই ধু-ধু বালুচর পাড়ি দিতে হয়। যমুনা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চরের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। নদী শাসন না হওয়ায় পানি শুকিয়ে যমুনা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এমন চিত্র দেখা গেছে টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর যমুনা নদীতে।

উত্তরে জামালপুর ও সিরাজগঞ্জের কাজিপুর হতে ভূঞাপুর বঙ্গবন্ধু সেতুপুর্ব পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যমুনা নদী শুকিয়ে কয়েকটি চ্যানেলে ভাগ হয়ে খালে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নাব্যতা না থাকায়ে যমুনা নদীতে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মাঝ নদীতেই আটকে যাচ্ছে নৌকা। নদীতে চর জেগে উঠায় নৌকাগুলো বিভিন্ন পয়েন্টে রেখে দিয়েছেন মালিকরা। দুই একটি নৌকা পালা-বদল করে চলাচল করছে।

নির্ধারিত কোনো ঘাট না থাকায় নৌকা চালকরা সুবিধামত মানুষ নামিয়ে দিচ্ছেন। ফলে কষ্ট করে নৌকায় উঠা-নামা করতে হচ্ছে চরের মানুষের। উপজেলার গাবসারা ও অজুর্না এই দুইটি ইউনিয়নে চর জেগে উঠেছে। নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় এর মালিকরা ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। কেউ ইটভাটায়, কেউ খেতে-খামারে কাজ করছেন।

বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। বাস্তুহারা হন শত শত পরিবার। আবার শুষ্ক মৌসুমে সেই এলাকা বিশাল চরে পরিণত হয়। যমুনা নদী ভেঙে ক্রমশঃ পূর্ব দিকে ধাপিত হচ্ছে। ফলে ভেঙে যাচ্ছে পুরাতন জনপদ।

অন্যদিকে ভরা মৌসুমে চরের মানুষের যাতায়াতের তেমন ভোগান্তি পোহাতে না হলেও শুষ্ক মৌসুমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় চরের মানুষদের। শিক্ষার্থীদেরকে পায়ে হেটে বিশাল চর পাড়ি দিয়ে নৌকা ঘাটে এসে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে।

চরাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, চরে বাস করতে করতে কষ্ট কী জিনিস ভুলে গেছেন তারা। চরে বাড়ি শুনলে মেয়ে-ছেলে বিয়ে করতে চায় না। যাতায়াতের সমস্যার কারণে রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। এখন খরা মৌসুম তাই মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়।

তাদের অভিযোগ, চরে যোগাযোগ ব্যবস্থা, দুর্যোগকালীন নিরাপত্তা অনেক সমস্যা এখনও রয়েছে। ফলে চরের চারদিকে বেড়িবাঁধ দিয়ে যমুনার ভাঙন ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে চরের মানুষকে রক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

উপজেলার চরাঞ্চলের গাবসারা মাদরাসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ‘বিডি২৪লাইভ ডট কম’ প্রতিনিধি কে বলেন, বন্যার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে সহজ হয়। নৌকায় চড়ে মাদরাসার পিছনে গিয়ে নামতে পারি। আর এখন ১০ টাকা দিয়ে নৌকায় নদী পাড় হয়ে পরবর্তীতে দুই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে মাদরাসায় যেতে হচ্ছে।

চরচন্দনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল ইসলাম ‘বিডি২৪লাইভ ডট কম’ প্রতিনিধি কে বলেন কষ্ট হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে। এছাড়া যমুনা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। মাঝ নদীতেই নৌকা আটকে পড়ে। আবার বর্ষার সময় খুব সহজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে গিয়ে নামতে পারি। শুকনা মৌসুমে কষ্টটা বেশি সবচেয়ে।’

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফিজুর রহমান ‘বিডি২৪লাইভ ডট কম’ প্রতিনিধি কে বলেন, যমুনা নদীর ভূঞাপুর অংশের নদী শাসনের কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। তবে উপজেলার কুঠিবয়ড়াসহ কয়েকটি স্থানে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হয়েছে। তবে এর আগে কয়েকটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হলেও সেগুলো পায়নি।

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: